নলছিটিতে স্ত্রীকে ‘থানায় নেওয়ার খবরে’ বৃদ্ধের মৃত্যু
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় স্ত্রীকে আটক করে থানায় নেওয়ার খবর শুনে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। গত বুধবার দুপুরে উপজেলার কাটাখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
ওই পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নলছিটি উপজেলার কাটাখালী গ্রামের সুমন হাওলাদারের নামে তাঁর স্ত্রী সুখী বেগম নলছিটি থানায় একটি অভিযোগ করেন। যৌতুক চেয়ে স্ত্রীকে নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগটি তদন্ত শুরু করে নলছিটি থানার পুলিশ। ঘটনার দিন দুপুরে পুলিশ বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছেলে সুমন হাওলাদারকে খুঁজতে থাকে। পরে তাঁকে না পেয়ে পুলিশ মোটরসাইকেলে আসার জন্য তেল খরচ বাবদ এক হাজার টাকা চায় সুমনের মা সালেহা বেগমের কাছে।
আরো জানা যায়, ওই টাকা দিতে না পারায় পুলিশ সালেহাকে আটকের ভয় দেখায়। একপর্যায়ে বৃদ্ধ স্বামী শানু হাওলাদারের সামনে বসেই পুলিশ তাঁকে অশালীন ভাষায় গালাগাল করে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই স্বামী শানু হাওলাদার হৃদরোগে আক্রান্ত (হার্ট অ্যাটাক) হয়ে মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ সালেহা বেগমকে ছেড়ে দেয়। আজ শুক্রবার সকালে বাড়ির উঠানে জানাজা শেষে শানু হাওলাদারকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সালেহা বেগম অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ এসেছিল তাঁর ছেলেকে ধরতে। তাঁকে না পেয়ে পুলিশ গালাগাল শুরু করে। তাঁর স্বামী বৃদ্ধ মানুষ। তাঁকে (সালেহা) পুলিশ আটক করছে শুনে স্বামী ঠিক থাকতে পারেননি। হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন।
সালেহার ভাষ্য, তাঁর স্বামীর মৃত্যুর জন্য পুলিশই দায়ী। পুলিশের আচরণ দেখেই তাঁর স্বামী ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে থানায় নেওয়ার খবর শুনে তাঁর মৃত্যু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাটাখালী গ্রামের বাসিন্দা এক জনপ্রতিনিধি বলেন, শানু হাওলাদারের পরিবার খুবই গরিব। তাদের বাড়িতে কখনো পুলিশ আসেনি। তাই পুলিশ দেখে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রী ভয় পেয়েছিলেন। স্ত্রীকে আটকের খবর ও পুলিশের গালাগাল শুনে স্বামীর হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে।
ওই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘আমরা সকালে (শুক্রবার) জানাজা দিয়ে তাঁকে দাফন করে এসেছি। শুনেছি নুরু পুলিশ তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেলের তেল খরচ বাবদ এক হাজার টাকা চেয়েছিল। এ টাকা না দেওয়ায় শানু হাওলাদারের স্ত্রীকে আটক করা হয়।’
এ বিষয়ে নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম সুলতান মাহামুদ বলেন, সুমনের স্ত্রীর একটি অভিযোগের তদন্তে গিয়েছিল সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জসিম উদ্দিন সিকদার। তিনি সবাইকে ডেকে সমস্যা সমাধান করে দিয়েছেন। এখানে আটকের কোনো ঘটনা ঘটেনি। জসিম ওই বাড়ি থেকে চলে আসার পর গৃহকর্তা শানু হালাদার মারা যান। এটা স্বাভাবিক মৃত্যু। এখানে কারো হাত নেই।
নলছিটি থানার এএসআই জসিম উদ্দিন সিকদারের সেলফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। পরিচয় দিয়ে এ প্রতিবেদক একটি খুদেবার্তা পাঠালেও তার উত্তর দেননি তিনি।