দেশের কল্যাণে নিরলস কাজ করছে এনটিভি
একুশে টেলিভিশনের শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে একুশে টেলিভিশন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর এনটিভির প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয়। ২০০৪ সালে এনটিভিতে মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগে জিএম হিসেবে যোগদান করি এবং পরে ২০০৯ সালে হেড অব এইচআর অ্যান্ড অ্যাডমিন নিযুক্ত হই।
শুরুতে এই বিভাগ অগোছালো ছিল। কাজে শৃঙ্খলা আনতে এইচআর সফটওয়্যার ডাটাবেস করা হয়। কোম্পানির স্বার্থে যেখানে নিরাপত্তা প্রয়োজন, সেখানে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা হয়। অগোছালো অবস্থা থেকে মানবসম্পদ বিভাগকে আধুনিকভাবে সাজাই।
কাজের সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখা, যাঁরা ভালো কাজ করেন, তাঁদের উৎসাহ-সাপোর্ট দেওয়া, খারাপটাকে তিরস্কার করা আমাদের বিভাগের অন্যতম কাজ। প্রতিটি বিভাগ যেন সুন্দর পরিবেশের মধ্য দিয়ে কাজটি সঠিকভাবে করতে পারে, তার পূর্ণ ব্যবস্থা করা আমাদের অন্যতম দায়িত্ব, যা আমরা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে চেষ্টা করছি।
আমরা শুরু থেকে যেটা করার চেষ্টা করেছি, সেটা হলো আমাদের প্রতিষ্ঠানটিকে সিকিউরড করা, কাজের পরিবেশ তৈরি করা এবং জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। বিশেষ করে আমাদের কর্মীদের ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীসহ সবকিছু ইন্স্যুরেন্সের আওতায় নিয়ে আসা। শুরু থেকে কর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা করা রয়েছে, যেন কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা পেতে পারেন। দুর্ঘটনায় কেউ প্রয়াত হলে পরিবার যেন বিপাকে না পড়ে, সে জন্য সবার জীবনবিমা করা হয়েছে। কর্মীদের চাকরি ছেড়ে যাওয়ার পর তাঁরা যেন বিপাকে না পড়েন, সে জন্য আমরা প্রভিডেন্ট ফান্ড তৈরি করেছি। এতে করে যাওয়ার সময় তিনি বড় অঙ্কের টাকা সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। আর ইলেকট্রনিক সামগ্রীর বিমা করার ফল আমরা পেয়েছি আগুন লাগার পর। সবকিছু গোছাতে আমাদের সহযোগিতা করেছে এনটিভির প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট।
আমাদের বড় সফলতা এনটিভি দর্শকনন্দিত হয়েছে। একটি টিভি চ্যানেলকে দর্শকপ্রিয়তা পেতে হলে সব বিভাগের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও মানসম্পন্ন কাজ প্রয়োজন হয়। আমরা সবাইকে সেই কাজ করার পরিবেশ দিতে পেরেছি। সবার আগে সঠিক খবর, নাটক, অনুষ্ঠান, রিয়েলিটি শো দর্শক পছন্দ করেছেন। আমাদের পরিবেশ ও মানের কারণে ২০১১ সালে আমরা আইএসও সনদ অর্জন করেছি। এটা আমাদের বড় অর্জন বা পরিচ্ছন্ন পরিবেশের স্বীকৃতি। শুধু দেশের ভেতরে নয়, দেশের বাইরেও আমাদের অবস্থান তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বড় অর্জন হলো, আমাদের টিমওয়ার্ক অনেক ভালো। সবার মধ্যে সুন্দর সমন্বয় রয়েছে। আমরা সব সময় বলতে পারি, এনটিভি আমাদের পরিবার।
পাঠক জানেন, আমাদের অফিসে আগুন লেগেছিল। সেটি ছিল আমাদের বড় বিপর্যয়। তখন আমি দেশের বাইরে ছিলাম। আগুনের খবর পেয়ে ৩টার ফ্লাইটে দেশে ফিরে সোজা অফিসে চলে আসি। আমার অবর্তমানে বিভাগের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (বর্তমানে সিনিয়র ম্যানেজার) আসাদুজ্জামান টিটু সব দায়িত্ব পালন করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সবাইকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছেন। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তখন সবখানে অন্ধকার হয়ে যায়। চারদিকে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, এমন অবস্থায় মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে সবাইকে নিয়ে ছাদে অবস্থান নেন টিটু। এমনকি সবাইকে নিচে নামিয়ে তারপর তিনি নিচে নামেন। বলতে গেলে একরকম আটকাই পড়েছিলেন টিটু। এটা আসলে আমাদের বিভাগের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে, যা টিটু জীবন বাজি রেখে পালন করার চেষ্টা করেছেন।
করোনার এই সময় সারা বিশ্বের মতো আমাদের এখানেও প্রভাব পড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে। সবগুলো ডিপার্টমেন্ট কাজের সঙ্গে সংগতি রেখে টিম করে কাজ করে যাচ্ছে, সবাইকে অফিসে আসতে হচ্ছে না। অফিসে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাওয়া-আসার জন্য আমরা সবাইকে গাড়ির সাপোর্ট দিচ্ছি, সেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাই যাওয়া-আসা করছেন। একেকটি মাইক্রোতে আমরা চারজন করে আনা-নেওয়া করছি। বড় গাড়ি হলে সেখানে ছয়জন করে যাওয়া-আসা করছে। গাড়িকে আমরা জীবাণুমুক্ত রাখছি। কেউ অসুস্থ হলে স্বাস্থ্যবিমা থেকে সাহায্য পাচ্ছেন। কর্মীদের মধ্যে নিম্ন আয়ের যাঁরা রয়েছেন, বিশেষ করে ড্রাইভার, তাঁরা দেখা যায় একেক রুমে কয়েকজন থাকেন। সে জন্য আমরা আমাদের তেজগাঁওয়ের স্টুডিওতে আইসোলেশনের জন্য কিছু রুম বানিয়েছি অ্যাটাচড বাথরুমসহ। করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তাঁদের সেখানে রাখছি। থাকা-খাওয়াসহ সার্বক্ষণিক দেখভালেরও ব্যবস্থা করেছি।
এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, যাঁরা সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে আবারও কাজে ফিরেছেন। আমরা হারিয়েছি আমাদের মোস্তফা কামাল সৈয়দের মতো গুণী মানুষকে। আশা করি, খুব তাড়াতাড়ি পুরো বিশ্ব করোনামুক্ত হবে, আমরা আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরব।
আমাদের সব বিভাগের কর্মীর সর্বোচ্চ মেধা ও পরিশ্রমের ফল আজকের এনটিভির অবস্থান। এ জন্য আমি ধন্যবাদ দিতে চাই আমাদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী স্যারকে। তিনি শুরু থেকেই আমাদের সবাইকে কাজের স্বাধীনতা দিয়েছেন, যা সবাই পজিটিভ ওয়েতে কাজে লাগিয়েছেন। তিনি সব সময় বলেন, সমাজ বা দেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করা যাবে না। আমরা দেশ গড়ায় ভূমিকা রাখব। ইনশাআল্লাহ, আমরা সবাই তা করার চেষ্টা করছি।
আগামী দিনে আমরা নিজেদের অবস্থান আরো দৃঢ় করতে চাই। বর্তমানে দেশে অনেক টিভি চ্যানেল রয়েছে, এর মধ্যে মানসম্পন্ন কাজ দিয়ে বরাবরের মতো শীর্ষস্থানটি মজবুত করতে চাই। এরই মধ্যে এনটিভির পাশাপাশি এনটিভি অনলাইন দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করছে, সেই সুনাম আমরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই।
লেখক : মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের প্রধান, এনটিভি