শ্রমজীবী ও সাধারণের প্রত্যাশার বাজেট
প্রতিবছর বাজেট নিয়ে যেভাবে নানা বিশ্লেষণ, হিসাব-নিকাশ, আলোচনা-সমালোচনা চলে, তা এবার কিছুটা কম। কারণ, করোনার তাণ্ডবে এ বছরের পরিস্থিতি অন্য রকম। অন্য বছরের মতো এবারও বাজেট পেশের সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়, কোন কোন পণ্যের দাম বাড়বে আর কমবে কোনগুলোর। তবে বাজেট পেশের পর অন্য বছরগুলোতে বাজারে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল, সেটি এবার সেভাবে লক্ষ করা না গেলেও এ প্রভাব থেকে বাজার একেবারেই মুক্ত নয়। অন্যান্য বছরে বাজেট ঘোষণার পরপরই যেভাবে লক্ষণীয় মাত্রায় জিনিসের দাম বেড়ে গিয়েছিল, এবার সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।
অবশ্য বিচ্ছিন্ন অভিযোগের খবর রয়েছে যথেষ্ট। বিশেষ করে বাজেটে সিম ও রিম কার্ড সম্পর্কিত সব সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে কেউ যদি ১০০ টাকা ফোনে রিচার্জ করেন, তাহলে ৭৫ দশমিক ৩ টাকার সেবা নিতে পারবেন। বাকি ২৪ দশমিক ৯৭ টাকা যাবে কেটে নেবে সরকার। এদিকে বাজেট পাস হওয়ার আগেই বর্ধিত কর কর্তন শুরু হয়েছে বলে গণমাধ্যমসূত্রে জানলাম। মূলত ১১ জুন বিকেল ৩টায় সংসদে বাজেট উত্থাপন করা হয়। ১১ জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে বর্ধিত কলরেট চালু হয়েছে। বাজেট কার্যকর হওয়ার আগেই এমন ধরনের প্রভাব কোনোভাবেই কাঙ্ক্ষিত নয়।
সব সময় বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম কমা-বাড়ার গভীর সম্পর্ক লক্ষ করা গেলেও এবার আমাদের প্রত্যাশার মাত্রা ভিন্ন থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ, এবারের বাজেট কোনোভাবেই স্বাভাবিক বাজেট নয়। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, দেশের সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী, দোকানদারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, সে ব্যবস্থা করতে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট নেতিবাচক প্রবণতা শ্রমজীবী এবং সাধারণের ওপর প্রভাব ফেলছে।
অনেক ক্ষেত্রে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি, বাজেটে সরকার ট্যাক্স বাড়িয়েছে, এ অজুহাতে কিছু ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করছে। যে কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, এবারের বাজেটের অজুহাতে দাম বাড়ার প্রবণতা সরকারকে কঠোর হাতে রোধ করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণের জীবন-জীবিকার অবস্থা বিবেচনায় রেখে সরকারের পক্ষ থেকে মনিটরিং বাড়ানো যেতে পারে। বাজারে যেন কোনো ধরনের সিন্ডিকেট গড়ে উঠতে না পারে, সেদিকটাও সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে নজরে রাখা সময়ের দাবি।
প্রতিবছরই বাজেট ঘোষণার আগে সরকারের পক্ষ থেকে নিত্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে বাজারে যথাযথ ও কার্যকর তদারকির ব্যবস্থা রাখা দরকার, যাতে কেউ ইচ্ছা করলেই কৃত্রিম সংকট কিংবা দাম বাড়ানোর মতো অনৈতিক কাজ না করতে পারে। যেহেতু একবার দাম বেড়ে গেলে তা কমার ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে না, সেহেতু এ বিষয়ে কার্যকর তদারকি হলে সাধারণ জনগণকে জিম্মিদশা থেকে রক্ষা করা যায়। তা না হলে পরে জনগণকে এই বাড়তি মূল্যের চাপ বয়েই চলতে হয়। আর এটি কখনো উন্নয়নগামী রাষ্ট্রে কাম্য হতে পারে না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়