মা-বাবাকে ভরণপোষণ না দেওয়ার শাস্তি কী?
বাংলাদেশে উপার্জনে অক্ষম কিংবা বৃদ্ধ মা-বাবার দেখাশোনা করে থাকেন তাঁদের সন্তানরা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এটা এক ধরনের সামাজিক রীতি। তবে প্রাপ্তবয়স্ক ও উপার্জনে সক্ষম এমন বহু সন্তান আছে, যারা তাদের মা-বাবার দেখভাল করে না। সে ক্ষেত্রে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হন অনেক মা-বাবা। এমন ঘটনায় যথাযথ কারণ দেখিয়ে আইনি প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে।
মা-বাবার ভরণপোষণ আইন কী?
মা-বাবার ভরণপোষণের বিধানটি একটি জনকল্যাণকর আইন। বাংলায় প্রণীত এ আইনের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘যেহেতু সন্তান কর্তৃক পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়, সেহেতু আইনটি প্রণয়ন করা হলো। অর্থাৎ কোনো সন্তান যদি কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া পিতা-মাতার ভরণপোষণ না করে, তাহলে তাঁরা ভরণপোষণের জন্য এ আইনের অধীনে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে তাঁদের অধিকার আদায় করতে পারবেন।’
যাদের ওপর ভরণপোষণের দায়িত্ব
আইনে ভরণপোষণ প্রদানের দায়িত্ব বলতে শুধু পুত্রকেই বোঝানো হয়নি, বরং কন্যাকেও বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মা-বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব শুধু ছেলের একার নয়, বরং মেয়েকেও নিতে হবে। এর মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা আনা হয়েছে।
আর ভরণপোষণ শুধু কোনো বিশেষ সন্তান নেবে তা নয়, বরং সবাইকে নিতে হবে। তবে একাধিক সন্তান থাকলে তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে তাদের মা-বাবার ভরণপোষণ নিশ্চিত করবে। কোনো সন্তান মা-বাবাকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো বৃদ্ধাশ্রম বা অন্য কোথাও একত্রে বা আলাদাভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবে না। প্রত্যেক সন্তানকেই তাদের মা-বাবার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে এবং চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। মা-বাবা একত্রে বা আলাদা থাকলে প্রত্যেক সন্তানকে সাধ্যমতো তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে।
ভরণপোষণের পরিমাণ কী হবে
মা-বাবা যদি সন্তানের সঙ্গে বসবাস না করেন, তবে তাদের প্রত্যেক সন্তান নিজ নিজ উপার্জন থেকে যুক্তিসংগত পরিমাণ অর্থ দেবে।
মা-বাবার ভরণপোষণ না দিলে শাস্তি
মা-বাবার ভরণপোষণ কেউ যদি না দেয় বা কেউ যদি এই বিধানাবলি লঙ্ঘন করে, তবে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে। অনাদায়ে সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদণ্ড দিতে পারে আদালত।
এ ছাড়া কোনো সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী কিংবা ছেলেমেয়ে বা অন্য কোনো নিকটাত্মীয় যদি মা-বাবা বা দাদা-দাদি বা নানা-নানির ভরণপোষণ দিতে বাধা দেয় বা অসহযোগিতা করে, তবে তার সাজাও উল্লিখিত দণ্ডের মতোই হবে।
এ ছাড়া এ অপরাধ আমলযোগ্য। এই আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলায় জামিনও পাওয়া যেতে পারে। মামলায় আপস-মীমাংসারও সুযোগ রয়েছে।
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।