আইসিসির ওপর আস্থা নেই আলজাজিরার!
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরা প্রকাশিত প্রামাণ্যচিত্র ‘দ্য মুনাওয়ার ফাইলস’-এর ব্যাপারে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া যেভাবে মতামত দিয়েছে, তাতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জনপ্রিয় গণমাধ্যম আলজাজিরা। এই দুই শক্তিশালী ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে দলের খেলোয়াড়দের স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকারের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে আলজাজিরা। পাশাপাশি ‘ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কেন্দ্রে থাকা’ অনীল মুনাওয়ারের ব্যাপারে আইসিসিকে করা কিছু প্রশ্নের উত্তরও পায়নি বলে জানিয়েছে এই সংবাদমাধ্যম।
প্রায় ১৫টির বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচের পাশাপাশি ২০১১-১২ সালের কিছু টেস্ট ম্যাচেও স্পট ফিক্সিং হয়েছিল বলে প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করেছে আলজাজিরা। এটি ক্রিকেটে দুর্নীতি নিয়ে আলজাজিরার দ্বিতীয় প্রামাণ্যচিত্র। প্রথম প্রামাণ্যচিত্রেও মুনাওয়ারকে চিহ্নিত করেছিল তারা। সেখানে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের চেন্নাই টেস্টে এবং ২০১৭ সালের মার্চের রঞ্জি ট্রফিতে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের মাধ্যমে স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ এনেছিল আলজাজিরা।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি), ইসিবি এবং ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া অভিযোগ এনেছে আলজাজিরার বিরুদ্ধেও। অনেকবার অনুরোধ সত্ত্বেও কোনো প্রমাণাদি আইসিসিকে দেয়নি আলজাজিরা। দুটি ক্রিকেট বোর্ডের মতে, প্রামাণ্যচিত্রে খেলোয়াড়দের স্পট ফিক্সিংয়ে অভিযুক্ত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ নেই। তবে পাঁচ সপ্তাহ ধরে কিছু প্রশ্নের উত্তর চেয়েও আইসিসি সেগুলো দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। প্রশ্নগুলির মধ্যে রয়েছেঃ
• কখন মুনাওয়ারের কাজ সম্পর্কে আইসিসি জানতে পারে এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল?
• ২০১৮ সালের মে মাসে প্রামাণ্যচিত্র প্রথমবার প্রকাশের পর মুনাওয়ারকে চিহ্নিত করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
• আইসিসির ম্যাচ ফিক্সার তালিকায় মুনাওয়ারের নাম আছে কি না?
• টেস্ট ম্যাচের মতো আইসিসির কিছু খেলা স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে আইসিসি মনে করে কি না?
• ম্যাচ ফিক্সাররা আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের কাছে আসতে পারে না—এ ব্যাপারে আইসিসি আত্মবিশ্বাসী কি না।
• গত পাঁচ বছরে আইসিসি কতজন খেলোয়াড় কিংবা অন্যদের বিপক্ষে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ এনেছে আইসিসি?
• যাদের ধরা হয়েছে, তারা কারা এবং কী শাস্তি পেয়েছে?
• আইসিসির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মতো সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনে করণীয় কী?
আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিট (আকসু) ২০১০ সাল থেকেই মুনাওয়ারের ব্যাপারে জানত বলে প্রামাণ্যচিত্রে জানিয়েছে আলজাজিরা। সেখানে কলম্বোয় ২০১২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তারকা আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সঙ্গে মুনাওয়ারকে দেখা যায়। আলজাজিরার দাবি, দক্ষিণ এশিয়ার মাফিয়া সংগঠন ডি-কোম্পানির সঙ্গে মুনাওয়ারের যোগাযোগ রয়েছে। কিছু ম্যাচের পূর্বপরিকল্পিত কিছু স্পট ফিক্সিং সংক্রান্ত কল রেকর্ড পেয়েছে বলে দাবি আলজাজিরার।
আইসিসির এ বিষয় নিষ্পত্তির ক্ষমতা নেই বলে মনে করে আলজাজিরা। আলজাজিরা জানিয়েছে, ‘আইসিসির ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা সচেতন। আমরা কেন, কোনো স্বনামধন্য গণমাধ্যমই প্রচারের আগে এসব প্রমাণ তাঁদের হাতে দেবে না। আমরা ইন্টারপোলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তাদের প্রমাণগুলো হস্তান্তর করেছি। আমরা প্রমাণগুলো আইসিসিকে দেবো না এমন নয়। তবে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলে তাঁদের জবাবদিহির জায়গাটি আমাদের কাছে পরিষ্কার হবে।’
অথচ এখনই কোনো প্রশ্নের কোনো উত্তর দেওয়ার পরিকলপনা নেই আইসিসির। এমনকি আইসিসির আকসুর তদন্তে ২০ জনেরও অধিক ম্যাচ ফিক্সারদের যে তালিকা রয়েছে, তাতেও নাকি মুনাওয়ারের নাম নেই বলে আলজাজিরার এক অনুসন্ধানে প্রকাশ পেয়েছে। মুনাওয়ারকে আটক করতে আইসিসির চেয়ে ইন্টারপোলের ওপরই বেশি ভরসা করছে আলজাজিরা।