আন্তর্জাতিক
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি সফর, অতঃপর
রাষ্ট্রসমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সামরিক সমীকরণ একটি প্রকৃষ্ট পন্থা। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এটি ‘যৌথ নিরাপত্তা’ (Collective Security) বলে অভিহিত। স্নায়ু যুদ্ধকালে এর ঘনঘটা লক্ষ করা যায়। তবে এখনো যে এর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি তা আবার প্রমাণিত হলো দূরপ্রাচ্যে কোরিয়া উপদ্বীপের বর্তমান সংঘাত থেকে। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের নিরাপত্তা শঙ্কা এবং তার সমর্থনে রাষ্ট্রসমূহের বর্তমান সমীকরণ যৌথ নিরাপত্তা প্রয়াসের আরেকটি বহমান উদাহরণ। সৌদি আরব তার নিরাপত্তা এবং স্থিতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর উপর এককভাবে নির্ভরশীল। সাম্প্রতিককালে দুটো ঘটনা এই সম্পর্কে চিড় ধরায়।
সৌদি রাজ্যতন্ত্রের পরম শত্রু বলে পরিগণিত ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্র পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির বিষয়ে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে যখন একটি সমঝোতায় উপনীত হয় তখন ওবামা প্রশাসন তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর সৌদি আরব অনেকটা ক্ষুণ্ণ হয়। দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো ১/১১ ঘটনাবলির জন্য সৌদি সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সিদ্ধান্ত। যদিও ওবামা প্রশাসন এ প্রস্তাবের বিপক্ষে ছিল তবুও সৌদি আরবকে তা তুষ্ট করেনি। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তখন ‘মুসলিম বিরোধিতা’ সত্ত্বেও সৌদি আরব ট্রাম্পকে আশীর্বাদ বলেই গ্রহণ করে। অভিনন্দনের উষ্ণতা এবং মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে বিধি নিষেধের স্বপক্ষে সৌদি মিত্রদের তাৎক্ষণিক সমর্থন এর প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হতে পারে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন সৌদি কর্তৃপক্ষ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার চেয়ে বেশি আড়ম্বরের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছে। শাহী আল ইমামা প্রসাদে বাদশাহ নিজে ট্রাম্পকে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানে ভূষিত করেন। এর বিনিময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট অত্যন্ত কঠিন ভাষায় ইরানকে আক্রমণ করেন। ইতিমধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক সমঝোতা চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছে। ইরান শিয়া জনশক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব বলয়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে—এ অভিযোগ অনেক পুরোনো। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ এখন সৌদি এবং ইরানের ‘প্রক্সি ওয়ারে’ পরিণত হয়েছে। উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামী সন্ত্রাস’ দমনে বরাবরই সৌদি আরবকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মনে করে।
ইরানের ক্রমশ ক্ষমতাবৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই সৌদি আরবকে উদ্বিগ্ন করে। দুই আঞ্চলিক শক্তির ঐতিহাসিক বিরোধ আরব-পারশিক, শিয়া-সুন্নি এবং প্রজাতন্ত্র বনাম রাজতন্ত্রের লড়াই—একটি বাস্তব সত্য। বছরখানেক আগে সৌদি আরবের পক্ষ থেকে আকস্মিকভাবেই এক রকম ইসলামি সামরিক জোটের ঘোষণা দেওয়া হয়। সম্ভবত পৌনঃপুনিক ‘হোমওয়ার্ক’ ব্যতিরেকেই ঘোষণাটি আসে। বাংলাদেশ সৌদি জনগণ এবং পবিত্র নগরীদ্বয়ের প্রতি আবেগের কারণে এবং পারিপার্শ্বিক প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভাব্য জোটের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন ঘোষণা করে। পরে অবশ্য তাদের দেশ ও বিদেশের বৈরী শক্তিকে বুঝেশুনে খানিকটা পিছু হটতে হয়। উভয় রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এখন বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিকতা পেতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব আহূত আরব-ইসলামিক-আমেরিকান শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বলা হয় যে, পবিত্র মক্কা ও মদিনার দুই মসজিদ নিরাপত্তা হুমকিতে পড়লে সহযোগিতার প্রয়োজনে সেনা পাঠাতে প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ। তবে সৌদি নেতৃত্বধীন জোটে সেনা না পাঠাতে বাংলাদেশের অবস্থান ‘না’ এর পক্ষে রয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়।
ত্রিপক্ষীয় এ র্শীষ সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আরব এবং গরিষ্ঠ ইসলামি দেশসমূহ শামিল রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্মেলনে প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এটা ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফর। এর মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক মুসলিম রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে মত বিনিময়ের সুযোগ পেলেন। বলা যেতে পারে সৌদি যুবরাজ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এক বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। সৌদিআরব এ সম্মেলনের মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছে যে, গোটা সুন্নি মুসলিম বিশ্ব তাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। ভারতীয় রাজনৈতিক ভাষ্যকার সৈয়দ নাকভী বলছেন- বিষয়টি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য সুযোগ এবং বিব্রতকরও বটে। তার কারণ, সেখানে তাকে এমন সব নেতৃত্ব এবং বিষয়ের মোকাবিলা করতে হবে যে সম্পর্কে তিনি ইতিপূর্বে কটুবাক্য উচ্চারণ করেছেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র ও নেতৃত্ব সম্পর্কে ডোনাল্ড ট্রাম্প উষ্মা প্রকাশ করেছেন অথচ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ হচ্ছেন সৌদি রাজতন্ত্রের বড় একজন সমর্থক। যে সম্মিলিত মুসলিম সামরিক বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে, পাকিস্তান তার নেতৃত্বে ও কর্তৃত্বে রয়েছে। আরও লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ সেই সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান হিসেবে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছেন।
জনাব নাকভী সৌদিরাজতন্ত্রের রাজনৈতিক আদর্শ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন। তিনি উল্লেখ করেন ‘ওয়াহাবিইজম’ হচ্ছে সৌদিআরবের অনুসৃত আদর্শ। এ আদর্শ কঠিনভাবে অনুসৃত হয় সৌদি শাসন ব্যবস্থায়। জনাব নাকভী অভিযোগ করেন, এ মতাদর্শ থেকেই চরমপন্থী ইসলামি গ্রুপগুলো সৃষ্টি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি সৌদি ধনকুবের উসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বাধীন আল-কায়েদার কথা উল্লেখ করেন। এ মতাদর্শের লোকেরা সারা পৃথিবীতে রাজনৈতিক ইসলাম প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টারত রয়েছে। এ সাদৃশ্য সত্ত্বেও সৌদি আরব, ইরানের বিপ্লবী আদর্শকে যেমন ভয় পায়, তেমনি ভয় করে মৌলবাদী আল-ইখওয়ানুল মুসলিমিন তথা ইসলামি ব্রাদারহুড পার্টিকে। সৌদি রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাকালে আল-ইখওয়ান সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করলেও যখন মুরসির নেতৃত্বে ব্রাদারহুড মিশরের ক্ষমতায় আসে তখন সৌদিরা এ উত্থানকে তাদের উত্তরাধিকারের জন্য বিপদজনক মনে করে। কারণ, আল-ইখওয়ান মনে করে, সৌদি রাজতন্ত্রে ইসলাম বিচ্যুতি ঘটেছে। তারা পাশ্চাত্যের অনুগমন করছে। জেনারেল আবুল ফাত্তাহ আল-সিসি যখন আল ইখওয়ানকে ক্ষমতাচ্যুত করেন তখন সৌদিরাজতন্ত্র দৃঢ়ভাবে এই সেনা প্রধানের পক্ষ অবলম্বন করে। সৌদি আরব সিসি সরকারকে ৮ বিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্য দেয়। আরব বিশ্ব এবং অন্যত্র তারা সিসি সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে।
নির্বাচন ও পরবর্তীকালে মুসলিম বিরোধী বক্তব্য এবং মুসলিম বিরোধী র্কাযক্রমে এ র্শীষ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের যোগদানে আন্তর্জাতিক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি করে। সম্মেলনটি মূলত সৌদি পররাষ্ট্রনীতির পরিপূরক হলেও এটির একটি ‘আরব-ইসলামিক-আমেরিকান’ অবয়ব দেয়া হয়েছে। এ শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ হিসেবে যে সব বিষয়ের উল্লেখ করা হয়- ১. উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় নতুন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা ২. সহনশীলতা ও সহাবস্থানের প্রসার ৩. নিরাপত্তা ও স্থিতিশিলতা জোরদার ৪. ফিলিস্তিনি সংকট সহ মধ্যপ্রচ্যের চলমান ভূ-রাজনৈতিক বিষয়াদি। শেষোক্ত এজেন্ডায় সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও ইসলামি স্টেটের সর্বশেষ পরিস্থিতি আলোচিত হয়েছে। লক্ষনীয় যে, সামরিক জোটের আবহ থেকে এ সম্মেলন বরং সহযোগিতার সমীকরন ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। এ কার্যক্রমকে সামনে রেখে একটি Think Tank এর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটির নাম দেয়া হয়েছে ‘Global Center for Combating Extremist Thought’। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন কেন্দ্রটি আরব আমেরিকান ও ইসলামি দেশগুলোর সহযোগিতার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কাজ করতে পারবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ শীর্ষ সম্মেলন মুসলিম বিশ্বে শিয়া-সুন্নি বিরোধকে আরও দৃশ্যমান করবে। উল্লেখ্য, ইরান, ইরাক, সিরায়া, লেবানন, ইয়েমেন ও পাকিস্তানে বিপুল শিয়া জনগোষ্ঠী রয়েছে। সৌদি আরব উপদ্বীপের অভ্যন্তরে তথা প্রভাব বলয়ের মধ্যে শিয়া জনসংখ্যাও কম নয়। বাহরাইনে এর ৭০ ভাগ জনসংখ্যা শিয়ামতাবলম্বী। ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় এসব এলাকায় ৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে শিয়া প্রভাব কাজ করছে। একইভাবে ইয়েমেনে হুথি জনগোষ্ঠী শিয়া মতাবলম্বী। সেখানের চলমান গৃহযুদ্ধে কথিত সুন্নি প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ মানসুর হাদী কার্যত রিয়াদ থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। সৌদি আরবের শিয়া ধর্মীয় নেতা শেখ নিমর আল নিমরকে ফাঁসি দেওয়ার পর সৌদি-ইরান তিক্ততা গুরুতরভাবে বৃদ্ধি পায়। পাকিস্তানের বেলুচিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক সময়ে ১০ জন ইরানি সৈন্যকে হত্যা করা হয়। ইরানের সেনাপ্রধান সেখানে সৌদি হাত দেখছেন। এভাবে সৌদি আরব যেমন সুন্নি স্বার্থকে বড় করে দেখছে তেমনি ইরান স্বাভাবিকভাবেই শিয়া স্বার্থের অনুকূলে কাজ করছে।
অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলন দৃশ্যমানভাবে মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত করার স্বপক্ষে কাজ করেছে। সেই সঙ্গে আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সহযোগিতার ভিত্তি তৈরি করতে সহায়ক হয়েছে। আপাতত হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাবের মূলতবী ঘটবে। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে যে খানিকটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল এ সম্মেলন তা অপনোদন করবে বলে আশা করা যায়। মুসলিম বিশ্বে সন্ত্রাস প্রশমনে এ সম্মেলন নৈতিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
এ সম্মেলনে ইসলামী বিশ্বের গরিষ্ঠ নেতাদের উপস্থিতি থাকলেও মূলত এটা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের সৌদি আরব সফর। সফরসূচিতে সৌদি রাজতন্ত্রের প্রাধান্য ছিল। এ সময় সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র তার এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় অস্ত্রচুক্তি সই করেছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে,দেশটির সঙ্গে তাদের মোট ৩৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার কোটি ডলার অস্ত্র বিক্রির চুক্তি। সৌদির সঙ্গে বৃহত্তম এ চুক্তির ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেকস টিলারসন বলেছেন ইরানের ক্ষতিকর প্রভাব রোখাই এ চুক্তির লক্ষ্য। নানা বিষয়ে নিজ দেশে চরম রাজনৈতিক চাপে পড়ার পর এই চুক্তি ট্রাম্পের জন্য বড় ধরনের সফলতা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য আরেকটি সফলতা এই যে তিনি ইসলাম সম্পর্কে তার কথিত ভ্রান্ত ধারণা দূর করার সুযোগ পেয়েছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সৌদি আরব সফর শেষে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন সফর করেন। ট্রাম্প সৌদি বিমানে করেই তেল আবিব পৌঁছান। বিগত ৭০ বছরে সৌদি বিমানের এটাই ছিল ইসরায়েলে প্রথম অবতরণ। সে যা হোক মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেখানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেন। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতার জন্য ‘প্রয়োজনীয় সব রকমের প্রচেষ্টার অঙ্গীকার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দৃশ্যত দুই পক্ষকে আরও কাছাকাছি এনে আস্থা বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়েছেন। তবে এর আগে তাঁর প্রশাসনের ঘোষিত একরাষ্ট্র অর্থাৎ শুধু ইসরায়েলকে সমর্থনের নীতি থেকে সরে আসেননি। উল্লেখ্য, দ্বি-রাষ্ট্রিক ব্যবস্থার সমর্থনে মার্কিন রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার রয়েছে। আরব বিশ্বের সঙ্গে ট্রাম্পের আসন পরীক্ষাটি ফিলিস্তিনি প্রশ্নে বোঝা যাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। যদিও ট্রাম্প বারবার করে বলছেন- শান্তির জন্য তিনি সম্ভাব্য সব কিছু করবেন। এতে আরব বিশ্ব নিশ্চিত হতে পারছে না। নব নির্বাচিত ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ট্রাম্পের ওপর আস্থা না রাখার জন্য আরব বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শেষ দিকে বেলজিয়াম, ভ্যাটিক্যান ও সিসিলিতে গেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিসিলিতে শিল্পোন্নত দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলন জি-৭ এ যোগদান করেন। এ সফরের মাঝখানে তিনি ম্যানচেস্টার ম্যাসাকারের খবর পান। এ হামলা চালানো হয় সন্ত্রাস দমনে তার আহ্বানের দুইদিনের মধ্যে। কোনো কোনো আন্তর্জাতিক ভাষ্যকার ম্যানচেস্টারের আত্মঘাতী হামলাকে ট্রাম্পের আহ্বানের উত্তর বলে গণ্য করছেন। বিষয়টি কাকতালীয়ও হতে পারে। কিন্তু, বাস্তবতা এই যে, মার্কিন মিত্রদেশ ব্রিটেন এ সময় আক্রান্ত হলো। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকগণ মনে করেন, চির অশান্ত মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা পাশ্চাত্য নেতৃত্বের কাছে দায়বদ্ধ। সেদিক দিয়ে আরব বিশ্ব সফর অবশেষে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইউরোপ সফর সম্পর্কিত ও সঙ্গতিপূর্ণ মনে হয় । বিশ্বের তাবৎ মানুষ আশা করে- সব বৈরিতা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও মধ্য প্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির জন্য বিশ্ব নেতারা একাত্ম হয়ে কাজ করবেন।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়