শাহবাগে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা
রাজধানীর শাহবাগে রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে বৃহস্পতিবার অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধনে অংশ নিয়েছিলেন সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেই কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া সংঘর্ষের সময় পুলিশের রাবার বুলেটে এক শিক্ষার্থীর চোখ ফেটে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে দেশজুড়ে যখন তুমুল আলোচনা চলছে, ঠিক সে সময়ে প্রতিবাদকারী ও সংশ্লিষ্ট অজ্ঞাতপরিচয় এক হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি জানিয়েছেন শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাফর আলী বিশ্বাস।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, গতকালের ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা (নম্বর ২৬) দায়ের করা হয়েছে। আর মামলার আসামি অজ্ঞাতপরিচয় এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ জন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
পরিদর্শক আরো জানান, মামলায় পুলিশের কাজে বাধা প্রদান ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা শাহবাগে অবস্থান নেন। এ সময় সাত দফা দাবিতে জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, আন্দোলনের জন্য শাহবাগ থানার পুলিশ তাঁদের আধা ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। পুলিশের বেঁধে দেওয়া সময় পার হয়ে গেলে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করা হয়। এ সময় শাহবাগ এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ মানুষ এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে।
আন্দোলনের সমন্বয়ক আতিকুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। এতে তিনজন আহত হয়েছেন। একই সঙ্গে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।’
আহতদের মধ্যে সিদ্দিকুর রহমান ও ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাইমুল হাসানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান সহপাঠীরা।
সহপাঠী জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, পুলিশের রাবার বুলেট সিদ্দিকুর রহমানের চোখে বিদ্ধ হয়েছে। তাঁর চোখের অবস্থা খুবই খারাপ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, নাইমুল হাসান মোটামুটি ভালো আছেন। তবে সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখে আঘাত ছিল। তাঁরা তাঁকে চক্ষু বিভাগে পাঠিয়েছেন।
হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. ওয়াসেক বিন শহীদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সিদ্দিকুর রহমানের দুই চোখে বড় ধরনের আঘাত আছে। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখতে পারবে কি না আমাদের সন্দেহ আছে। আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি। তাকে দ্রুত আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান গতকাল বলেছিলেন, ‘ছাত্রদেরই নিক্ষেপ করা ঢিল সিদ্দিকুর রহমানের চোখে লাগে। এতে তিনি আহত হন। পুলিশের রাবার বুলেটে তিনি আহত হননি।’
ওসি আরো বলেছিলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অনুমতি ছাড়াই রাস্তাঘাট বন্ধ করে অবস্থান নেয়। আমরা তাদের রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করি। তারা উত্তেজিত হয়ে যানবাহন ও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করি।’