করোনায় মৃত মুক্তিযোদ্ধার দাহে বাধা, সাংসদের হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা
করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে করে অবশেষে জগতের মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে গেলেন ফরিদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ও ফরিদপুর শহরের পুরাতান কালীবাড়ীর পুরোহিত কমলেশ চক্রবর্তী ভানু (৭০)। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১২ দিন ধরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। আজ রোববার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে ওই হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
কমলেশ চক্রবর্তী ভানু স্ত্রী, দুই ছেলে, স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ দুপুরে অম্বিকাপুর শশ্মানে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে স্থানীয় কিছু জনতা তাঁর সৎকারে বাঁধা সৃষ্টি করে। শশ্মানের চিতায় করোনায় মৃত্যুবরণকারীর দেহ দাহ হতে দেওয়া হবে না মর্মে বাকবিতণ্ডা করে।
খবর পেয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তাঁর নির্দেশে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এইচ এম ফুয়াদ ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইমতিয়াজ হাসান রুবেল নেতৃবৃন্দসহ ঘটনাস্থলে যান এবং সৎকারে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী জনতার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করেন।
জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানায়। এরপর নিজ ছেলের মাধ্যমে সনাতন ধর্ম অনুযায়ী কমলেশ চক্রবর্তী ভানুর মুখাগ্নি নিবেদন করে পুলিশ পাহাড়া দিয়ে দাহ সম্পন্ন করে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুম রেজা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাশেদুল ইসলাম, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তিরা।
ইউএনও মো. মাসুম রেজা বলেন, ‘খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা কমলেশ চক্রবর্তী ভানুর লাশ দাহের জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এর আগে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। তাঁর দাহ শেষ না হওয়া পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন সেখানে থেকে সব কাজে সহযোগিতা করে।’
এ বিষয়ে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পাই বীর মুক্তিযোদ্ধা কমলেশ চক্রবর্তী ভানুর লাশ দাফনে শশ্মানের সামনে বাধা দিচ্ছে স্থানীয় এলাকাবাসী। এ সময় পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গিয়ে এলাকাবাসীর করা অবরোধ সরানো হয়।’
এ বিষয়ে অম্বিকাপুর শশ্মান কমিটির সভাপতি লক্ষণ দত্তের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনেছি কিন্তু যাইনি। করোনা ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে এলাকার লোকজন লাশটি দাহ করতে বাধা দিয়েছিল।’
কমলেশ চক্রবর্তী ভানুর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী বরকত ইবনে সালাম, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. ইমতিয়াজ হাসান রুবেল, স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শিবাজী নিকেতন, ব্রাহ্মণ পুরোহিত ঐক্য পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদসহ ফরিদপুরের বিভিন্ন সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠনের নেতারা।