‘খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, প্যারোলে নয়’
যেকোনো মূল্যে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বেগম জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চায় না বিএনপি।’ তিনি বলেন, ‘নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে, প্যারোলের কথা বলিনি।’
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসনের সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গনঅনশনে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘যেকোনো মূল্যেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। এবং সেই মুক্তি আন্দোলনে আমাদের অবিলম্বে শুরু করতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে বলেছি যে জামিন পাওয়াটা তার অধিকার। যে মিথ্যা মামলায় তাকে জোর করে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেই মামলায় অন্যান্য ব্যক্তিরা জামিনে রয়েছেন।’
অনুষ্ঠানে বিএনপিনেতা মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বেগম জিয়াকে দ্রুত মুক্ত করা সম্ভব না। আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে হবে। সরকার যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি করেছে তা কখনো থাকবে না। জনগনই সেই শূন্যতা পূরণ করবে।’
‘প্যারোলে বা অনুকম্পায় নয়’
প্যারোলে বা অনুকম্পায় নয়, আন্দোলনের মাধ্যমে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অনুকম্পা বা দয়ায় হবে না, আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে দেশনেত্রীকে। সময় আসবে, ঘোষণা আসবে, প্রস্তুতি নেন; দেশনেত্রীকে মুক্ত করা হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সময় বেশিদিন নাই। শেখ হাসিনা প্যারোলে মুক্তি নিয়েছেন, কিন্তু খালেদা জিয়া প্যারোল নেন নাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলব, খুব বেশিদিন নাই; আপনাদের নেতাকে জনগণের কাছে প্যারোল চাইতে হবে। জনগণের নেত্রী জনগণের মাঝে আসবে জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে। কারো অনুকম্পা চাই না।’
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নেতৃবৃন্দের কাছে আহ্বন- আসুন, হয় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব আর না হয় আল্লাহর কসম! আমরা তার কাছে চলে যাব।’
বিএনপির উদ্দেশ্যে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ‘আমি জানি, এ গণঅনশনে কী হবে। যদি পারেন এক হয়ে রাস্তায় নামেন। রাস্তায় নামলে দু-চারটা মামলা হবে। তাতে কী যায় আসে। দেশটাই তো একটি কারাগারে পরিণত করেছে।’
বিএনপি আন্দোলন না করলেও বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই অবৈধ সরকারের কাছে কোনো দাবি আপনারা (বিএনপি) করতে পারেন না। যদি এই অবৈধ সরকারের কাছে আপনারা কোনো দাবি করেন তাহলে আপনাদের পতন হবে। এই দাবির মধ্য দিয়েই শেখ হাসিনাকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এই সরকার অবৈধ, সংসদ অবৈধ, এটা আপনাদেরকে মনে রাখতে হবে।’
এ সময় তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে কাদের সিদ্দিকী আরো বলেন, ‘অনেকেই বলেছেন নির্বাচনের পরের দিন কেন হরতাল ডাকা হলো না। রাস্তা অবরোধ করা হলো না। আমি মনে করি আপনারা রাস্তা অবরোধ না করে ভালোই করেছেন। এখন ধীরে ধীরে অবরোধ শুরু করেন।’
আজ গণতন্ত্র আর খালেদা জিয়া এক কথা- এমন মন্তব্য করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘যে আদালতে যে বিচারক বেগম খালেদা জিয়ার শাস্তি দিয়েছেন সেই বিচারকের জনগণের আদালতে শাস্তি হবে।’
জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘আপস করে, দরকষাকষি করে খালেদা জিয়ার মুক্তি সন্মানজনক হবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে, হলের মধ্যে স্লোগান দিলে হবে না, রাজপথের আন্দোলনে খালেদা জিয়া মুক্ত হবে। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ুন, সারাদেশ ঘেরাও করতে হবে। তবেই দেশনেত্রী মুক্ত হবেন।’
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দয়াতে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। কীভাবে রাস্তায় নামা যায়, সেটা ভাবতে হবে। রাস্তা দখল না করে ফুটপাত তো দখল করতে পারি। সময় এসেছে এগুলো ভেবে দেখার।’