উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করবে না বিএনপি, প্রতিহিংসামুক্ত দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি
ক্ষমতায় এলে চলমান কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করবে না বিএনপি। তবে মেগা প্রকল্পে ব্যয়ের আড়ালে ‘সংগঠিত দুর্নীতি নিরীক্ষা’ করে দেখা হবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা, পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না রাখার বিধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে বিএনপি।
দেশরক্ষা, পুলিশ ও আনসার ব্যতীত শর্তসাপেক্ষে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা থাকবে না। ভ্যাটবিরোধী, কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং এসব আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করা হবে। তরুণ দম্পতি ও উদ্যোক্তাদের সাবলম্বী হওয়ার জন্য ২০ বছর মেয়াদী ঋণ চালু করা হবে। আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। এদের যৌক্তিক অর্থনৈতিক উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে বিচার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী, এমপিরা রাস্তায় নামলে যানজট যাতে না হয়, এ ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইশতেহার প্রকাশ করে বিএনপি। ইশতেহারে এসব প্রতিশ্রুতি জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পক্ষে দলটির ১৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল।
ইশতেহার প্রকাশ উপলক্ষে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা একটি জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার গঠন করে। বিগত প্রায় ১০ বছরে দেশে কোনোরকম সুশাসন ও আইনের শাসন ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। মামলা-হামলা, গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে এক ভীতি ও ত্রাসের রাজত্ব। জনগণের বাক-স্বাধীনতা ও সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইশতেহার ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : স্টার মেইল
দেশে আঞ্চলিক ও শ্রেণি বৈষম্য ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। দারিদ্র্য হ্রাসের হার কমে গেছে। দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, ব্যাংকগুলো লুট হয়ে যাচ্ছে। দেশে সৃষ্টি হয়েছে দুর্বৃত্তায়ন, দস্যুতাবৃত্তি ও লুণ্ঠনের অর্থনীতি।
এরকম একটি নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতিতে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ লড়াই শুধু নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের লড়াই নয়। এ লড়াই অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। এ লড়াই ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়ে মুক্তজীবনে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় জনগণকে সংগঠিত করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংগ্রাম করছি। এই সংগ্রামের অংশ হিসেবে আমরাও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ এ অংশগ্রহণ করেছি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গতকাল ইশতেহার ঘোষণা করেছে।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিএনপি একটি উন্নত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। দেশের উন্নয়নের জন্য বিএনপির কর্মসূচিগুলো বহুমুখী ও উন্নততর। বিএনপি জনগণের কাছে স্পষ্টভাবে অঙ্গীকার করতে চায়, ক্ষমতায় গেলে কারো ওপরই কোনো প্রকার প্রতিশোধ নেওয়া হবে না। একটি প্রতিহিংসামুক্ত এবং সহমর্মী বাংলাদেশ গড়ে তোলাই বিএনপির লক্ষ্য।
আজকের এই মুহূর্তে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আমাদের সঙ্গে নেই। তিনি আজ বন্দি জীবনযাপন করছেন। আপনাদের একটি ভোট আমাদের নেত্রীর জীবনকে পুনরায় আলোয় উদ্ভাসিত করবে।
এই মুহূর্তে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নিজ ঘরে থাকতে পারছে না। তারাও নিজ ঘরে ফিরতে চান। পেতে চান পরিবারের সান্নিধ্য, একটি স্বস্তিময় রাত। আপনাদের সমর্থন ঘরছাড়া এই মানুষগুলোকে ঘরে ফিরবার সুযোগ করে দিবে।’
বিএনপির ১৯ দফায় রয়েছে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন, বিচার বিভাগ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, অর্থনীতি, মুক্তিযোদ্ধা, যুব, নারী ও শিশু, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান, জ্বালানি, তথ্য ও প্রযুক্তি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, বৈদেশিক ও প্রবাসী কল্যাণ, কৃষি ও শিল্প, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, প্রতিরক্ষা ও পুলিশ, আবাসন, পেনশন ফান্ড ও রেশনিং ফান্ড প্রতিষ্ঠা, পরিবেশ, পররাষ্ট্র এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর গুরুত্বারোপ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইশতেহার ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : স্টার মেইল
বিএনপির ইশতেহারের মূল বিষয়গুলো হলো :
দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না, হত্যাকাণ্ড-রিজার্ভ চুরির তদন্ত হবে
এই দফায় বলা হয়েছে, বিএনপি নির্বাচনের দিনের গণতন্ত্রকে নিত্যদিনের অনুশীলনে পরিণত করবে, নির্বাহী ক্ষমতার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে, পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধান করা হবে, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় যেন সাধারণ মানুষের কোনো ভোগান্তি না হয় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রতিবছর প্রকাশ করা হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে শর্তসাপেক্ষে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে ‘জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সংবিধানে ‘গণভোট’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন করা হবে। সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে উল্লেখসংখ্যক নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা
নতুন ধারার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে। এই কমিশনের সদস্য থাকবেন সংসদে সরকারি দলের নেতা, বিরোধী দলের নেতা এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় জাতীয় ব্যক্তিত্ব, জাতীয় নেতৃবৃন্দের আপত্তিকর সমালোচনা রোধে সহিষ্ণুতার সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা হবে, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে, চাকরি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে সব ধরনের তদবির ও চাঁদাবাজি নিষিদ্ধ করা হবে, দেশরক্ষা, পুলিশ ও আনসার ব্যতীত শর্তসাপেক্ষে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো সময়সীমা থাকবে না।
তাছাড়া সড়ক পথে চলাচলে বিরাজমান বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটানো হবে এবং সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, রাজনীতিবিদদের অবাধ সমালোচনা করা যাবে বলেও এ দফায় বা আছে।
অনলাইন মনিটরিং, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল
মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে। সরকারের সঙ্গে কোনো বিষয়ে মত ভিন্নতা থাকলেও কারো কণ্ঠরোধ করা হবে না। অনলাইন মনিটরিং তুলে দিয়ে জনগণকে অবাধে কথা বলার ও মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টসহ সব ধরনের কালাকানুন বাতিল করা হবে। তথ্য অধিকার আইনে তথ্যপ্রাপ্তি দ্রুততর করার জন্য বিদ্যমান বাধাসমূহ পুরোপুরি দূর করা হবে।
এছাড়া, মানুষের জীবনের মূল্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, খুন এবং অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে। বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ বাতিল করা হবে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যুক্তিসংগত সমালোচনার অবাধ অধিকার থাকবে।
ভিওআইপি ব্যবসা উন্মুক্ত করবে বিএনপি
তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের অধিক লাভজনক ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসা উন্মুক্ত করা হবে। এছাড়াও এনটিটিএন, আইএসপি ও আইআইজি ব্যবসাও উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এর ফলে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে, দক্ষতা বাড়বে এবং ইন্টারনেট ব্যয় হ্রাস পাবে।
এছাড়াও, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বিদেশ হতে অর্জিত অর্থ দেশে আনার ক্ষেত্রে সকল প্রকার অযৌক্তিক বাধা দূর করা হবে। ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত সবাইকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্বল্প চার্জে গ্লোবাল পেমেন্ট গেটওয়ে সুবিধা দেওয়া হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত সব ধরনের উপকরণ সামগ্রীর ওপর শূন্য শুল্ক সুবিধা বজায় রাখা হবে।
মেট্রোপলিটন এলাকা, পৌরসভা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলোকে ক্রমান্বয়ে স্মার্ট সিটি, স্মার্ট পৌরসভা, স্মার্ট গ্রাম ও স্মার্ট ক্যাম্পাসে রূপান্তরিত করা হবে।
১ কোটি নতুন কর্মসংস্থান ও ২ লাখ মানুষকে চাকরি দিবে বিএনপি
ক্ষমতায় গেলে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে ২ লাখ মানুষকে চাকরি দেওয়া হবে এবং এক কোটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
শিক্ষাখাতে জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হবে। উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষা হবে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষে সমৃদ্ধ। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। গড়ে তোলা হবে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য জাতীয় টিভিতে একটি পৃথক শিক্ষা চ্যানেল চালু করা হবে। বিশ্বের মেধা জগৎ ও আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে বাংলাদেশের একটি নতুন মাত্রা যোগের জন্য বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিসহ অন্যান্য বিদেশি ভাষা শেখার জন্য অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
স্বল্পআয়ের পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্বল্প সুদের শিক্ষা ঋণ চালু করা হবে। বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের সুবিধার্থে মেধাবীদের বৃত্তি প্রদানের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিশ্চিত করে ছাত্রদের মধ্য থেকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বিকাশের পথ সুগম করা হবে। মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হবে। তাদের কারিকুলামে পেশাভিত্তিক ও বৃত্তিমূলক বিভিন্ন বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মসজিদের খতিব, ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য সম্মানজনক ‘সম্মানীভাতা’ চালু করা হবে। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে শিক্ষাক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে এবং শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে তা প্রতিরোধ করার জন্য সব ধরনের আইনি, প্রতিকারমূলক এবং প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে সকল ধরনের ভ্যাট বাতিল করা হবে। ভ্যাটবিরোধী, কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে আনীত সব মামলা প্রত্যাহার এবং এসব আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গরীব মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হবে। পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করা হবে।
প্রথম তিন বছরে দুর্নীতি মুক্ত ব্যবস্থায় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে ২ (দুই) লাখ মানুষকে চাকরি দেওয়া হবে। আগামী পাঁচ বছরে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা হবে। এদের যৌক্তিক অর্থনৈতিক উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। তরুণ দম্পতি ও উদ্যোক্তাদের সাবলম্বী হওয়ার জন্য ২০ বছর মেয়াদী ঋণ চালু করা হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইশতেহার ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : স্টার মেইল
প্রবৃদ্ধির হার ১১ শতাংশে উন্নীত
জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ১১ শতাংশে উন্নীত করা হবে। রপ্তানি প্রবৃদ্ধির হার ৩ (তিন) গুণ বাড়ানো হবে। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ করা হবে। শেয়ার মার্কেট, ব্যাংক এবং সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ লুটের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে ভবিষ্যতে যাতে কেউ এমন দুর্নীতি-অনাচার করতে না পারে সেই লক্ষ্যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক পরিচালনা বোর্ডে যোগ্য, সৎ ও দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হবে। ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশন বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকসমূহ পরিচালনা ও তদারকির ভার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ন্যস্ত করা হবে।
বর্তমানে চলমান কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা হবে না। তবে মেগা প্রকল্পে ব্যয়ের আড়ালে সংগঠিত দুর্নীতি নিরীক্ষা করে দেখা হবে এবং এজন্য দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। বর্তমান সরকারের শেষ দুই বছরে তড়িঘড়ি করে নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনঃবিবেচনা করার জন্য কমিটি গঠন করা হবে।
দেশে কর্মরত সকল বিদেশিদের ওয়ার্ক পারমিটের আওতায় এনে মুদ্রা পাচার রোধ করা হবে এবং তাদেরকে করের আওতায় আনা হবে। একটি টাস্কফোর্স রেন্টাল পাওয়ার প্রজেক্টের উচ্চ ব্যয়ের কারণ তদন্ত করে দেখবে।
মুক্তিযোদ্ধা
সব মুক্তিযোদ্ধাকে ‘রাষ্ট্রের সম্মানিত নাগরিক’ হিসেবে ঘোষণা করা এবং মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়নের নামে দুর্নীতির অবসান ঘটানো হবে। মূল্যস্ফীতির নিরিখে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিত করে সেসব স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা হবে এবং তাদের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা হবে।
জ্বালানি
অদক্ষ পুরানো বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহ অতি জরুরি ভিত্তিতে আধুনিকায়ন এবং পুনর্বাসনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দেশীয় গ্যাস এবং ফার্নেস-অয়েলের ওপর নির্ভলশীলতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করা হবে। বিদ্যুৎ সংকট স্থায়ীভাবে নিরসন এবং কার্বন নিঃস্বরণ হ্রাস করার লক্ষ্যে ছোট, মাঝারি ও বৃহদাকার পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি আহরণ বিশেষ করে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জিও-থারমাল, সমুদ্র তরঙ্গ, বায়োগ্যাস, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র, জলাধার, গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহ শিল্প সরকারি খাত এবং প্রয়োজনবোধে সরকারি/বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে স্থাপন করা হবে।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম বছরে বিদ্যুৎ ও আবাসিক গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হবে না। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যে সব ধরনের অসঙ্গতি দূর করা হবে।
বৈদেশিক ও প্রবাসী কল্যাণ
বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, ঝুঁকিমুক্ত অভিবাসন নিশ্চিতকরণ ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রবাসীরা যাতে তাদের কষ্টার্জিত আয় বৈধ পথে বাংলাদেশে পাঠাতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক এক্সচেঞ্জ হাউস/ব্যাংকের সঙ্গে প্রণোদনা সুবিধাসহ রেমিট্যান্স প্রেরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো যাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করে তা নিশ্চিত করা হবে।
বিদেশফেরত প্রবাসীদের বিমানবন্দরে বিদ্যমান হয়রানি বন্ধ করা হবে। বিদেশ থেকে ফেরত আসা প্রবাসীদের যথাযথ তালিকা প্রস্তুত করে তাদের কল্যাণে নানামুখী প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেশ পরিচালনায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। বিদেশে বিপদগ্রস্ত বা আটকে পড়া নাগরিকদের রক্ষা ও ফিরিয়ে আনতে যথোপযুক্ত কনস্যুলার সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
কৃষি ও শিল্প
মূল্য-সমর্থন এবং উপকরণ ভর্তুকির সঠিক সংমিশ্রণ ঘটিয়ে কৃষক যাতে তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় সে ব্যবস্থা করা হবে। প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদে উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে ডাটাবেইজ গড়ে তুলে রাষ্ট্রীয় সমর্থন পাওয়ার যোগ্য কৃষকদের তালিকা প্রণয়ন করা হবে। কৃষিতে নানা ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও শস্য বীমা, পশু বীমা, মৎস্য বীমা এবং পোল্ট্রি বীমা চালু করা হবে। গরিব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত কৃষকের কৃষি ঋণের সুদ মওকুফ করা হবে।
দুই বছরের মধ্যেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি ১২ (বার) হাজার টাকা করা হবে। গার্মেন্টসসহ অন্যান্য সব শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
সব খাতের শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে। কৃষি উৎপাদনকে লাভজনক পেশায় পরিণত করার লক্ষ্যে উৎপাদন খরচের সাথে যৌক্তিক মুনাফা নিশ্চিত করে সকল কৃষি পণ্যের মূল্য নির্ধারিত হবে স্থানীয় সমবায় সমিতির মাধ্যমে।
শ্রমিক ও ক্ষেত মজুরসহ গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সুলভ মূল্যে রেশনিং চালু করা হবে। কৃষি ভর্তুকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়িয়ে সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা হবে। জলমহাল এবং হাওরের ইজারা সম্পূর্ণ বাতিল করে মৎসজীবী ও দরিদ্র জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
পুনর্বাসন ছাড়া শহরের বস্তিবাসী ও হকারদের উচ্ছেদ করা হবে না। স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে শ্রমিকরা মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রিমিয়ামের মাধ্যমে সব চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।
এক বছরের মধ্যে মানুষকে ভেজাল ও রাসায়নিক মুক্ত নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হবে। উৎপাদনকারী, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার যুক্তিসঙ্গত মুনাফা নিশ্চিত করে ওষুধের মূল্য যুক্তিসঙ্গত হারে কমানো হবে। বিশিষ্ট চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জাতীয় এক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হবে।
মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং বয়ঃবৃদ্ধদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে সিংহভাগ খরচ হয় ডায়াগনস্টিক পরীক্ষায়। এক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য সরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত ডায়াগনস্টিক বুথ স্থাপন করা হবে। শিশুদের ডায়াবেটিস ও বেড়ে ওঠার সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
প্রতিরক্ষা ও পুলিশ
একটি দক্ষ, স্বচ্ছ, গতিশীল, মেধাবী, জবাবদিহিমূলক যুগোপযোগী ও গণমুখী জনপ্রশাসন গড়ে তোলা হবে। মেধার মূল্যায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যথাযথ সংস্কার করা হবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নারী ও প্রান্তিক জাতি-গোষ্ঠী কোটা ব্যতিরেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে। গতিশীল বিশ্বায়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংবিধানের আলোকে একটি যথোপযুক্ত সিভিল সার্ভিস আইন প্রণয়ন করা হবে। প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র এবং অন্যান্য সব সরঞ্জাম অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কেনা হবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্রবাহিনীতে কর্মরত সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আবাসন সমস্যার সমাধান করা হবে। সশস্ত্রবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের জন্য যৌক্তিক রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে।
পুলিশ বাহিনীর ঝুঁকি ভাতা বৃদ্ধি করা হবে। পুলিশ বাহিনীর পেশাদারিত্ব বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জাতিসংঘ বাহিনীতে পুলিশের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পুলিশের জন্য কল্যাণমূলক প্রকল্প গৃহীত হবে।
ইন্সপেক্টর ও সাব-ইন্সপেক্টরদের বেতন ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে আপগ্রেড করা হবে এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অবসরে গেলেও তাদেরকে রেশন সুবিধা দেওয়া হবে।
আবাসন, পেনশন ফান্ড ও রেশনিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা
দুঃস্থ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা এবং অসহায় বয়স্কদের ভাতার পরিমাণ মূল্যস্ফীতির নিরিখে বৃদ্ধি করা হবে। বেসরকারি ও স্বনিয়োজিত খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য বার্ধক্যের দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি ‘পেনশন ফান্ড’ গঠন করা হবে। গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে।
পররাষ্ট্র
বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিএনপি অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না এবং অন্য কোনো রাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে কোনো স্পেস দিবে না। একইভাবে অন্য কোনো রাষ্ট্রও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
মুসলিম দেশসমূহ ও প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করা হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ বাসভূমিতে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য শক্তিশালী দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থা যেমন- সার্ক, বিমসটেক, বিসিআইএম, বিবিআইএন প্রভৃতি সংস্থাগুলোকে সুসংহত করা এবং কার্যকরভাবে গড়ে তোলার জন্য সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বিআরআই, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেসিক ইনসিয়েটিভ সহ বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সংযোগ বৃদ্ধি করা হবে এবং বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নেপাল, ভুটান ও য়ুন্নানের জনগণের সংযোগ সহজতর করা হবে।
আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে বহমান আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আঞ্চলিক ও পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়
পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবন, সম্পদ, সম্ভ্রম ও মর্যাদা সুরক্ষা করা হবে। অনগ্রসর পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে সব সুবিধা এবং পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করা হবে।
দল, মত, জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে ক্ষুদ্র-বৃহৎ সব জাতি গোষ্ঠীর সংবিধান প্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মকর্মের অধিকার এবং জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করা হবে। এই লক্ষ্যে ধর্মীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সবশেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই নির্বাচনী লড়াই-এ এদেশের মানুষ জয়যুক্ত হবেই। বিজয়ের এই মাসে মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠা একতায় বলীয়ান হয়ে বাংলাদেশের জনগন স্বৈরাচারী সরকারের অবসান ঘটাবে। মুক্তির আলোয় উদ্ভাসিত হবে আমাদের জীবন।