আবার মডেল-কন্যার আত্মহনন!
আবার মডেল-কন্যার আত্মহত্যা। এমন ঘটনা আমাদের দেশে নতুন নয়। এর আগে ২০১৬ সালের ২৪ মে সন্ধ্যা থেকেই সামাজিক যোগাযোগমধ্যম ফেসবুকের পাতা ভারী হয়ে যেতে থাকে হালের এক মডেলের আত্মহননের খবরে। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে মার্কেটিং বিভাগে কর্মরত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পাস করা আনুমানিক ২১ বছর বয়সের এই মডেল, যাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় রূপনগরের একটি ভাড়া বাসা থেকে। এবার আত্মহত্যার কথা জানা গেছে মডেল জ্যাকুলিন মিথিলার। তাঁর বাবার বরাত দিয়ে জানা যায়, জ্যাকুলিন মিথিলার ভালো নাম জয়া শীল। কয়েক মাস আগেই কোর্ট ম্যারেজ করেন তিনি। সূত্রে জানা যায়, ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আত্মহত্যা করেন। এর আগে তিনি ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন। তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, তা নিশ্চিত নয়। তাঁর বাবা মামলা করেছেন, চলছে তদন্তের কাজ। ঘটনার দিনই তাঁর লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জানা গেছে, এ দুই মডেলই আত্মহত্যার আগে ফেসবুকে জানিয়ে এ কাজে আগান।
বলা বাহুল্য, এসব মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে এ সিদ্ধান্ত একটি আইনি প্রক্রিয়া। তদন্ত সাপেক্ষে চূড়ান্ত হবে হত্যা, আত্মহত্যা না প্ররোচিত আত্মহত্যা।
এটা আমাদের সবারই জানা, মডেলিং জগতের মানুষের জীবনযাপন নিয়ে সাধারণ মানুষের বিস্ময়ের অন্ত থাকে না। এর পর আবার যদি ঘটে কারো আত্মহত্যার ঘটনা! অন্য পাঁচটা অপমৃত্যুর চেয়ে এ ঘটনা অবশ্য নতুন বিস্ময় সৃষ্টি করেছে।
আমার এ লেখায় অবশ্য দোষী, অপরাধী, শাস্তি, শাসনব্যবস্থা এসব কিছু নিয়েই আলোচনা করব না। শুধু নিজেকে নিজে হত্যা করা, কাম্য-মরণ এবং তার পরবর্তী সময়ে সাধারণের প্রতিক্রিয়া নিয়েই আলোচনা করব। আত্মহত্যা সমাজ থেকে নির্মূলই এ লেখার মুখ্য বিষয়। প্রসঙ্গত, এ ঘটনার বেশিরভাগ তথ্যই পাওয়া গেছে অনলাইনে।
তবে তাঁদের মনোবেদনা নিয়ে দুনিয়ার মায়া ছাড়তে হয়েছে, এ কথা সত্য। দুনিয়ার মায়া ছাড়তে হয়েছে বলতে এককথায়, বাধ্যই হয়েছে। আমরা যাঁরা সুস্থ মস্তিষ্কে এই লেখা পড়ছি, তাঁরা হয়তো ভাবতেই পারছি না, আত্মহত্যা করাটা কতটা কঠিন! জীবনযুদ্ধে সঞ্জীবিত সব শক্তি যখন একটা মানুষ হারিয়ে ফেলে, তারই ফলাফল ‘আত্মহত্যা’। আর এ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে মানুষকে আসলেই তিলে তিলে শেষ হয়ে যেতে হয়। হয়তো তাঁদের জীবনই তাঁকে বাধ্য করেছে!
আত্মহত্যাকারীরা তাঁদের সুইসাইড নোটে অনেক তথ্যই দিয়ে গেছেন। অবশ্য আইনরক্ষাকারী বাহিনী যেহেতু বিষয়টি আমলে নিয়েছে, তাই রাষ্ট্রই ক্রমান্বয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সে বিষয়ে অবশ্য কোনো জটিলতা নেই।
ফিরে আসতে হচ্ছে আবার কাম্য-মরণ প্রসঙ্গে।
বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। যেখানে দুই কোটির কাছাকাছি ব্যবহারকারী ১৮-২৪ বছর বয়সী। যার মধ্যে ২২ শতাংশ মেয়ে। কোনোভাবেই ভুলে গেলে চলবে না, এ দেশে ১৩ বছরেরও ব্যবহারকারী আছে, পরিসংখ্যান যা বলে। এই অনুপাতও কম নয়, ১৮ শতাংশ। কে জানে এর চেয়েও কম বয়সী ব্যবহারকারী আছে কি না! আমাদের পাশে থাকা মেয়েটি নিরাপদে আছে কি? কোন কারণে তার জীবন কি দুর্বিষহ হয়ে উঠছে? তার সঙ্গে এমন কি কিছু হচ্ছে, যাতে সে তার জীবনই শেষ করে ফেলতে বাধ্য হবে! এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সমাজে সবার বেঁচে থাকা সুনিশ্চিত করতে হবে। আর এ দায়িত্ব আমাদের সবার।
লেখক : প্রকৌশলী