আন্তর্জাতিক
কোরীয় উপদ্বীপে পরমাণু যুদ্ধের ডঙ্কা
কোরিয়া উপদ্বীপে শক্তির প্রদর্শনীতে লিপ্ত পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং স্বৈরতন্ত্রী উত্তর কোরিয়া। পৃথিবী শঙ্কিত হয়ে উঠেছে এক অসম পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক শক্তির বনেদি উত্তরাধিকারী। অপরদিকে উত্তর কোরিয়া হালনাগাদ পারমাণবিক শক্তির দাবিদার। দুটি দেশে রয়েছে একরকম অস্বাভাবিক নেতৃত্ব। একজন বিশ্ব জনমতের বিরুদ্ধে ভোটে বিজয়ী দাম্ভিকতার প্রতিনিধি। অপরজন ‘সমাজতান্ত্রিক রাজকীয়তা’র প্রতিভু। পরাশক্তি পরাক্রম দেখানোর প্রয়াসে নৌশক্তি পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়ার উপকূলে। উত্তর কোরীয় স্বৈরাচার প্রদর্শন করছে কুচকাওয়াজ, সামরিক সরঞ্জাম, ক্ষেপণাস্ত্র এবং পারমাণবিক সক্ষমতা। সব মিলিয়ে শক্তি প্রদর্শনে মত্ত কোরীয় উপদ্বীপ। যেকোনো সময়ে বেজে উঠতে পারে রণ দামামা।
কোরীয় উপদ্বীপের বিরোধ, সংঘর্ষ এবং শক্তির প্রদর্শনী অনেক পুরোনো ঘটনা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষে ১৯৫০ সালের ২৫ জুন থেকে এর সূচনা। গত ১৫ এপ্রিল উত্তর কোরিয়ার সমাজতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাতা কিং ইল সাংয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শক্তি প্রদর্শনীর আয়োজন করে উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ংয়ে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে ট্যাংক এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হয়। ওই সামরিক প্রদর্নীতে সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্যালাস্টিক মিসাইল প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়। বিশ্বের যেকোনো জায়গায় লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করার ক্ষমতা এই ক্ষেপণাস্ত্রের রয়েছে। এই মিসাইলের পাল্লা ১০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। আরো দুটো নতুন আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে পারমাণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বোমা এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া।
চীন, যে রাষ্ট্রটি দীর্ঘকাল ধরে উত্তর কোরিয়াকে সহায়তা দিয়ে আগলে রেখেছে, তারাও এখন আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না উত্তর কোরিয়াকে। উত্তর কোরিয়াকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শক্ত হুমকির পর পরই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে উত্তর কোরিয়া। এর দ্বারা উত্তর কোরীয় অস্বাভাবিক নেতৃত্ব বুঝিয়ে দেয় যে, মার্কিন নেতৃত্বকে তারা থোরাই কেয়ার করে । ইদানীং উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় উত্তর কোরিয়া। ক্ষেপণাস্ত্রটি জাপান সাগরে আঘাত হানে। এটি কেএন- ১৫ মডেলের মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র । জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া ওই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার নিন্দা জানায়। এর আগে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে দেশটিকে শায়েস্তা করার হুমকি দিয়ে কোরীয় উপদ্বীপে রণতরী মোতায়েন করা হয়। এই পাল্টাপাল্টি রণ সজ্জার আশঙ্কায় এ অঞ্চলে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা করে চীন। দেশটি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে, যেকোনো সময় যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে।
গোটা বিশ্বের মোড়ল একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ায় পারমাণবিক হামলা চালাবে এটাই অচিন্তনীয় বিষয়। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চিন্তা ভাবনা এবং কর্ম পদ্ধতি সম্পর্কে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। অপরদিকে সমাজতান্ত্রিক একনায়কত্বের উত্তরাধিকার নিয়ে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত কিম জং উনের নেতৃত্ব নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। ১৪ এপ্রিল চীনের পক্ষ থেকে যুদ্ধ লেগে যাওয়া সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। আর যুদ্ধ লেগে গেলে কোনো পক্ষই তাতে জয়ী হবে না বলে উল্লেখ করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে যেকোনো সময় সংঘাত দেখা দেবে। তিনি উত্তেজনাকর ও উসকানিমূলক হুমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্যও সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
মূলত উত্তর কোরিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর বার্তাগুলো থেকেই যুদ্ধের ইঙ্গিত পাচ্ছে চীন। এদিকে কোরীয় উপত্যকায় আরেকটি পারমাণু পরীক্ষার প্রস্তুতির জের ধরে কঠোর অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষেপণাস্ত্র সহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। জাপান সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর দ্বিপক্ষীয় বা বহুপাক্ষিক সমঝোতাকে অগ্রাহ্য করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে হুমকি দিয়েছিল এই বলে যে, উত্তর কোরিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য তারা একাই একশ। ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট বার্তায় বলেছেন যুক্তরাষ্ট্র একা ব্যবস্থা নিতে ভীত নয়। তিনি আরো বলেন, চীন সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নিলে ভালো। না হলে তাদের ছাড়াই আমরা সমস্যার সমাধান করব। ওয়াশিংটন উদ্বিগ্ন এই জন্য যে তারা আশঙ্কা করছে যে, কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্রসহ পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে।
সংবাদ সংস্থার খবরে প্রকাশ, নির্বাচনের সময় ঘোষিত ‘এক চীন’ নীতি থেকে সরে এসেছে ট্রাম্প প্রশাসন। কোরীয় সংকটের পটভূমিতে ট্রাম্প কথা বলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে যুদ্ধ প্রস্তুতির পাশাপাশি কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের চিন্তা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ পটভূমিতে আশঙ্কা করছে মার্কিন নেতৃত্ব অস্থির উত্তর কোরিয়া আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে। তবে উল্টো অভিযোগ করেছেন উত্তর কোরীয় উপপররাষ্ট্র মন্ত্রী, ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়ার প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব দেখাচ্ছে।
সেন্টার ফর আমেরিকান প্রোগ্রেসের সিনিয়র ফেলো এডাম মাউন্ট বলেন, ১৫ মে-এর সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শনীর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। তারা দেখিয়ে দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতেও হামলা চালাতে সক্ষম এবং সেটাই তাদের উদ্দেশ্য। ক্যালিফোর্নিায়ার জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রোলিফারেশন স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মেলিসা হ্যানহাস বলেন, ভূমি এবং যুদ্ধ বিমান থেকে উৎক্ষেপনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেছে উত্তর কোরিয়া। ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র কেএন-১৫ নামে পরিচিত। কেএন-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে গোপনে এবং সহজেই হামলা চালানো সম্ভব। উত্তর কোরিয়ায় হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি বড় অবিবেচকের কাজ করবেন। এমন হামলা হলে বেঘোরে মারা পড়বে লাখ লাখ মানুষ। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া আগুনের মহা সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হবে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো ধ্বংসের মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্রাণহাণির আশঙ্কা রয়েছে। দেশটির এক ডেমোক্রেটিক আইন প্রণেতার পাশাপাশি একই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। গত সপ্তাহে এসব তথ্য জানিয়েছে ডেইলি মেইল অনলাইন, হাফিংটন পোস্ট ও আটলান্টিক।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রাটিক আইন প্রণেতা ট্রেডলিও অভিযোগ করেন যে, সিরিয়ায় রাসায়নিক বোমা হামলার অভিযোগে ক্রুজ হামলার পরপর উত্তর কোরিয়ার অভিমুখে রণতরী কার্লভিনশন যাত্রা করায় গত কয়েকদিনে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ক্ষতির আশঙ্কা অনেক বেড়ে গেছে। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির লাগাম টানতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রণতরী পাঠিয়েছেন দেশটির জলসীমার কাছে। এর পরই চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যেকোনো সময় যুদ্ধ বাঁধার পরিস্থিতি ঘনিয়ে এসেছে। এমন হলে কোনো পক্ষই জয়ী হবে না। ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে এক টুইটারে লিও বলেন, এটা সিরিয়া নয়। উত্তর কোরিয়ার পরমাণু বোমা রয়েছে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর বৃষ্টির মতো বোমা ফেলার ক্ষমতা রাখে দেশটি। আপনি ভয়ঙ্কর তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন।
কোরীয় অঞ্চলে লাখ লাখ মানুষ মারা পড়বে। সিরিয়া হামলার প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, গত দুই দিনে সিরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর জন্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে ফেলেছেন। গত জানুয়ারিতেই ট্রাম্পের ভাবনাচিন্তা তাঁকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। সে সময় তিনি কংগ্রেসে একটি বিল উত্থাপন করেন। এ বিল ছিল ট্রাম্প যেন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া কখনো নিজ থেকে পরমাণু বোমা হামলার নির্দেশ দিতে না পারেন। জাতিসংঘের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের প্রচারক জন হল্লাম বলেন, উত্তর কোরিয়া যুদ্ধে হারবে এটা নিশ্চিত, তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হামলার চিন্তা থেকে সরে আসা।
কোরিয় উপদ্বীপে চলমান উত্তেজনা গোটা দূরপ্রাচ্য বা পূর্ব এশীয়াকেও করেছে আক্রান্ত। বৈশ্বিক রাজনৈতিক সমীকরণ অনুযায়ী উত্তেজনাপূর্ণ এক পক্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান। দক্ষিণে ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া মার্কিন পক্ষপুটে থাকায় ভারী দক্ষিণ কোরিয়া পক্ষ। অপরদিকে, উত্তর কোরিয়া ‘অ্যালোন ইন দি ওসান’। এই এলাকায় প্রধান শক্তি চীন। বিশ্ব রাজনীতিতে চীনের ভূমিকা ক্রমবর্ধমান। ইতিপূর্বে চীন ছিল উত্তর কোরিয়ার বিশ্বস্ত বন্ধু। কিন্তু, উত্তর কোরীয় নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভূমিকা যা অস্বাভাবিক কূটনৈতিক মহলে কথিত, তা চীনকে উত্তর কোরিয়া থেকে সমর্থন প্রত্যাহারে বাধ্য করে। বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধের ঘনঘটা আছে। আছে শান্তির জোরালো প্রয়াস। আজকের পারমাণবিক বিশ্বে, কেউই চায় না একটা যুদ্ধ বেঁধে যাক। বিশেষত, হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক যুদ্ধের যে নির্মমতা ও ভয়াবহতা পৃথিবী প্রত্যক্ষ করেছে- এর পুনরাবৃত্তি হোক শান্তিকামী মানুষ তা প্রত্যাশা করে না। তাই চীনের আবেদন ‘যুদ্ধ নয় শান্তি’। তাদের বার্তা ‘কেউ জিতবে না সমাগত পারমাণবিক যুদ্ধে’। তাই সংযমের আহ্বান সর্বত্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট যুদ্ধাংদেহী মনোভাব দেখালেও শেষ পর্যন্ত হয়তো তাকে সংযত হতে হবে। অপর দিকে, উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্বকে কেউ কেউ ইতিমধ্যে ‘অপ্রকৃতিস্থ’ বলে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং সেখান থেকে স্বস্তির সম্ভাবনা কম। চীনের অভিভাবকত্ব হারিয়ে তারা এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। ইরাকের ক্ষেত্রে যেমন রাসায়নিক অস্ত্রের অজুহাত দিয়ে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করা হয়েছে তেমনি ব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের কাছে চাইতে পারে। কিন্তু, তা হবে আবার একটি ভুলের পুনরাবৃত্তি। জাতিসংঘ আরো কঠিন অর্থনৈতিক অবরোধের কথা চিন্তা করছে বলে সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চাপ- যে করেই হোক উত্তর কোরীয় নেতৃত্বকে সংযত করতে হবে। উৎখাত বা গায়ের জোরে নেতৃত্বের পরিবর্তন যে কী ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে, ইরাক, লিবিয়া তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ।
বাংলা ভাষায় একটা প্রবাদ এ রকম- ‘পাপে পাপ আনে পুণ্যে আনে সুখ’। কোরীয় উপদ্বীপ প্রশ্নে প্রবাদ বাক্যটির প্রয়োগ এ রকম যে, ৫০ এর দশক থেকে পরাশক্তির সমীকরণে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছিল পরবর্তী বছরগুলোতে তা আরো অস্থিরতা ও সহিংসতা ছড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে তা আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে- মার্কিন অনিশ্চিত নেতৃত্ব এবং উত্তর কোরিয়ার অস্থির নেতৃত্বের কারণে বর্তমান সময়ে বিশ্বে সম্ভবত এটি সবচেয়ে উত্তপ্ত এলাকা। বিশ্লেষকরা কেউ কেউ এ ঘটনাকে ১৯৬২ সালের কিউবা-রুশ মিসাইল সংকটের সঙ্গে তুলনা করতে চাইছেন। সেই সময়ে বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাকে তিরোহিত করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলোকিত ব্যক্তিত্ব প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের কুশলী নেতা নিকেতা ক্রুশচেভের ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল। সে অবস্থার আশা না করলেও টানেলের অবশেষে আলোর রেখার মতো ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনা নেতা শি জিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। চীন বিরোধী বলে ট্রাম্প যে বাস্তবতা উপলব্ধি করেছেন সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দেওয়া যেতে পারে। অবশেষে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তির বার্তা আলোরমুখ দেখবে এটি সবার প্রত্যাশা।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়