কীভাবে জানবেন ঢাকার যানজটের সর্বশেষ অবস্থা?
ট্রাফিক জ্যাম বা যানজট; যা ঢাকাবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলা করতে প্রতিদিন প্রতিটি কাজেই ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব; নষ্ট হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টা। উৎপাদনশীলতার এই চরম বিপর্যয় দীর্ঘদিন ধরে নিম্নমানের জীবনধারাকে আবদ্ধ করে রেখেছে নগরবাসীকে। তুলনামূলকভাবে কম যানজটপূর্ণ রাস্তাগুলো এড়ানো সম্ভব হলে, উদ্দেশ্য গন্তব্যে যেতে অনেকটা সময় বাঁচানো যাবে। তাই প্রয়োজন রাস্তাঘাটে জ্যামের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত থাকা। চলুন, ঢাকার কোন রাস্তায় কেমন ট্রাফিক জ্যাম রয়েছে, তা খুঁজে দেখার কার্যকর উপায়গুলো জেনে নেওয়া যাক।
ঢাকার যানজট পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার ৬টি কার্যকরি উপায়
.গুগল ম্যাপস
ব্যস্ততম শহুরে রাস্তায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি গুগল ম্যাপস (Google Maps)। ওয়েব ও মোবাইল উভয় ভার্সন থাকা এই অ্যাপটিতে রয়েছে তাৎক্ষণিক ট্রাফিক মনিটরিংয়ের সুবিধা। এটি স্মার্টফোনের অবস্থানসহ অন্যান্য তথ্য ব্যবহার করে সময়ের সাথে রাস্তার পরিস্থিতি হালনাগাদ করতে পারে।
প্রাপ্ত ফলাফল বিভিন্ন রঙে অঙ্কিত সংকেতের মাধ্যমে দেখানো হয়। যেমন ফাঁকা রাস্তার জন্য সবুজ, মাঝারি ব্যস্ত রাস্তা হলুদ এবং জ্যাম-এ পরিপূর্ণ রাস্তার জন্য লাল রঙ। শুধু তাই নয়, অ্যাপটির ব্যবহারকারীরা একই সঙ্গে বিকল্প রাস্তারও খোঁজ পেয়ে যান, যা তাদের তড়িৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
এছাড়া বন্ধ বা নির্মাণাধীন রাস্তার ব্যাপারেও যাত্রীদের আগাম সতর্কবাণী দেয় এই ডিজিটাল মানচিত্র। এখানে আরও রয়েছে লোকেশন সংরক্ষণ করে রাখা এবং ব্যবহারের ইতিহাস পর্যালোচনা করে পথ বাতলে দেওয়ার সুবিধা।
নতুনভাবে সংযুক্ত ভয়েস-নির্দেশিত নেভিগেশনের দৌলতে যাত্রী বা চালকের মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকানোর দরকার পড়ে না। এতে তিনি নিরাপত্তার জন্য সামনে ও আশেপাশের রাস্তার উপর মনোযোগ রাখতে পারেন।
ওয়েজ
গুগল ম্যাপসের মতো ওয়েজ (Waze) সফtওয়্যারটিও রিয়েল-টাইম ট্রাফিক আপডেট দিতে পারে। কোনো পথ অতিক্রম করতে একটি গাড়ির কতটা সময় লাগছে, তার উপর নির্ভর করে এই সেবাটি রিপোর্ট তৈরি করে। নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত এলাকা এড়িয়ে সম্ভাব্য একাধিক পথ প্রস্তাব করে। ফাঁকা রাস্তাগুলোর মধ্যে কোনটিতে কত সময় ও ন্যূনতম কতটা ট্রাফিক পড়বে, তারও একটি তুলনামূলক তথ্য দেয়। এই বিশ্লেষণ ক্রমাগত চলতে থাকে, বিধায় রাস্তাগুলোর ট্রাফিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ফলাফলও পরিবর্তিত হয়। উপরন্তু, সফ্টওয়্যারটির সামগ্রিক পরিসরে স্ক্যানিং ক্ষমতা বন্ধ রাস্তার ব্যাপারেও চালককে আগাম সতর্ক করে।
রাইড-শেয়ারিং মোবাইল অ্যাপ
তাৎক্ষণিক ট্রাফিক ট্র্যাকিং এবং ভালো বিকল্প পথের পরামর্শের সুবিধা রাইড-শেয়ারিং অ্যাপগুলোতেও আছে। এটি কাজে লাগিয়ে চালকেরা নিজের এবং যাত্রী উভয়েরই যাতায়াতের সময় বাঁচাতে পারেন। রাইড অর্ডারের পর চালকের যাত্রীর লোকেশনে আসতে এবং রওনা হওয়ার পর গন্তব্যে পৌঁছতে কত সময় লাগবে, তা উল্লেখ করা থাকে।
ভ্রমণের সময় প্রতিবার রাস্তা বদলের সঙ্গে সঙ্গে নতুন রাস্তায় গন্তব্যে পৌঁছানোর নতুন সময়ও নির্দিষ্ট হয়ে যায়। এটি চালক ও যাত্রীকে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেয়। ইতোমধ্যে রাজধানী ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলজুড়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া উবার ও পাঠাও উভয় অ্যাপে এই ফিচারগুলো বিদ্যমান। এমনকি বিভিন্ন পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এ থেকে উপকৃত হচ্ছে। এই ব্যবস্থার রূপরেখায় শুধু যে সমস্যা সমাধান হচ্ছে তা নয়, যুগপৎভাবে সমূহ সম্ভাবনার সৃষ্টি হচ্ছে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে।
এফএম রেডিও চ্যানেল
অডিও সেবায় প্রযুক্তি অনেকটা পথ এগিয়ে গেলেও, এফএম রেডিও চ্যানেলগুলো এখনও ট্রাফিকের তথ্য পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। রেডিও টুডে (৮৯.৬ এফএম)-এর নিয়মিত ট্রাফিক আপডেটে সরাসরি যানবাহনের ভিড় এবং রোড-ব্লক পরিস্থিতিগুলোর বিশদ জানা যায়। পিক আওয়ারে সম্প্রচার করা হয়, বলে তা ভ্রমণরত যাত্রীদের জন্য যথেষ্ট সহায়ক হয়। এছাড়া বাংলাদেশ বেতার তার ঐতিহ্য বজায় রেখে এখনও যানজটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর বিস্তারিত কভারেজসহ আপডেট দিয়ে থাকে। স্মার্টফোন চেক না করেই চলন্ত অবস্থায় টিউন করার সুবিধা থাকায় ড্রাইভারদের জন্য বেশ তাৎপর্যবহুল এই মাধ্যম।
ট্রাফিক অ্যালার্ট (ফেসবুক গ্রুপ)
বিনোদনের পাশাপাশি সেবা প্রদানেও সক্রিয় হওয়ায় সামাজিক মাধ্যম এখন একটি মূলধারার যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর এই ব্যবস্থার আওতায় গঠিত হচ্ছে স্বতন্ত্র পেজ এবং ভার্চুয়াল গ্রুপ, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়। তেমনি একটি ফেসবুক গ্রুপ ট্রাফিক অ্যালার্ট (Traffic Alert), যেখানে আলোচনা হয় ঢাকা শহরের যানজট পরিস্থিতি নিয়ে।
৩ লাখ ৫৭ হাজার ৮০০ জন সদস্যের এই গ্রুপটি শহরের দুর্ঘটনা, বন্ধ রাস্তা ও জ্যাম সম্পর্কে লাইভ আপডেট পোস্ট করে। আর পোস্টগুলো নিয়েই প্রাইভেট গ্রুপটিতে চলে বিশদ আলোচনা। অত্যন্ত সক্রিয় এই গ্রুপটি প্রতিদিন গড়ে ১৫টিরও বেশি পোস্ট করে। আলোচনাগুলোয় অংশ নেওয়া বা পোস্টগুলো শুধু দেখার মধ্য দিয়েও গ্রুপের সদস্যদের রাস্তাঘাটে নিত্য চলাফেরা নিমিষেই সহজ হয়ে ওঠে।
দৈনিক অনলাইন সংবাদপত্র
তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাফিক সম্পর্কে জানার থেকে আরও আগে থেকে তা জানতে পারা অনেক ভালো। এতে যথেষ্ট সময় নিয়ে যাতায়াতের পরিকল্পনা সাজানো যায়। দৈনিক সংবাদপত্রের ডিজিটাল মাধ্যমগুলোর মতো ট্রাফিক জ্যাম ট্র্যাকিং সুবিধা নেই ঠিক, কিন্তু এটি অগ্রিম সতর্কতা লাভের কার্যকরী উপায়।
যেমন ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলো-এর মতো সংবাদপত্রগুলোতে প্রতিদিন নানা ধরনের দুর্ঘটনার খবর ছাপা হয়। এগুলোর অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে জনগণের রাস্তায় চলাচলের প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়। কখনও কখনও সরাসরি দীর্ঘ ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একদম তাৎক্ষণিক ট্র্যাকিং সিস্টেমের মতো দ্রুত গতিতে না হলেও এগুলো নিয়মিত অবিলম্বেই জনসম্মুখে আসে।
প্রত্যেকটিরই নিজস্ব অনলাইন সংস্করণ থাকায় খবরগুলো যেকোনো জায়গা থেকে স্মার্টফোনেই দেখে নেওয়া যায়। এভাবে পাঠকরা আগে থেকে সতর্ক হয়ে সঠিক পথে যাতায়াতের পরিকল্পনা নিয়ে কাজের জন্য বের হতে পারে।
দৈনন্দিন কাজে সময় বাঁচানার তাগিদে ঢাকার অতিরিক্ত ট্র্যাফিক জ্যাম এড়াতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারে এই মাধ্যমগুলো। তন্মধ্যে তাৎক্ষণিক আপডেট জানানোর পাশাপাশি বিকল্প রাস্তার খোঁজ দিতে পারে গুগল ম্যাপস এবং ওয়েজ। আধুনিক রাইড-শেয়ারিং অ্যাপগুলোর সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী এফএম রেডিও চ্যানেলগুলোর ট্রাফিক আপডেট সাবধান করতে পারে ভ্রমণরত যাত্রীদের। রওনা হওয়ার আগে থেকেই সঠিক পথে যাওয়ার পরিকল্পনার রসদ যোগাতে রয়েছে ট্রাফিক অ্যালার্ট ফেসবুক গ্রুপ এবং দৈনিক সংবাদপত্রগুলো। সর্বপরি, এই প্ল্যাটফর্মগুলোর সমন্বিত ব্যবহারে বিড়ম্বনা কমে আসতে পারে নিত্যদিনের যাতায়াতে।