বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ও স্বস্তির পূর্বাভাস
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য বাংলাদেশের বহু শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখেন। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, তাঁদের মা-বাবাও স্বপ্ন দেখেন সন্তানেরা স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। সাধারণত, কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এ ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন জগন্নাথ, খুলনা এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে।
পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার খরচ তুলনামূলক কম হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যায়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা এতটাই চরম পর্যায়ে যে, এটিকে ‘ভর্তিযুদ্ধ’ বলা হয়ে থাকে। পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য শিক্ষার্থীরা এক শহর থেকে অন্য শহরে যায়। নতুন শহরে বা বিভাগে যাওয়া একদিকে ব্যয়বহুল, অপরদিকে শঙ্কারও। কারণ, দূরবর্তী স্থানে যাতায়াত ও সেখানে গিয়ে থাকা কষ্টকর ও ব্যয়সাপেক্ষ। শিক্ষার্থীর উদ্বেগ কমাতে বা সাহস জোগাতে বহু শিক্ষার্থীর সঙ্গে তাঁদের মা-বাবা বা আপনজনেরা সঙ্গী হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময়ে বাস ও ট্রেনের টিকেট পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। তা ছাড়া, নতুন জায়গায় আবাসনের সংকট তো আছেই। অনিরাপত্তা ও নতুন শহরে আবাসনের সংকটের কারণে বহু নারী শিক্ষার্থী নিজ জেলা বা বিভাগের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। ফলে তাঁরা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সাবজেক্টে পড়া থেকে বঞ্চিত হন।
করোনাকালে এই সমস্যা আরো তীব্রতর হবে, যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বরাবরের মতো নিজস্ব ক্যাম্পাসে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। তবে আশার কথা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দিয়েছে তারা দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে (এনটিভি অনলাইন, ২০২০, ২৩ নভেম্বর)। সিদ্ধান্তটি খুবই সময়োপযোগী এবং প্রশংসার দাবি রাখে। এ সিদ্ধান্তের ফলে রাজশাহীতে বসবাসরত কোনো শিক্ষার্থীকে ঢাকায় গিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে না। তিনি রাজশাহীতে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। অনুরূপভাবে যশোর জেলায় বসবারত শিক্ষার্থীকে ঢাকায় যেতে হবে না। যশোর জেলা খুলনা বিভাগের অধীনে। তাই তিনি খুলনায় অবস্থান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁকে পরীক্ষাবাবদ সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হলো না। এই ব্যবস্থা অভিভাবক ও শিক্ষার্থী উভয়কে স্বস্তি দিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যেমন রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর অনুরূপ ব্যবস্থার আয়োজন করলে আরো বহু শিক্ষার্থী উপকৃত হবেন। বলা বাহুল্য, বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি, তাই সেসব প্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিযোগীর সংখ্যাও বেশি। এই প্রতিযোগিতার কারণে শিক্ষার্থী ও মা-বাবা উদ্বিগ্ন থাকে। আগেই উল্লেখ করেছি, বিদ্যমান ব্যবস্থায় ভর্তি পরীক্ষা দিতে সময় ও অর্থের ব্যয় করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, রাজশাহীতে বসবাসরত একজন শিক্ষার্থী যদি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চান, তাহলে তাঁকে প্রতিটি স্থানে যেতে ও সেখানে অবস্থানের জন্য গড়ে আনুমানিক তিন হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। তাঁকে মোট নয় হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। এ ছাড়া আবেদনপত্রের ফি তো আছেই। গুচ্ছ পদ্ধতিতে যদি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে, তাহলে বহু শিক্ষার্থীর উদ্বেগ যেমন কমবে, তেমনি পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সাবজেক্টে পড়ার সুযোগও বাড়বে।
করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে দিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিজেদের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে এর ব্যবহার আরো বাড়বে বলে অনুমান করা যায়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতিতে বা অন্য কোনো সহজ প্রক্রিয়ায় ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটি এখন সময়ের দাবি
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়