ধর্মকে পুঁজি করে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ : সিআইডি
৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের (এফআইসিএল) চেয়ারম্যান শামীম কবিরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীতে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।
মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শামীম কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনসহ মোট ২৮টি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। একটি মামলায় তাঁর তিন বছর সাজাও হয়েছে। চার বছর ধরে পলাতক ছিলেন তিনি।’
বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ‘সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট গত ৯ জুলাই শামীম কবিরকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে একটি নোয়া মাইক্রোবাস, দুটি মোবাইল ফোন, শামীম কবিরের পাসপোর্ট, ২৯টি জমির দলিল, ডিভিআর ও চারটি চেক বই জব্দ করা হয়েছে। শামীম কবিরকে তিন দিনের রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি।’
মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শামীম কবির কুমিল্লায় নিজ উপজেলা চৌদ্দগ্রামের মুন্সিরহাটে ফারইস্ট ইসলামী মাল্টি কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি খোলেন। এরপর কোম্পানিটির আরো শাখা বিস্তার করতে থাকেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় থানা থেকে জেলা পর্যায়ে এবং চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে এফআইসিএলের শাখা অফিস খোলেন।’
‘শামীম কবির ইসলাম ধর্মকে পুঁজি করে কতিপয় ধর্মভীরু ও স্বল্পশিক্ষিত লোকদের আল্লাহর কিছু মহান বাণী শোনাতেন। পবিত্র কোরআন শরিফ রাখতেন অফিসে। এরপর লোকজনকে অফিসে দাওয়াত দিয়ে এফআইসিএলে বিনিয়োগ করতে বলতেন। এ ছাড়া তিনি পাড়ায় পাড়ায় ওয়াজ করে নিজেকে ধর্মের বরপুত্র দাবি করে তাঁর প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে বলতেন। বিনিয়োগ করলে লাখ টাকায় প্রতি মাসে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত মুনাফা দেওয়ার কথা বলে লিফলেট বিতরণ ও পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতেন।’
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, ‘ওয়াদা অনুযায়ী তিনি ২০০৭ সাল থেকে ১২ সাল পর্যন্ত মুনাফা দিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করেন। এভাবে টানা কয়েক বছর মুনাফা পেয়ে সাধারণ মানুষ অন্য সব স্থান থেকে টাকা তুলে এফআইসিএলে রাখা শুরু করে। এমনকি বেশি লাভের আশায় ধার-দেনা করে, পেনশনের টাকা অথবা জমি বিক্রি করে গ্রাহক এখানে টাকা রাখতেন। এভাবে ২০ হাজার গ্রাহকের ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ২০১৩-১৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। এরপর তিনি আত্মগোপনে চলে গিয়ে মালয়েশিয়ায় চলে গেছেন বলে এলাকায় প্রচার করতে থাকেন।’
শামীম কবিরের বরাত দিয়ে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আত্মসাৎ করা টাকা দিয়ে তিনি তাঁর নিজ গ্রাম ও সিলেটের জৈন্তাপুরে প্রাসাদসম বাড়ি, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্লট ও ফ্ল্যাট কেনাসহ বিভিন্ন জেলায় ৪০ একর জমি কিনেছেন তিনি।’
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০১৫ সালে শামীম কবিরের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করে। সেই মামলা বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে বলেও জানিয়েছেন মোল্যা নজরুল ইসলাম।