পুনর্নির্বাচন ও অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি
স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। পাশাপাশি নির্বাচনে অনিয়ম তদন্ত করতে প্রধান বিচারপতিসহ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা সুপ্রিম কোর্ট বারের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এ নির্বাচনের মাধ্যমে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। আইনজীবীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে।
খোকন বলেন, বার কাউন্সিল একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, এটি সরকারি নয়। এখানে আইনজীবীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। খোকন অভিযোগ করে বলেন, বার কাউন্সিল নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট দেওয়ার বিধান থাকা সত্ত্বেও দেশের প্রত্যেকটি জেলা আইনজীবী সমিতির কোথাও নির্বাচনী এজেন্টদের শিট দেওয়া হয়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বেআইনি।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের এই মহাসচিব বলেন, আমরা বার কাউন্সিল নির্বাচনের অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণের জন্য তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বার কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট অথবা সংশ্লিষ্ট বারের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে ভোট প্রয়োগের বিধান আছে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল সংশ্লিষ্ট বারের পরিচয়পত্র না দেখিয়ে ভোটারদের ভোট দেওয়ার নির্দেশ দেননি। বেশ কয়েকটি বারে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে কোনো ধরনের পরিচয়পত্র না দেখিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ভোট দানের সুযোগ করে দিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে প্রকৃত আইনজীবীরা ভোট প্রদানে বঞ্চিত হয়েছেন এবং অন্যদিকে আইনজীবী নন এমন অনেকে ভোট প্রদান করেন।
ব্যারিস্টার খোকন অভিযোগ করেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৯ হাজার ৯২ জন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভোটকেন্দ্রে ভোটার করা হয়েছে মাত্র ৮৫৩ জনকে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শত শত ভোটারকে তাঁদের অনুমতি বা অনুরোধ ছাড়াই জেলা পর্যায়ের ভোটকেন্দ্রে স্থানান্তর করায় তাঁরা ভোট দিতে পারেননি। এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। তাদের ভোট ঢাকা আইনজীবী সমিতিসহ বিভিন্ন নিম্ন আদালতের ভোটকেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এ সম্পর্কে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেলকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে গত ১০ মে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দিলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ফলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির হাজার হাজার ভোটার বার কাউন্সিল নির্বাচনে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগে বঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি নির্বাচনের দিনেও ৮৮ জনকে ভোটকেন্দ্র পরিবর্তন করার অনুমতি দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহসভাপতি এ বি এম ওয়ালিউর রহমান, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, এ বি এম রফিকুল ইসলাম তালুকদা রাজা, ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান প্রমুখ।
তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, এসব অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। বার কাউন্সিল নির্বাচন ও খুলনা সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের হতাশা থেকেই বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা এসব অভিযোগ করছেন।
গত ১৪ মে অনুষ্ঠিত বার কাউন্সিল নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে ১২টিতেই আওয়ামী লীগপন্থীরা জয়লাভ করেছেন। আর দুটি পেয়েছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা।