ছুটে এলো লোকগুলো, ভেবেছিলেন সাহায্য এনেছি
সংবাদমাধ্যমে কাজ করি, তাই কিছুটা আবেগ-অনুভূতির ঊর্ধ্বে থাকতে হয়। চলতে হয় বাস্তবতার নিরিখে বিচার-বিশ্লেষণ করে। অনেক কঠিন মুহূর্তেও মনোবল ঠিক রেখে চলতে হয়। তবে সমাজের আর দশজনের মতো কখনো আবেগ আমাদেরও ছুঁয়ে যায়। এমন অনেক দৃশ্য চোখে পড়ে, যা আমাদের মনকেও নাড়িয়ে দেয়।
এই যেমন, করোনা আতঙ্কের এই বিশেষ সময়ে অফিসে থেকে বাসায় ফিরছিলাম। গতকাল বুধবার গাড়িতে মুগদা হাসপাতালের সামনে যেতেই একটা ব্যাপার চোখে পড়ল, বেশ কিছু মানুষ রাস্তায় অপেক্ষমাণ—চলন্ত গাড়ির দিকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলেন।
এ দুর্যোগের সময় রাত ১০টার দিকে এত নারী-পুরুষকে রাস্তায় অপেক্ষা করতে দেখে বুঝতে আর বাকি রইল না, তাঁরা কেন এখানে। দিনের বেলায় কারো কাছে কিছু চাইতে পারছেন না লজ্জায়, তাই রাতের অন্ধকারে অপেক্ষায়, যদি কেউ সদয় হয়—দুমুঠো চাল দিয়ে যায়। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে তা জানলাম।
এই দৃশ্যটা দেখে যে কারোই ভেতরটা নাড়িয়ে দেবে। কারণ, এরা ভিক্ষুক নন, দেখে মনে হলো খেটে খাওয়া মানুষ তাঁরা। তাঁরা না পারছেন চাইতে, না পারছেন বলতে। শুধু অপেক্ষায়, কারো সহানুভূতির—কারো দয়ার।
ছুটে চলল আমাদের গাড়ি। বাড়িতে নামাতে হবে আমাদের আরেক সহকর্মীকে। আমাদের গাড়ি থামল পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে। রাত তখন প্রায় সাড়ে ১০টা, গাড়ি থামামাত্রই ১০-১২ জন নারী দৌড়ে এসে দাঁড়ালেন আমাদের গাড়ির দরজার সামনে। তাঁদের বেশভুষা দেখে মনে হলো অসচ্ছল, খেটে খাওয়া মানুষ। চাহনিতে কিছুটা লজ্জা, কিছুটা সংকোচবোধ। কিছুই বলছে না, শুধু হাঁ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাদের গাড়ির সামনে।
কর্মহীন এই মানুষগুলো হয়তো ভেবেছিলেন, আমরা খাদ্য সহায়তা দিতে গিয়েছিলাম। পরে পরিচয় জানার পর চলে গেলেন তাঁরা।
অসহায় এই মানুষগুলো চলে গেছেন ঠিক, আমাদের ভেতরটা ভালোভাবে নাড়িয়ে দিয়ে গেছেন।
লেখক : সাংবাদিক