ভারত-পাকিস্তান, ঘরের শত্রু-মিত্র
গাভাস্কার-আসিফ ইকবাল, কপিল দেব-ইমরান খান, ওয়াসিম আকরাম-আজহারউদ্দিন, হালের কোহলি-সরফরাজ—যাঁরাই টস করতে নেমেছেন, উত্তাপ ছড়িয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। উত্তাপ, উন্মাদনা, রেষারেষি, কাদা ছোড়াছুড়ি কী হয় না ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে!
অথচ একটাই তো দেশ ছিল একসময়! ওই ইতিহাস অস্বীকারের উপায় কি? ক্রিকেটেও আছে এমন ছাপ।
এত সব দ্বন্দ্বের মধ্যে কখনো কি ভাবা যায়, কোনো খেলোয়াড় এ দুই দলের হয়েই ক্রিকেট খেলেছেন? এখনকার রঙিন জার্সির জগতে তা কখনোই সম্ভব নয়। তবে সাদা জার্সিতে এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন তিন ক্রিকেটার—আবদুল হাফিজ কারদার, গুল মহম্মদ ও আমির ইলাহি।
আবদুল হাফিজ কারদার
পাকিস্তানের ‘ফাদার অব ক্রিকেট’ বলা হয় আবদুল হাফিজ কারদারকে। পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ম্যাচে দলকে নেতৃত্বও দেন তিনি। তবে তাঁর অভিষেক হয়েছিল ভারতের হাত ধরেই। ১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখান কারদার। ছিলেন অলরাউন্ডার। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। সেইসঙ্গে ছিলেন লেফট আর্ম স্পিনার। তবে ভারতের হয়ে খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি তিনি। মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছেন।
দেশভাগের পর পাকিস্তানের হয়ে খেলা শুরু করেন কারদার। ১৯৫২-৫৩ মৌসুমে ভারত সফর দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাস। ওই সময় দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন আবদুল হাফিজ কারদার। ১৯৫৮ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি।
পাকিস্তান-ভারত দুই দেশের হয়ে মোট ২৬টি ম্যাচ খেলেছেন কারদার। ২৬ ম্যাচে ২৩ দশমিক ৮ গড়ে করেন মোট ৯২৭ রান। তাঁর সর্বোচ্চ রান ৯৩। বল হাতেও পারদর্শী কারদার ২৬ ম্যাচে নেন ২১ উইকেট।
গুল মহম্মদ
১৯৪৬ সালে ইংল্যান্ড সফর দিয়ে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় গুল মহম্মদের। ছিলেন বাঁহাতি ক্রিকেটার। মিডিয়াম পেসার ছিলেন তিনি। করতেন ব্যাটিংও। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ভারতের হয়ে মোট আটটি ম্যাচ খেলেছেন গুল মহম্মদ।
১৯৫৫ সালে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিয়ে দেশটির হয়ে খেলা শুরু করেন গুল মহম্মদ। তবে পাকিস্তানের হয়ে মাত্র একটি ম্যাচই খেলেছেন এই বাঁহাতি।
ভারত-পাকিস্তান উভয় দলের হয়ে ৯ ম্যাচে ১২ দশমিক ৮ গড়ে করেছেন মাত্র ২০৫ রান। সর্বোচ্চ রানও আহামরি কিছু নয়, মাত্র ৩৪। বল হাতেও সুবিধা করতে পারেননি। ৯ ম্যাচে মাত্র ২ উইকেট নিয়েই ক্ষান্ত হন গুল মহম্মদ।
আমির ইলাহি
ভারত-পাকিস্তান উভয় দলেই আমির ইলাহি ক্রিকেট খেলেছেন বটে, তবে আরো একটি পরিচয় আছে তাঁর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বয়স্ক যে ২০ জন খেলোয়াড় রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ইলাহি একজন।
১৯৪৭ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতের হয়ে অভিষেক হয় এই লেফট ব্রেক বোলারের। ভারতের হয়ে একটি মাত্র ম্যাচই খেলেছেন ইলাহি।
দেশভাগের পর পাকিস্তানের হয়ে খেলা শুরু করেন তিনি। সেখানে মোট পাঁচটি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয় তাঁর। পাকিস্তানের হয়ে ১৯৫২ সালে শেষ ম্যাচ খেলেন আমির ইলাহি। প্রতিপক্ষ ছিল সাবেক দল ভারতই।
ভারত-পাকিস্তান উভয় দলের হয়ে ছয় ম্যাচে সাতটি উইকেট শিকার করেন আমির ইলাহি। অন্যদিকে ছয় ম্যাচে ১০ দশমিক ২ গড়ে করেন ৮২ রান। মাত্র ছয় ম্যাচ দিয়েই অবশ্য ইলাহিকে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। কারণ, ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচগুলোতে দারুণ উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। ফার্স্ট ক্লাসে ১২৫ ম্যাচে ৫১৩টি উইকেট শিকার করেছেন এই ক্রিকেটার।