পাখি মা
আম্মুই কথাটা বললেন। আব্বুও বললেন। বড় আপু ও ভাইয়া গতকাল বললেন কথাটা। আমাকে সঙ্গ দিতেই নাকি তাঁদের আসা। যখন ওদের দিকে তাকিয়ে থাকি, তখন ওরাও পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আমাকে দেখে। মাঝেমধ্যে চিঁই চিঁই করে ডাকে। এ ডাক আমার খুব ভালো লাগে। বলছিলাম, বাসায় আসা নতুন পাখিটার কথা। দুটো বাচ্চা। সঙ্গে মা-পাখি। কয়েক দিন আগে আমাদের বাসায় এসেছে। ব্যালকনির ফাঁকে সুন্দর করে বাসা বানিয়ে নিয়েছে। বাচ্চা দুটি খুবই ছোট। এখনো উড়তে শেখেনি।
একদিন বিকেলবেলা। মা বারান্দায় বসে আছেন। দুজনে গল্প করছিলাম। বাসার সামনেই একটা গাছ। বেশ বড়। গাছটার দিকে তাকাতেই দেখি, একটা পাখি। ভীষণ ডাকাডাকি করছে। একবার উড়ে গাছের মগডালে গিয়ে বসছে, আবার উড়ে নিচের দিকে আসছে। ডাকাডাকির কারণ বুঝতে পারছিলাম না আমরা। পাখিটা ডাকছে না কান্না করছে, তা-ও বুঝতে পারছিলাম না। তাকিয়ে থাকি গাছের দিকে। মা-ও তাকিয়ে আছেন। চেয়ার ছেড়ে কখন যে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, তা টের পাইনি। আমরা পাখিটা দেখছি। চিৎকারের কারণ খুঁজছি।
গাছটায় ডাল আর ডাল। পাতায় ভর্তি। পাতাগুলো খুব মোটা। বেশ বড়। ডালের সঙ্গে ডালের রয়েছে মিতালি ভাব। যখন বাতাস আসে, তখন একসঙ্গে নড়ে। মনে হয় গান গায়। ভালো করে না তাকালে পাতার ফাঁকফোকরের কিচ্ছু দেখা যায় না। পাখির বাসাও না।
কিছুদিন আগে মা-পাখি একটি বাসা বানিয়েছিল। ডিম দিয়েছিল। তা দিয়ে ফুটফুটে দুটি বাচ্চা বের করেছে। এবার তাদের বড় করার পালা। রক্ষা করার পালা। কিন্তু মায়ের খুব ভয়। দূরে গেলে যদি কেউ বাচ্চা দুটো নিয়ে যায়!
গাছটার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছিল একটি পাখি। চিল পাখি। উড়ছিল আর ঘাই খাচ্ছিল বারবার। আম্মু দেখলেন। হেই হেই বলে চলে যাওয়ার তাড়া দিলেন। দু-তিনবার হেই হেই বললেন। কিন্তু পাখিটা তা শুনল না! আম্মু ঘরে ঢুকলেন। একটি লাঠি আনলেন। আমরা দুজন ছাদে গেলাম। শিকারি পাখিটা আমাদের দেখে উড়ে গেল।
বাসায় ঢুকেই আমরা অবাক! মা-পাখি আর দুটি বাচ্চা! ব্যালকনির ফাঁকে বাসা বানাতে ব্যস্ত। আম্মু কিছু খাবার দিলেন। বাটিতে করে পাখিগুলোকে খেতে দিলাম। মা খুব খুশি হলো। বাচ্চা দুটোও।