বোন ভাইকে আইসক্রিম খাওয়াবেন তো?
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আইভী কিংবা বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের চেয়ে মিডিয়ায় বেশি সরব ছিলেন নারায়ণগঞ্জের আরেক রাজনীতিবিদ শামীম ওসমান।
আইভীকে সমর্থন দিতে শামীম ওসমানকে গণভবনে ডেকে পাঠানো হয়। এর পর থেকে আইভীকে সমর্থন দিয়ে গেছেন জনসম্মুখে। নির্বাচনের দিন নৌকায় আইভীর পক্ষে ভোট দিয়ে মিডিয়ায় ব্যালট পেপার দেখিয়েছেন। যেন আইভি ভুল না বোঝে। সব ছাপিয়ে নির্বাচনের আগে করা তার একটি মন্তব্যের দিকে সবার নজর। নির্বাচনে জিতলে শামীম ওসমানকে আইভী আইসক্রিম খাওয়াবেন এমন আশা দেখেছিলেন তিনি। আইভীর নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী সাখাওয়াত হোসেন খানকে পরের দিন সকালে মিষ্টি খাওয়ানের পর এখন সবার নজর আইভী শামীম ওসমানকে কবে আইসক্রিম খাওয়াবেন।
গত ৯ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে এমপি শামীম ওসমান ভোটের পর আইভীর কাছ থেকে যে ‘শাস্তিস্বরূপ’ আইসক্রিম খাবেন এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন সেদিন তিনি আইভীকে নৌকা প্রতীক খচিত দুটি হাফসিল্কের শাড়ি দিলেও নির্বাচনী প্রচারণায় সে শাড়ি পরতে দেখা যায়নি আইভীকে। তবে কি আইভী এখনো শামীম ওসমানের প্রতি মনোকষ্টে আছেন? তবে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আইভী যখন দেখা করতে যান গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, আইভীকে জড়িয়ে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইভীর প্রশংসাও করেছেন তিনি।
সংগত কারণে আইভী এখন খুশি। এবারের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্বও করেছেন। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করা আইভী এখন আওয়ামী লীগের মনোনীত জনগণের মেয়র। ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি বিলুপ্ত পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন আইভী। ওই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নুরুল ইসলাম সরদার পরাজিত হলে তাঁর বাসায়ও মিষ্টি ও ফুল নিয়ে গিয়েছিলেন আইভী। তবে ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শামীম ওসমানকে হারালেও তাঁর বাসায় যাননি আইভী।
নারায়নগঞ্জের সিটি নির্বাচনে জয়ের পর বিরোধী প্রার্থীর বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দ্বিতীয় বারের মতো নারায়ণগঞ্জবাসীর নগর মাতা আইভী । সকালেই বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানের খানপুরের বাসায় গিয়ে নাস্তা করেন আইভী। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন মিষ্টি। দুজন আন্তরিকভাবে কথাও বলেছেন এ সময়। রাজনৈতিক শিষ্টাচার ঠিক এমনই হওয়া চাই। বলেছেন রাজনীতি বিজ্ঞরা। কিন্তু আরেকটি পর্ব এখনো বাকি রয়ে গেল। এখনো শামীম ওসমানের আইসক্রিম খাওয়াননি আইভী। ভাইয়ের আশার প্রতিফলন যদি দেখা যায় বোন ভাইকে ঠিকই আইসক্রিম খাওয়াইছেন। তাহলে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আসবে আন্তরিকতার ছাপ।
শামীম ওসমান আইভীর সাথে মিলে মিশে কাজ করতে চাইছেন; এটা যদি সফল হয় এখানে প্রকৃতপক্ষে উপকৃত হবে নারায়ণগঞ্জবাসী। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি তো বটেই দেশের রাজনীতি এটা একটা উদাহরণ হিসেবে থাকবে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় ভোট দেওয়ার সময়ও গণমাধ্যমকর্মীরা আইসক্রিম খাওয়ার বিষয়টি শামীম ওসমানের সামনে নিয়ে আসেন। তখন তিনি বলেন, এক ঘণ্টা পরই আইসক্রিম খাওয়ার পর্বটি শুরু হবে। হয়তো এখনো শামীম ওসমান আশা করেই আছেন তাঁর বোন তাঁকে আইসক্রিম খাওয়াবেন। এখন দেখার পালা বোন ভাইয়ের আশা পূরণ করেন কি না?
লেখক : শিক্ষার্থী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।