ঘোড়ার পিঠে অদ্ভুত পাঠাগার
জ্ঞান অর্জনের জন্য বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। এর জন্য প্রয়োজন হচ্ছে বই এবং পড়ার সুন্দর পরিবেশ। লাইব্রেরি হচ্ছে সেই জায়গা, যেখানে পড়ার জন্য রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ের হাজার হাজার বইয়ের সংগ্রহ, পিনপতন নীরবতা, যা পাঠককে করে দেয় আপন মনে পড়ার সুযোগ। তোমরা অনেকেই হয়তো লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়ো, আর যারা এখনো যাওনি তারা তো অবশ্যই যাবে। এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কথাও তোমরা জেনে থাকবে, যা মূলত বইভর্তি গাড়ি নিয়ে পাঠকের দুয়ারে পৌঁছে যায়, যেমন বাংলাদেশের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। তবে আজ তোমাদের জানাব এক অদ্ভুত ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কথা, যা পড়ে তোমাদের মনে হবে বই পড়ার জন্য মানুষ কি না করতে পারে!
বিবিসির খবর থেকে জানা যায়, সেরাং, ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের বানটেন প্রদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। গ্রামজুড়ে অবারিত ধানক্ষেত, পাখির কলতান, শান্ত বাতাস, এমনকি আছে আগ্নেয়গিরিও। কিন্তু সেখানে নেই কোনো গ্রন্থাগার। বই পড়তে হলে শিশুদের অনেক দূরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তবে সমস্যাটিকে সমস্যা হয়ে থাকতে দেননি রিদওয়ান সুরুরি। সুরুরি নিজের উদ্যোগে চালু করেছেন একটি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। তবে এই লাইব্রেরি তোমাদের চেনা পরিচিত কোনো লাইব্রেরির মতো নয়। এটা চলে ঘোড়ার পিঠে চড়ে। ঘোড়াটির নাম লুনা। তার পিঠে শিকল দিয়ে বাঁধা বড় বড় দুটি কাঠের বাক্স, বাক্সভর্তি বই। এ বই নিয়েই সুরুরির এই বিশেষ রকমের পাঠাগার বা লাইব্রেরি। সপ্তাহের বিশেষ দিনে পিঠে বই নিয়ে টগবগ করে গ্রামের দিকে চলতে থাকে লুনা, আরেকটি ঘোড়ায় সওয়ারি হয়ে এই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি এগিয়ে নিয়ে চলেন রিদওয়ান সুরুরি।
ঘোড়ার সাড়াশব্দ পেলেই আনন্দে ছুটে আসে শিশুরা। গ্রামে পৌঁছে একটি মসজিদের পাশে লুনাকে বেঁধে রাখেন সুরুরি। শিশুরাও এসে ঘিরে ধরে ঘোড়াকে। এ যেন এক মধুর দৃশ্য। সুরুরি তাদের লাইনে দাঁড়াতে বলেন এবং শিশুদের পছন্দমতো বই তাদের হাতে তুলে দেন। শিশুরা বইয়ের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে আনন্দে বাড়ি ফেরে। তবে নতুন বই নিতে হলে আগের সপ্তাহে নেওয়া বইটি অবশ্যই ফেরত দিতে হবে এবং বইগুলো পড়তেও হবে সযত্নে। বাচ্চারা আনন্দের সঙ্গেই এসব শর্ত মেনে নেয়। বইয়ের হিসাবের খাতায় কড়া নজর রাখেন সুরুরি। শুধু শিশুরাই নয়, বড়রাও কিন্তু চলে আসে বই নিতে!
প্রত্যন্ত এই গ্রামের শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সুরুরির এই ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের ভূমিকা অনেক। পাঠাগার সম্পর্কে সুরুরির কাছ থেকে জানা যায়, তেমন কোনো পরিকল্পনা ছাড়া হঠাৎ করেই ভ্রাম্যমাণ এই পাঠাগার চালু করেন তিনি। ২০১৫ সালে এক বন্ধুর কাছ থেকে ১০০টি বই নিয়ে শুরু করেছিলেন লাইব্রেরিটি। পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার সহায়তায় বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সুরুরির 'ঘোড়ার পিঠের পাঠাগার' দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। সুরুরি নিজের বাড়ির বাইরে একটি স্থায়ী পাঠাগার গড়ে তুলতে চান। সেখানে অনেক বই থাকবে। একটি কম্পিউটারও থাকবে।