বিশ্বব্যাপী বাড়ছে হালাল কসমেটিকসের চাহিদা

Looks like you've blocked notifications!

বিশ্বজুড়ে সচেতন মুসলমান ভোক্তাদের মধ্যে হালাল বিউটি প্রোডাক্টের আগ্রহ দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এই ট্রেন্ড আন্তর্জাতিক প্রসাধন ব্র্যান্ডগুলোকে দিচ্ছে নতুন দিগন্তের হাতছানি। তারা পাচ্ছে সম্ভাবনাময় এবং লোভনীয় মার্কেট।

আপনি কি সিউল গেছেন? ঢু মেরেছেন কখনো মিয়ংডং এইট-জিল এলাকায়? গিয়ে থাকলে আপনি আলবত জানেন এটা আসলে প্রসাধনসামগ্রীর স্বর্গরাজ্য। স্থানীয়রা এ জন্যই তো এই এলাকাকে কসমি রোড বলে। কারণ রাস্তার দুই পাশে আপনি দেখবেন অসংখ্য কসমেটিক স্টোর। নামি দামি সব ব্র্যান্ড। আকর্ষক সব নামও- ফেস শপ, স্কিন ফুড, নেচার রিপাবলিক ইত্যাদি। এর মধ্যে ব্যতিক্রম একটি শপ। ট্যালেন্ট কসমেটিক। এরা অন্যদের মতো ম্যাট লিপস্টিক থেকে বিবি ক্রিম সবই বিক্রি করে। তবে এ সবই হালাল। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে তারা কোরিয়ার প্রথম কোম্পানি হিসেবে মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে হালাল সার্টিফিকেশন নিয়েছে। কোরিয়ার মুসলিম জনসংখ্যা নগণ্য হলেও তাদের এই পদক্ষেপ আসলে বাজার বিস্তারের জন্য। তাদের পার্শ্ববর্তী দুটি দেশ মালয়েশিয়ায় ৬০ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৮০ শতাংশ মুসলমান। এর বাইরে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলেও এই বাজার যথেষ্ট বড়। দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যও কম আকর্ষণীয় নয়। একটি রিপোর্ট বলছে, ভুবনজুড়ে মুসলমানরা ২০১৩ সালে কেবল প্রসাধনেই ব্যয় করেছে ৪৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। এই অঙ্ক ২০১৯ সালে বেড়ে হবে ৭৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে একটা বড় অংশ ব্যয় হবে হালাল প্রসাধনের জন্য। এই ক্রমবর্ধমান বাজারের এ বছরের টার্নওভার হলো ২৩৪০ কোটি ডলার। আগামী পাঁচ বছরে তা বেড়ে হবে ৪৫০০ কোটি।

মুসলমানদের জন্য হালাল খাবার বাধ্যতামূলক হলেও হালাল প্রসাধনের ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে বিশ্বব্যাপী হালাল পণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়লেও প্রসাধন কোম্পানিগুলো অভিজাত মুসলমানদের প্রসাধন চাহিদা নিয়ে নিকট অতীতেও সেভাবে মাথা ঘামায়নি, যতটা ঘামাচ্ছে এখন। যাকে বলে ব্র্যান্ডিংয়ের নতুন  মেরুকরণ। রিলিজিয়ান ব্র্যান্ডিং।

মালয়েশিয়া সরকারের প্রতিষ্ঠান জাকিম এ পর্যন্ত ৭৩টি প্রতিষ্ঠানকে হালাল সার্টিফিকেশন দিয়েছে। তবে এটা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ যেমন আরব আমিরাতের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়। তারা সুগন্ধি আর প্রসাধনের জন্য হালাল কোড ২০১৩ সালেই প্রবর্তন করেছে।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই এখন হালাল সার্টিফায়েড কোম্পানি কাজ শুরু করেছে। এই যেমন ভারতের ইবা হালাল কেয়ার হলো প্রথম এই ধরনের প্রতিষ্ঠান। তথ্যানুযায়ী ভারতের মুসলমানদের সংখ্যা ২০৫০ সালে ইন্দোনেশিয়াকে ছাড়িয়ে যাবে। ফলে এই বাজারকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। ইবা সেই ফল পাচ্ছে। আহমেদাবাদে একটা স্টোর থেকে এখন সারা দেশে ছড়িয়েছে। এমনকি অ্যামাজন ও ফ্লিপকার্টের মতো গ্লোবাল অনলাইন স্টোরেও তাদের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।

আমেরিকাতেও ২০১১ সালে শুরু হয়েছে হালাল কসমেটিকস। সে দেশে হালাল প্রসাধনের চাহিদা প্রতিবছর অন্তত ৮০ ভাগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপেও একই ট্রেন্ড লক্ষ করা যাচ্ছে। সেখানে ওয়ারদাহ আর ওয়ানপিওর বিউটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে থাকে। তাদের পণ্য প্যারিসের গ্যালারি লাফায়াতেও পাওয়া যায়।

জাপানের প্রসাধন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান শিসেইদো হালাল সার্টিফিকেশন নিয়েছে ২০১২ সালে। এমনকি এসটি লডার আর কোলগেট পামঅলিভের মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানও তাদের বেশকিছু প্রডাক্টের জন্য হালাল সার্টিফিকেশন নিয়েছে।

হালাল প্রসাধনপ্রীতি কেবল মুসলিমদের মধ্যেই নয়, অমুসলিমদের মধ্যেও ইদানীং বাড়ছে। তবে বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলো হালাল প্রসাধনের জন্য আলাদা কালেকশন করলেও সেটা অনেক বেশি জনপ্রিয় হবে।  কারণ ২০৫০ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের সংখ্যা ফি বছর বাড়বে ৫০ শতাংশ হারে।

এবার একটু বাংলাদেশের দিকে তাকানো যাক। আজ নতুন যে ট্রেন্ড শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ তা অনেক আগেই করেছে। অনেকের মনে থাকার কথা নব্বইয়ের দ্বিতীয় অর্ধে অ্যারোমেটিক সাবান প্রথম হালাল তকমা দিয়ে বাজারে ছাড়ে। আর তা রাতারাতি জনপ্রিয়ও হয়। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও তাদের জনপ্রিয়তা ছড়ায়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন প্রদেশের বাংলাদেশের হালাল সাবানের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ করা যায়।

লেখক : সাংবাদিক ও লাইফস্টাইল প্রফেশনাল