কোন ধরনের মাস্ক কেমন কার্যকর
বাংলাদেশে করোনা বা COVID-19-এর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকে মাস্ক কিনছেন। প্রচুর চাহিদা ও পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় নামে-বেনামে ব্যক্তি-কোম্পানি তৈরি করছে মাস্ক এবং ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করছেন। সাধারণ মানুষ এসব মাস্ক পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আর ভাবছেন তিনি করোনা থেকে মুক্তি পেয়ে গেলেন। চলুন জেনে নিই, মাস্ক কত ধরনের, কোন মাস্ক কার জন্য এবং করোনা প্রতিরোধে মাস্ক কতটা কার্যকর।
মাস্কের প্রকারভেদ
- N95 রেসপাইরেটর বা মাস্ক
- সার্জিক্যাল মাস্ক
- কাপড়ের সাধারণ মাস্ক
N95 রেসপাইরেটর বা মাস্ক
N95 মাস্ক বায়ুবাহিত কণা ও দূষিত তরল থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ করে যাঁরা সংক্রামক রোগ বা করোনা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য N95 মাস্ক তৈরি। করোনাভাইরাসসহ (কোভিড-১৯) শ্বাসজনিত রোগ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য সাধারণ মানুষের N95 মাস্ক পরিধান করাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসি সুপারিশ করে না । সাধারণ মানুষের জন্য, N95 মাস্ক পরিধানের কোনো অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সুবিধা নেই এবং কোভিড-১৯ থেকে তাৎক্ষণিক খুব সুবিধা দেবে তা-ও নয়।
সার্জিক্যাল মাস্ক
সার্জিক্যাল মাস্কগুলো লুজ ফিটিং ডিসপোজেবল মাস্ক, যা মুখ ও নাকের মধ্যে বাধা তৈরি করার জন্য কাজ করে। অপারেশন থিয়েটার বা বিজ্ঞানাগারে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের জন্য এ জাতীয় মাস্ক সুপারিশ করা হয়। এ ধরনের মাস্ক ব্যবহার করা হয় যাতে তাঁর নাক ও মুখ থেকে জীবাণু বের হয়ে কন্টামিনেশন ঘটাতে না পারে। আলগা-ফিটিং থাকার কারণে সার্জিক্যাল মাস্কগুলো হাঁচি-কাশি থেকে বের হওয়া ছোট ছোট বায়ুবাহিত কণা বা জীবাণুকে আটকাতে পারে না। এগুলো পুনরায় ব্যবহার বা একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করা যাবে না। সুস্থ লোকের জন্য সার্জিক্যাল মাস্ক পরার পরামর্শ সিডিসি দেয় না।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের মাস্ক
এগুলোকে ডাস্ট বা ধূলি-মাস্ক বলা হয়। এ জাতীয় মাস্ক করোনাভাইরাস বা অন্য ক্ষুদ্র জীবাণু থেকে সুরক্ষা দিতে পারে না। এ জাতীয় মাস্ক বাতাসের ধূলিকণা থেকে হয়তো রক্ষা করতে সক্ষম, তবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের মাস্ক ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে এটির মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থেকে যায়। যাঁরা এ জাতীয় মাস্ক ব্যবহার করেন, তাঁরা নিয়মিত ও ঠিকভাবে পরিষ্কার করে তারপর ব্যবহার করবেন।
মাস্ক ব্যবহার কার জন্য প্রযোজ্য
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সিডিসি জানিয়েছে, সুস্থ লোক, যাঁরা অসুস্থ ব্যক্তির যত্ন নিচ্ছেন না, তাঁদের করোনা প্রতিরোধের জন্য মাস্ক পরার দরকার নেই । সংস্থাগুলোর মতে, নিম্মলিখিত লোকদের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত—
- সংক্রমণ আটকানোর জন্য কাশি ও শ্বাসকষ্ট বা কোভিড-১৯ আছে বা সন্দেহভাজন এমন লোক
- যারা এ জাতীয় রোগী পরিবহন, সেবা, চিকিৎসা অথবা তাদের কাছাকাছি কাজ করছেন
- স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ করে যাঁরা করোনা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন, তাঁদের N95 মাস্ক পরা উচিত
কিছু কিছু দেশ সাধারণ জনগণকে মাস্ক পরার ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন। যদি পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকে, তাহলে ব্যবহার করতে পারেন। তবে একটা বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন, মাস্ক পরে আপনি নিশ্চিন্তে ঘোরাফেরা করবেন না এবং ভাববেন না যে আপনি মুক্ত আছেন বা মুক্ত থাকবেন। ব্যাপারটি যেন এমন না হয়, আপনি অস্ত্র নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুরছেন শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য। কিন্তু শত্রু যখন আঘাত করল, তখন আপনার অস্ত্রটি কাজ করল না। তাই মাস্ক ব্যবহার করার চেয়ে খুব প্রয়োজন না হলে ঘরে থাকুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন, নিয়মিত আপনার হাতটি পরিষ্কার রাখুন। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লেখক : অধ্যাপক, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষক