পরকীয়া করায় স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ নদীতে!
দীর্ঘ দেড় বছর পর পাবনার চাঞ্চল্যেকর তসলিমা হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই সূত্রে জানায়, ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট রাতে পাবনা জেলার আমিনপুর থানাধীন রামনারায়ণপুর গ্রামের তোরাপ শেখের (৫৫) ছেলে মো. জহুরুল ইসলামের বাড়ি থেকে তাঁর স্ত্রী মলি বেগম (১৮) নিখোঁজ হয় বলে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মলি বেগমের বাবা একই গ্রামের আবদুর রব ফকির (৫০)। কয়েক মাস কেটে গেলেও মেয়ের সন্ধান না পেয়ে তিনি আদালতে অভিযোগ করেন। আদালত আমিনপুর থানাকে মামলা রুজু করার নির্দেশ দেন। কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও থানা পুলিশ তদন্ত করে কোনো কুল-কিনারা করতে না পারায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মামলার তদন্তভার পিবিআইকে দেয়।
পিবিআই মামলাটি তদন্তের জন্য উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সবুজ আলীর ওপর দায়িত্ব দেয়। এসআই সবুজ আলী কিছুদিনের মধ্যেই তথ্য-প্রযুক্তি সহায়তায় মামলার রহস্য উদঘাটন করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে সনাক্ত করেন। পিবিআই পাবনার প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলামের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মূল আসামি মলি বেগমের স্বামী জহুরুল ইসলামকে গত বুধবার টাঙ্গাইলের সখিপুর উপজেলার জেলাখানা মোড় থেকে গ্রেপ্তার করে।
পিবিআই পাবনার জেলা প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তরিকুল ইসলাম ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. সবুজ আলী বলেন, প্রায় তিন বছর আগে মামলার আসামি মো. জহুরুল ইসলামের সঙ্গে ভিকটিম মলি বেগমের বিয়ে হয়। জহুরুল সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। এ কারণে তিনি ভোর রাতে বের হতেন এবং রাত ১০-১১টার দিকে বাড়ি ফিরতেন। এক সময় জহুরুল জানতে পারেন যে তাঁর স্ত্রী মলি বেগম পরকীয়া করছেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এরপর জহুরুল একই গ্রামে তাঁর বন্ধু আল-আমিন ওরফে নয়নের সঙ্গে স্ত্রীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট রাত পৌনে ১২ টার দিকে জহুরল ইসলাম ও তাঁর বন্ধু মলি বেগমের ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। মলির মৃত্যু হলে তারা দুজন মিলে জহুরুল ইসলামের অটোরিকশায় উঠিয়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর বাস টার্মিনালের পরে একটি ব্রিজের ওপর থেকে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
পিবিআই পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া মূল আসামি জহুরুল ঘটনার পর থেকেই কৌশল অবলম্বন করে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পলাতক ছিলেন। অনেক কৌশল অবলম্বন করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বুধবার তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানান, পরকীয়া করায় বন্ধু আল-আমিনের সহায়তায় স্ত্রী মলিকে হত্যা করেন এবং লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেন।