মা দিবস : লকডাউনে মাকে সারপ্রাইজ দেবেন যেভাবে

ভাবুন তো, আপনার মা আপনার জন্য কী কী করেন? আমি নিশ্চিত, ভাবতে ভাবতেই আপনার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি চলে আসবে। আপনার জন্মের পূর্ব থেকে আপনার নেওয়া শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত মায়ের কাছে আপনি একজন ছোট্ট শিশু, যাকে তিনি আগলে রাখতে চান। সন্তানের সুখ ও নিরাপত্তার জন্য একজনের পক্ষে যা কিছু সম্ভব, তার সবকিছু একজন মা করে থাকেন। সন্তান যখন বাইরে যান, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মা তখন প্রতিনিয়ত খবর নিয়ে নিশ্চিত হতে চান তাঁর সন্তান ঠিক আছে এবং তাঁর আদরের সন্তানের কোনো প্রকার ক্ষতি হয়নি।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে লকডাউনের দরুন আমরা অনেকেই বাড়িতে আটকা পড়েছি। এই সময়ে যাঁরা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছেন, তাঁরা যথেষ্ট ভাগ্যবান। মায়ের হাতের মজার মজার খাবার ও ভালোবাসা-যত্ন পাচ্ছেন তাঁরা। আবার অনেকেই এই সময়ে মায়ের সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বলছেন, রান্নার বিভিন্ন রেসিপির জন্য মাকে প্রশ্ন করছেন। তবে আপনি যতবারই একই প্রশ্ন মায়ের কাছে করুন না কেন, তিনি প্রতিবারই প্রতিটি ক্ষুদ্র বিষয় অত্যন্ত শান্তভাবে, আপনার প্রশ্নের উত্তর দেবেন। এটিই একজন মায়ের হৃদয়। তিনি সব সময়ই সন্তানের সুখকে প্রাধান্য দেন। এ রকম একজন মহান মানুষের প্রতিটি দিনই কি উৎসবমুখর হওয়া উচিত নয়? কিন্তু জীবনের অনেকগুলো বছর পেরিয়ে আসার পর সন্তানদের অনেকে স্বার্থপর হয়ে ওঠে, যা মায়ের জন্য ভীষণ কষ্টের।
প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস উদযাপিত হয়। তবে এ বছর মায়ের জন্য কার্ড, কেক কিংবা ফুল কিনতে যাওয়া আপনার জন্য কিছুটা কঠিন হতে পারে চলমান লকডাউনের কারণে। তাই এবার মাকে ভিন্নধারার কিছু উপহার দেওয়া বা চমকে দেওয়ার চিন্তা করতে হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু উপায়—
‘আমি তোমাকে পরে কল দেব, মা’
কোয়ারেন্টিনের এই সময়ে যাঁরা পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারছেন না, তাঁদের বেশ কষ্ট হওয়ার কথা। এতে মেজাজও বিগড়ে থাকতে পারে। কিন্তু মমত্বের হাত সব সময়ই বাড়িয়ে দেওয়া উচিত, বিশেষ করে মায়ের প্রতি। যখনই মা আপনাকে কল দেন, আপনি ভীষণ ব্যস্ত থাকেন ও তাঁকে জানান, আপনি তাঁকে পরে কল করবেন। কিন্তু আপনি পরে তাঁকে কল দেন না। তিনি আপনার জীবন, চাকরিসহ সবকিছু নিয়ে ভাবেন, কিন্তু তাঁর কষ্টের কথা কে জানতে চায়? কারো প্রতি মমত্ব প্রকাশের সুন্দরতম উপায় হচ্ছে, তাঁর কষ্টের কথাগুলো জানতে চাওয়া। তাই মায়ের কাছে জানতে চান যে তাঁর দিনটি কেমন ছিল। এতে তিনি অবশ্যই খুশি হবেন।
আবৃত্তি করুন মায়ের প্রিয় কবিতা, চিঠি লিখুন
মায়ের প্রশংসা করে তাঁকে হৃদয়স্পর্শী চিঠি লিখুন। অথবা তিনি যদি কবিতা ভালোবাসেন, তাঁর জন্য কবিতা লিখুন। লেখা সম্ভব না হলে তাঁর প্রিয় কোনো কবিতা আবৃত্তি করুন। যাঁরা ঘরে আছেন কিংবা বাইরে আছেন, সবাই এই কাজটি করতে পারেন।
কেক তৈরি করুন
যাঁরা ঘরে আছেন ও পরিবারের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাচ্ছেন, এটি তাঁদের জন্য। প্রতিবছর অনেকেই বাইরে গিয়ে মায়ের জন্য কেক কিনে আনেন। এ বছর কিছুটা বাড়তি কষ্ট করুন এবং মায়ের জন্য একটি কেক বানিয়ে ফেলুন। সন্ধ্যায় মায়ের চায়ের সঙ্গে নাশতার দারুণ উপকরণ হতে পারে কেক। কেক বানানোর অনেক রেসিপি আপনি ইন্টারনেটে পাবেন।
মাকে সাহায্য করুন
বাড়িতে সারা দিন মা কত কাজই তো করেন। বছরের এই বিশেষ দিনে তাঁকে বিশ্রাম দিন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে বাড়ির কাজগুলো করে ফেলুন। মাকে আরাম করতে দিন, এর চেয়ে ভালো উপহার আর হতে পারে না।
হোম স্পা
হয়তো আপনি যেভাবে বাইরে গিয়ে স্পা করান, আপনার মাকে ওইভাবে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই বাড়িতে বসেই তাঁকে ‘ফেস স্ক্রাব’, ‘বডি বাটার’ বা ‘হেয়ার মাস্ক’ করে দিতে পারেন। এ কাজটি কন্যাই ভালো করতে পারেন। তবে গবেষণা বলছে, যেকোনো সন্তানই তা করতে পারেন।
সহনশীল হোন
ঘরে থাকার এই সময়টিতে অনেকেই পরিবারের প্রতি মেজাজ হারান এবং বাজে আচরণ করেন। এই সময়টিকে আশীর্বাদ হিসেবে নিন এবং পরিবারের প্রতি নেতিবাচক আচরণে পরিবর্তন আনুন। বাবা-মায়ের প্রতি যত্নশীল হোন, তাঁদের কথা শুনুন, তাঁদের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করুন। তাঁরা কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে তাঁদের শান্তভাবে, প্রয়োজনে বারবার বুঝিয়ে বলুন।
এ বছর আপনার উপহার হয়তো পারফেক্ট হবে না, কিন্তু মা ও পরিবারের অন্য সব সদস্যের সঙ্গে ভালো আচরণ নিঃসন্দেহে আপনার জীবনকে সুন্দর করে তুলবে। আপনি ভালোভাবেই জানেন, এর চেয়ে অনেক বেশি কিছু আপনার মায়ের প্রাপ্য। কিন্তু ভালো কিছু করার শুরুটাই সম্ভাবনার অনেকগুলো দ্বার খুলে দেয়। তাই মায়ের জন্য ভালো কিছু করার প্রচেষ্টা আজ থেকেই শুরু হোক না!
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস