‘উনার সমস্যা কোথায়? উনি সুস্থ আছেন’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, ‘উনার সমস্যা কোথায়? উনি সুস্থ আছেন।’
অসুস্থতা না, আদালত ভীতির কারণে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হতে চান না বলেও মন্তব্য করেছেন হানিফ।
আজ শনিবার দুপুর ২টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডে নিজ বাসভবনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হানিফ এসব কথা বলেন।
পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘উনাকে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের সেরা ফিজিওথেরাপিস্ট উনাকে থেরাপি দিচ্ছেন। উনি আদালতে হাজির হতে চান না। গত ছয় মাসে আদালতে হাজির হন নাই। সেদিন আদালত যখন চিন্তা করলেন যে উনি অসুস্থতার অজুহাতে আদালতে আসেন না, সেই কারণে আদালতই নিয়ে গেলেন কারাগারে। কারাগারের ওখানেই আদালত বসানো যাতে উনার সুবিধা হয়। উনি সেদিন এসে বললেন যে, আমি আর আসব না। যা বিচার হয় করুন। এই কথার মধ্য দিয়ে দুইটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। এখনো যে উনি আদালতকে প্রচণ্ড ভয় পান। কারণ যে কোনো অপরাধীই যখন অপরাধ করে তখন তাঁর মধ্যে বিচার ব্যবস্থাটা একটা ভয়ের সঞ্চার করে।’
খালেদা জিয়াকে কারাগারে হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অভিযোগের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে হানিফ বলেন, ‘কী কারণে খালেদা জিয়াকে জেলখানায় হত্যা করতে হবে? হত্যা-খুনের রাজনীতি তো বিএনপি করে, ক্ষমতা দখলের জন্য। এ দেশে যত হত্যা খুনের রাজনীতি হয়েছে, সবই বিএনপি করেছে। আওয়ামী লীগ কখনও হত্যা প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না।’
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘বিএনপি আসলে এতটাই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে যে যখন কোনো নদীতে লঞ্চডুবি বা নৌকাডুবি হয়, মানুষ যেমন আকড়ে ধরার চেষ্টা করে, তারা এখন তেমন কোনো ধরনের খড়কুঠো আকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করছে। বিএনপি ডুবন্ত ও জনবিচ্ছিন্ন দল। এরা কখন কি বলছে তার আগাও নেই, মাথাও নেই।’
এ সময় কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানি হয়।
শুনানিকালে বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আক্তারুজ্জামানের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘জজ সাহেবের কাছে কোনো কথা বা নিবেদন করা যায় না। উনি তারিখ দিয়ে উঠে চলে যান। আমাদের কারো কথা শুনেন না। সরকারের হুকুমে এবং নির্দেশে তিনি সব কিছু পরিচালনা করছেন। আমার পায়ে ব্যথা। ডাক্তার আমাকে পা সব সময় উঁচু করে রাখতে বলেছেন। হাতেও প্রচণ্ড ব্যথা। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে। আমি খুবই অসুস্থ। আমি ঘন ঘন কোনো হাজিরা দিতে পারব না। রায় তো লেখাই আছে। আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। আপনাদের যা ইচ্ছা রায় দেন, যত খুশি সাজা দিয়ে দেন।’
পরে ৭ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিশেষায়িত হাসপাতালে নেওয়ার দাবি জানান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘আগে চিকিৎসা তারপর বিচার। খালেদা জিয়ার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তিনি তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আজ সাক্ষাতে ম্যাডামকে যেভাবে দেখেছি তাতে তিনি কীভাবে আগের দিন আদালতে এসেছেন সেটা ভাবছি। তিনি বাম হাত নাড়াতে পারেন না। বাম পাশ পুরো অবশ হয়ে গেছে। চোখেও প্রচণ্ড ব্যথা হয়। চোখের ভবিষ্যৎ কী সেটা বলা যাচ্ছে না।’