ইরানে পানি সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তনের অশনিসংকেত
ইরানে মাঝে মাঝেই খরা আবহাওয়ায় কোথাও বৃষ্টির দেখা মেলে না। অন্যদিকে, আবার কিছু জায়গায় অত্যধিক বন্যাও দেখা যায়। এমন পরিস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে তা বললে ভুল হবে না। এমন আবহাওয়ায় চরম পরিবর্তন ইরানের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রতিনিয়ত ভাবিয়ে তুলছে।
ইরানের আবহাওয়া দপ্তর এই বছরের শুরুতে জানিয়েছিল, এই বছরের এপ্রিল মাস ‘নজিরবিহীন খরার’ মাস হতে পারে। জানা গেছে, ইরানের প্রধান নদী অববাহিকার বেশির ভাগ অঞ্চলে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর এবং ২০২১ সালের জুলাইয়ের মধ্যে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা ছিল গত বছর একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম।
এমন অবস্থায় এ বছর কম বৃষ্টিপাত ও প্রচণ্ড গরমের কারণে, বিশেষ করে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে খুজিস্তান প্রদেশে পানির স্বল্পতা দেখা দেয় চরম মাত্রায়। খাল-বিলের পানি শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির উচ্চতা কমে যাওয়ার কারণে প্রদেশের জনগণ তীব্র পানি সংকটের সম্মুখীন হচ্ছেন।
ইরানের খুজিস্তানের অবস্থা নিয়ে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুজিস্তান প্রদেশের জনগণের পানি সংকটের সমাধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকেও খুজিস্তানের কারুন বাঁধের বিভিন্ন গেট খুলে দিয়ে খুজিস্তানের পানি সংকটের সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে, ইরানের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ বাঁধগুলোতে বর্তমানে পানির স্তর খুবই নিচে নেমে যাচ্ছে। এর ফলে এই বাঁধগুলোর নিচের এলাকায় ধান চাষ ও গবাদি পশুর জন্য সংরক্ষিত পানি ছেড়ে দেওয়ার জন্য দাবি করছেন ভুক্তভোগীরা। এ অবস্থায় ইরানের বড় শহর ইস্ফাহানের শহরের অন্য প্রান্তের কৃষকদের দাবির মুখে শহরের মাঝ দিয়ে যাওয়া জয়ান্দে রোদের বাঁধ ১০ দিনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এর ফলে সাময়িক স্বস্তি ফিরে আসে অপর প্রান্তের কৃষকদের মাঝে।
ইরানের একজন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ গোলাম হোসেন শাফিয়ি এই পরিস্থিতি নিয়ে এক সংলাপে বলছিলেন, ‘এমন খরার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে মানুষ তৃষ্ণার কারণে গ্রাম থেকে অন্য স্থানে বসবাসের জন্য স্থানান্তরিত হবে। খরা ও পানির সমস্যা আমাদের প্রদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা আগামীতে এটি একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে এবং আমাদের এখন থেকেই এ বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করতে হবে।’
এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পানি সংকট সমাধানে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে না এগোলে সমাধান অনেকটায় কঠিন হয়ে পড়বে এবং বিশ্ব জলবায়ুর পরিবর্তন মাথায় রেখে আমাদের পরিবেশের এমন সংকটগুলো মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ডক্টর অব মেডিসিন, ইস্পাহান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইরান