সংবাদ পাঠ যখন পেশা

Looks like you've blocked notifications!
সংবাদ পাঠিকা শারমিন লিনা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

খুব আগের কথা নয়। আজ থেকে ১৫ বছর আগেও সংবাদ পাঠকে গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসেবে দেখা হতো না। আর এখন মার্জিত, সম্মানজনক এবং জনপ্রিয় পেশা হিসেবে সংবাদ উপস্থাপনকেই বেছে নিচ্ছেন অনেকে। এই পেশায় নারী পুরুষ সমানভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে বিশেষ করে নারীদের জন্য এই ক্ষেত্রটি অনেক স্বাচ্ছন্দ্যের ও আকর্ষণীয়। কিন্তু আমরা কি জানি একজন সংবাদ পাঠিকা কী প্রস্তুতি নেন ক্যামেরার সামনে বসার আগে?

চলুন জেনে নেই সংবাদ পাঠিকা শারমিন লিনার প্রস্তুতির কথা। তিনি চ্যানেল টোয়েন্টি ফোর, আরটিভি হয়ে বর্তমানে এনটিভিতে নিয়মিত সংবাদ পাঠ করছেন। এনটিভি অনলাইনকে লিনা জানিয়েছেন একজন নারী হিসেবে কী করে তিনি সংবাদ পাঠের জন্য নিজেকে তৈরি করেন।

খবর পাঠের আগের প্রস্তুতি

খবর পড়ার আগে একজন সংবাদ পাঠিকার রিপোর্টং থাকে ৩ ঘণ্টা আগে। অর্থাৎ খবর শুরু হওয়ার তিন ঘণ্টা আগে তাদের অফিসে আসতে হয়। অফিসে আসার পর একজন সংবাদ পাঠিকা প্রথমে কী করে থাকেন সে সম্পর্কে শারমিন লিনা জানান, ‘অফিসে এসেই প্রথমে পত্রিকা পড়ি। এরপর কম্পিউটারে রিপোর্টারদের নিউজগুলো ভালো করে পড়ে নেই। যাতে খবর সম্বন্ধে ধারণা নিতে পারি। নিউজ এডিটরের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো জেনে নেই। কারণ সাম্প্রতিক বিষয়গুলো না জানলে খবরের ভেতরের বিষয়গুলো বোঝা সম্ভব না। আর আমিই যদি খবরটি না বুঝি তাহলে দর্শকদের কিভাবে বোঝাবো? দর্শকরা তো আমার কথা শুনেই খবরটি বিশ্বাস করেন। তাই তাদের জন্য আগে আমার খবরটি সম্বন্ধে ধারণা থাকতে হবে।’

মেকআপ রুম

খবর পাঠের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সাজপোশাক ও মেকআপ। অবশ্যই একজন সংবাদ পাঠিকাকে মার্জিত পোশাক বেছে নিতে হবে- এমনটাই জানালেন শারমিন লীনা। তিনি বলেন, ‘দর্শকদের কাছে খবরের প্রথম ধাপ হলাম আমরা। তাই আমাদের সাজপোশাকে শালীন থাকা খুবই জরুরি।’ বিশেষ দিনগুলোতে অফিস থেকেই ড্রেসকোড ঠিক করে দেওয়া হয়। যেমন কোনো শোক দিবসে সাদাকালো পোশাক পরতে হয় আমাদের। এ ছাড়া অন্যদিনগুলোতে আপনাকেই নিজের সাজপোশাক বেছে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনার রুচি মানসম্মত না হলে দর্শকদের কাছে বিষয়টি দৃষ্টিকটু হতে পারে। আরেকটি বিষয় আমাদের লক্ষ রাখতে হয়- সেটি হলো স্টেশনের সিগনেচার কালারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পোশাক নির্ধারণ করতে হয়। 

যোগ্যতা

একজন সংবাদ পাঠিকার বাচনভঙ্গি, উচ্চারণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, উপস্থিত বুদ্ধি এবং সাম্প্রতিক বিষয় সম্বন্ধে ধারণা থাকা খুবই জরুরি। আপনাকে মনে রাখতে হবে বিভিন্ন মানসিকতার দর্শক আপনাকে দেখছে। আপনার উচ্চারণ যদি ভালো না হয় অথবা কথায় আঞ্চলিক টান থাকে তাহলে পুরো উপস্থাপনটাই ভেস্তে যাবে। আর খবর যেহেতু সরাসরি সম্প্রচার করা হয় সেহেতু অনেক টেকনিক্যাল সমস্যা থাকতে পারে, অনেক ভুল হতে পারে তখন একজন সংবাদ পাঠিকার উপস্থিত বুদ্ধি বেশ কাজে দেয়। কারণ ওই মুহূর্তটা পুরোপুরি নির্ভর করে সংবাদ পাঠিকার ওপর। খবরের মধ্যেই হঠাৎ করে কোনো ব্রেকিং নিউজ হতে পারে তখন কোনো স্ক্রিপ্ট ছাড়াই খবরটি পড়ে যেতে হবে। তাই সাম্প্রতিক বিষয় সম্বন্ধে ধারণা থাকলে বিষয়টি খুব সহজ হয় তার জন্য।

খবর শেষে

যখন খবর পড়া শেষ হয়ে যায় তখন সংবাদপাঠিকা রেকর্ড করা পুরো খবরটি একবার দেখে নেন। যাতে ভুলগুলো ধরা পড়ে এবং পরে সেগুলো শোধরানো যায়।

ব্যক্তিগত জীবনে এর প্রভাব

প্রতিটি মানুষের কর্মজগৎ আলাদা। তাদের কাজের ধরনও আলাদা। একজন নারী যখন অন্য কোনো পেশায় জড়িত থাকেন তখন ৮ ঘণ্টা তাকে পরিবারের বাইরে কাটাতে হয়। এক্ষেত্রে সংবাদ উপস্থাপন পেশাটি নারীদের জন্য বেশ উপযোগী। কারণ তাকে অনেকটা সময় অফিসে পার করতে হয় না। সে তার ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবারে সময় দিতে পারে। এর পাশাপাশি চাইলে অন্য পেশাতেও যুক্ত থাকতে পারে। কারণ এখানে কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। আর সপ্তাহে প্রতিদিন তাকে অফিসে আসতেও হয় না। তাই এ কাজটি শুধু নারী নয়, পুরুষদের জন্যও আকর্ষণীয় বলে মনে করেন শারমিন লিনা।