টিলাধস, মাধবকুণ্ডে প্রবেশ সাময়িক বন্ধ
ভারি বর্ষণে রাস্তা ও টিলাধসের কারণে দেশের সবচেয়ে বড় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকায় দর্শনার্থীদের প্রবেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আসন্ন ঈদের ছুটিকে সামনে রেখে জলপ্রপাত এলাকায় পর্যটকরা বেড়াতে এসে যেন বিড়ম্বনার শিকার না হন সে জন্য প্রচার চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
বন বিভাগ জানিয়েছে, অতিবৃষ্টিতে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশের পর পর্যটন রেস্তোরাঁর কাছে প্রায় ৪০ ফুট দীর্ঘ এলাকা দুই ফুট পরিমাণ দেবে গেছে। এ ছাড়া জলপ্রপাতের পাদদেশে নামার সিঁড়ির নিচের প্রায় ৪০ ফুট মাটি সরে গেছে। জলপ্রপাতে যাওয়ার পথে সড়কের পাশের উঁচু টিলায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে পর্যটনকেন্দ্রটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
এ ঘটনার পর উপজেলা পরিষদ, বন বিভাগ ও স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এরপর গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় প্রশাসন দর্শনার্থীদের জলপ্রপাতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। জলপ্রপাত থেকে আট কিলোমিটার দূরত্বে কুলাউড়া-বড়লেখা সড়ক থেকে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশের স্থানীয় কাঁঠালতলী বাজারের গত ১৮ জুন থেকে সতর্কতামূলক ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। ঈদসহ বিভিন্ন ছুটিতে বিপুলসংখ্যক ভ্রমণপিপাসুর পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে জলপ্রপাত এলাকা। প্রতি ঈদকে উপলক্ষ করে ১০-১৫ দিন আনন্দ উপভোগ করতে জলপ্রপাত ও ইকোপার্ক এলাকায় হাজার হাজার পর্যটকের ভিড় জমে। কিন্তু এবার ঈদ উপলক্ষে মাধবকুণ্ড পর্যটকশূন্য থাকবে বলেই অনেকে মনে করছেন। এতে ইকোপার্কের গেট ইজারাদার ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আর্থিক লোকসান গুনতে হবে। এদিকে আকস্মিক দুর্যোগে মাধবকুণ্ডে পর্যটন ব্যবসায় ধস নামার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বড়লেখার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, বন উজাড় ও মাটির উপরিভাগ উন্মুক্ত হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি মাটির ভেতরে প্রবেশ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। জননিরাপত্তা ও পর্যটকদের প্রাণহানি এড়াতে প্রশাসনের সহায়তায় বন বিভাগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। স্থানে স্থানে ব্যানার টানানো হয়েছে। জলপ্রপাতটি পর্যটকদের জন্য মোটেই নিরাপদ নয়। প্রাণহানি এড়াতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো বিপর্যয় ঘটতে পারে। এরই মধ্যে পর্যটকদের সতর্ক করে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রটি ঝুঁকিমুক্ত হলে পর্যটকদের জন্য এটা খুলে দেওয়া হবে। আর এ জন্য শিগগরিরই কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
বড়লেখা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ ভূষণ পাল বলেন, ‘টিলাধসের কারণে মাধবকুণ্ডের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। টিলায় লম্বালম্বি ঝুঁকিপূর্ণ ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পর্যটন রেস্তোরাঁর কাছে টিলাটি প্রতিদিন একটু একটু করে ধসে পড়ছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের টিলাধসের সম্ভাবনা রয়েছে। টিলার গাছগুলোও হেলে গেছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, ধস আরো নামবে। টিলাটি পুরোপুরি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের সহযোগী বন কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বলেন, ‘টিলাধসের কারণে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে পর্যটনকেন্দ্রটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশের প্রধান ফটক ছাড়াও কাঁঠালতলী বাজারের সামনে পর্যটকদের সতর্ক করে বন বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যানার টাঙানো হয়েছে।’ তিনি পরবর্তী সময়ে নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত মাধবকুণ্ড ভ্রমণ না করতে পর্যটকদের প্রতি আহ্বান জানান।