অপরাধী যে দলেরই হোক ছাড় পাবে না : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের পাশাপাশি সামাজিক অন্যায়-অবিচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘অপরাধী যে দলেরই হোক ছাড় পাবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন ধরনের অপরাধের সঙ্গে আমার দলের কেউ যদি সম্পৃক্ত থাকে তাহলে আমি তাকেও ছাড় দিচ্ছি না এবং ছাড় দেব না। শাসনটা ঘর থেকেই করতে হবে এবং সেটাই করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যও যদি কোনো ধরনের অপরাধ করে, সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং এটা অব্যাহত থাকবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ জাতীয় সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য বেগম রওশন আরা মান্নানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, দুর্নীতি আমরা করব না, দুর্নীতি আমরা করতে দেব না। ঘুষ যে গ্রহণ করবে আর ঘুষ যে দেবে উভয়েই অপরাধী।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধ সংঘটক এবং অপরাধের উসকানি বা মদদদাতাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিতে চাই।’
নিজেকে জনগণের সেবক আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রীত্বকে জনগণের সেবা করার একটি সুযোগ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রাপ্ত সুযোগটুকু কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের কতটুকু কল্যাণ করা যায়, কতটুকু আর্থসামাজিক উন্নতি করা যায়, আর অন্যায় অবিচারের হাত থেকে দেশের মানুষকে কীভাবে রক্ষা করা যায়, আমি সার্বক্ষণিক সেই চেষ্টা করি। এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা দেশ যখন আর্থসামাজিকভাবে এগিয়ে যেতে থাকে তখন কেবল বাংলাদেশ বলে নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও সমাজে কিছু সুযোগ সন্ধানী শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। আর এদের দমন করা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একার পক্ষে সম্ভব নয়। এটাকে সামাজিকভাবেও প্রতিরোধ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি দমন, সন্ত্রাস দমন, মাদক এবং দুর্নীতি দমনের জন্য আমরা সবথেকে যে বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছি সেটা হচ্ছে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।’ তিনি বলেন, ‘সরকার একদিকে যেমন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগাচ্ছে পাশাপাশি কাজে লাগাচ্ছে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার জনগণকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে আজকে যে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, দেশের ঘরে ঘরে স্বাধীনতার সুফলটা যে আমরা পৌঁছাতে শুরু করেছি সেই ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যেন সমগ্র বিশ্বে একটি সম্মানজনক অবস্থানে থাকে সেটাই সব সময় চেয়েছি। বাঙালি জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে। আল্লাহর রহমতে আমরা এখন যথেষ্ট সম্মান পাচ্ছি। কিন্তু এই ধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেজন্য আমাদের সমাজ থেকে অনিয়ম, অবিচারগুলো দূর করতে হবে আর সেজন্য সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করাটা একান্তভাবে প্রয়োজন। সেজন্য কোনো বাহিনীর একার ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না।’
এ জন্য প্রধানমন্ত্রী দলমত নির্বিশেষে সব সংসদ সদস্যের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘এই ব্যপারে সবাই একসঙ্গে কাজ করলে আমরা অবশ্যই সমাজ থেকে এই অনিয়মগুলো দূর করে আমাদের এই অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারব।’
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে দুর্নীতিবাজ এবং অপরাধী চিহ্নিত করতে ভবিষ্যতে পলিগ্রাফ টেস্টসহ অন্যান্য মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু করা হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা সর্বজন স্বীকৃত পর্যায়ে পৌঁছেনি। তবে, আমরা ভবিষ্যতে এ ধরনের মানসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ক্রমে অন্তর্ভুক্ত করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধী যেই হোক সে অপরাধী। কাজেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কোনো সংস্থা কারো বিরুদ্ধে যদি কোনো ব্যবস্থা নেয় তাহলে তাঁদের ব্যবস্থা গ্রহণের পদ্ধতি সঠিক কি না সেটাই যেন বিবেচনায় আনা হয় এবং এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি বিশেষ যেন কোনো বিশেষ সুবিধা লাভের সুযোগ না পায়।’