আন্তর্জাতিক
কাতারের কী দোষ?
পররাষ্ট্রনীতির নিয়ামক হচ্ছে কূটনীতি। নীতিগতভাবে কূটকৌশলের কোনো অনুমোদন না থাকলেও ব্যবহারিকভাবে এর প্রয়োগ প্রায় সর্বত্রই প্রতিফলিত হয়। একরকম আকস্মিকভাবে কাতার কূটনৈতিক বিপাকে পড়েছে। কাতারের স্বকীয়তা ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণে সার্বিক ক্ষমতা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। ক্ষমতার স্বার্থ এবং চাতুর্যে আঞ্চলিক শক্তির বৈরিতার শিকার হয়েছে দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কাতার নাগরিক স্বাধীনতা এবং অপেক্ষাকৃত উদারনৈতিক শাসন ব্যবস্থার জন্য স্বকীয়তার দাবিদার। কাতারের শাসকগোষ্ঠী রাজতান্ত্রিক ধারায় প্রতিষ্ঠিত। সে ক্ষেত্রে সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও বাহরাইনের মতো বাদশাহ, আমির-ওমরাহদের সঙ্গে কাতারের সখ্য থাকা স্বাভাবিক এবং তা রয়েছেও। কাতার উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদে (জিসিসি) সদস্য। মার্কিন তাঁবেদারির ক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে নেই। কাতারের মাটিতে রয়েছে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। ইসরায়েলের সঙ্গে রয়েছে তাদের সহযোগিতা। তাহলে গোল বাঁধল কোথায়?
পটভূমি
দৃশ্যত ঘটনার শুরু কাতারি আমির তামিম বিন হামাদ বিন আল-থানি কথিত একটি বিবৃতি। এই বিবৃতিতে আমির যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেন এবং ইরানকে সহায়তার প্রস্তাব দেন। পাশাপাশি হামাস ও মুসলিম ব্রাদারহুদের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে কাতারের ‘সুসম্পর্ক আছে’ বলেও উল্লেখ করেন। কাতারের তরফ থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে বলা হয়, কথিত বিবৃতিটি একটি প্রতারণার ফসল। এটি একটি সাইবার হামলাও বটে। কাতারের তদন্তকারীদের প্রতিবেদনে নিশ্চিত করা হয়, কাতার নিউজ এজেন্সির ওয়েবসাইটের একটি ইলেকট্রনিক গ্যাপকে কাজে লাগিয়ে একটি কারিগরি কৌশলে ওই হামলা চালানো হয়। এরই মধ্যে সিএনএন জানিয়েছে, রাশিয়ার হ্যাকাররা কাতারি বার্তা সংস্থার ওয়েবসাইটের ওই ভুয়া খবর ঢোকানোর কাজ করেছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ধারণা। এই বিবৃতির পর কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন সৌদি আরব ও মিসরসহ সাতটি দেশ। তাদের অভিযোগ, আইএস, আল-কায়েদাসহ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদীদের মদদ দিচ্ছে কাতার। এতে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নষ্ট হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কাতার বলেছে, তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ‘অন্যায্য’। ৫ জুন সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রথম ঘোষণা দেয় বাহরাইন, এরপর সৌদি আরব। পরে একে একে একই ধরনের ঘোষণা দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, লিবিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপদেশ মালদ্বীপ। দেশগুলো কাতারের সঙ্গে আকাশ, সমুদ্র ও স্থল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের দেশে অবস্থানরত কাতারের নাগরিকদের দেশ ছাড়ার জন্য ছয় সপ্তাহ সময় দিয়েছে। কাতার সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। বিপরীত ব্যবস্থা এবং কড়া বিবৃতিদানে তারা বিরত রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরব বিশ্ব সফরের পক্ষকাল পরেই এ ঘোষণাটি এলো। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ সফরের সময় আঞ্চলিক শক্তি সৌদি বৈরী ইরানের বিরুদ্ধে শক্ত বিষোদ্গার করা হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রাথমিক মুসলিমবিরোধী পদক্ষেপের বদলে রক্ষণশীল আরব দেশগুলোর প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন এসব দেশকে অতি উৎসাহী করে তোলে। তারই প্রকাশ ঘটে কাতারের বিরুদ্ধে এসব ব্যবস্থা নিতে। সৌদি আরব তার দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য বরাবরই ইরানকে দোষারোপ করে আসছে। এবার তারা কাতারকে জড়িয়ে অভিযোগ করছে যে, সৌদি পূর্বাঞ্চলীয় কাতিফ অঞ্চল এবং বাহরাইনে সক্রিয় ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসীদের ইরান-কাতার মদদ দিয়ে যাচ্ছে।
পূর্বকথা
ঘটনাটি আকস্মিকভাবে মনে হলেও কয়েক বছর ধরেই ধীরে ধীরে উত্তেজনার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। ২০১৪ সালে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে সৌদি আরব, বাহরাইন ও আরব আমিরাত কাতার থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। কয়েক মাস দীর্ঘায়িত এ সংকট কাতারের নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল। কাতারের দোহায় অবস্থিত স্বাধীন সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা সম্পর্কের অবনতির অন্যতম কারণ। মধ্যপ্রাচ্যের কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণমুখী এ প্রচারমাধ্যমটি শাসককুলের চক্ষুশূল হয়ে উঠেছে। সমালোচনার অভিযোগ তুলে দুই সপ্তাহ আগে আলজাজিরাসহ কাতারের সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ করে দেয় সৌদি আরব, মিসর, বাইরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এবারে এসব দেশ আলজাজিরাকে তাদের মাটি থেকে পাততাড়ি গোটাতে বলেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলেন, দৃশ্যমান অভিযোগ যাই থাক না কেন, আসল বিরোধের বিষয় হচ্ছে সৌদি আরব ও ইরানের আঞ্চলিক প্রাধান্যের দ্বন্দ্ব। কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা বেশির ভাগ দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো। এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত মিত্র বলে পরিচিত। কাতারও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী জোটের অংশীদার। তবে ইরাকের শিয়া নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, সেখানে আইএসকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে কাতার। এতসব অভিন্ন বিষয় সত্ত্বেও কাতারের নিজস্ব কৌশলের পররাষ্ট্রনীতি তাদের জন্য বিপাকের কারণ হয়েছে। এ রাজনৈতিক বিরোধের ফলে অর্থনৈতিক সংকটও কাতারকে কাবু করে ফেলছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের এয়ারলাইন্স ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজ ও ফ্লাই দুবাই কাতারের রাজধানী দোহা থেকে এবং দোহার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে এমন সব ফ্লাইট বাতিল হয়ে গেছে। এদিকে কাতার এয়ারওয়েজ সৌদি আরবের উদ্দেশে এর সব ফ্লাইট বাতিল করেছে। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি। তার দেশকে রাজনৈতিক খবরদারির আওতায় আনার জন্য এমনটি করা হয়েছে।’
মধ্যস্থতা
এসব বিরোধের মাঝখানেও মধ্যস্থতা এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান রয়েছে। কুয়েতের আমির ভ্রাতৃপ্রতিম দুদেশের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছেন। তুরস্কের এরদোয়ান সরকার কাতারের প্রতি তাদের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ঘোষণা করেছে। তুরস্ক কাতারের আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত করার জন্য সেনাবাহিনী প্রেরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। উল্লেখ্য, তুরস্কের সঙ্গে কাতারের প্রতিরক্ষা চুক্তি রয়েছে এবং সেখানে এর আগেই সহস্রাধিক তুর্কি সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। এরদোয়ান বলেছেন, কাতারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে এবং দেশটিকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে না। কাতারের সম্পর্ক ছিন্ন করা দেশগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কাতারকে একঘরে করা নিয়ে বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোকে ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। পরে অবশ্য সুর পাল্টে ট্রাম্প কাতারের কঠোর সমালোচনা করেন। অন্যদিকে, মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন কাতারের প্রশংসা করে বলেছে, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটির জন্য জায়গা দিয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রতি তাদের অঙ্গীকার পূরণ করেছে।
আলজাজিরা জানিয়েছে, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদিল আল-জোবায়ের কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য কয়েকটি শর্ত দিয়েছেন। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে—ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাস ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সমর্থন বন্ধ করা। উল্লেখ্য যে, হামাস হচ্ছে ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং আরব বিশ্বে তারাই প্রথম ব্যালট বাক্সের নির্বাচনে জিতেছে। ১০ বছর আগে এক যুদ্ধের পর ওই নির্বাচনের মাধ্যমে তারা গাজার ক্ষমতা দখল করে নেয়। আর মুসলিম ব্রাদারহুড মিসরের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল হলেও তাদের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেক মুসলিম দেশ তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সিরিয়ায় জঙ্গিদের অর্থায়নে কাতার, সৌদি আরব ও কুয়েতের অবদান থাকলেও মার্কিন চাপে সেটা বন্ধ করেছে। কিন্তু কাতার তা করেনি। এর উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশ ইসলামী কট্টরপন্থীদের সাহায্য করছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। এদিকে জার্মানি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওই বিরোধে সমদূরত্ব বজায় রাখার চিন্তা করছে। তাদের কাছে কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোর রক্ষণশীল আচরণ এবং কাতারের ইসলামী শক্তির প্রতি সমর্থন—কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়।
স্বকীয়তা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের সম্পর্কের উত্তেজনা অনেক দিনের। সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুদেশের মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু কাতারের মালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরা যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের খবর প্রচার করে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তুষ্টি আছে। এ ছাড়া আঞ্চলিক পর্যায়ে ইসলামী স্টেটের জঙ্গিদের প্রতি কাতারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের আরো অভিযোগ, কাতারের সন্ত্রাসবিরোধী আইন খুব কার্যকর নয়। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও মিসরের নিষিদ্ধ সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি কাতারের সমর্থনের বিষয়টি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। এসব ব্যাপারে কাতার একরকম খোলামেলা কূটনীতি বা ‘ওপেন ডিপ্লোম্যাসি’ অনুসরণ করে। মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামপন্থীদের কাতারের সমর্থন ২০১১ সালের ‘আরব বসন্ত’-এর সময় থেকেই স্পষ্ট। তারা মিসরের সূচিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের খবর সরাসরি প্রচার করে। আরব বিশ্বের যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, আলজাজিরা তা প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে কাতারের যুক্তি, তারা ইসলামপন্থী উগ্র সংগঠনগুলোকে সমর্থন করে না। কাতার মনে করে, স্বাভাবিক সংগঠনের গণতান্ত্রিক অধিকার বজায় থাকবে। অন্যদিকে, নিজেদের ক্ষমতার রজানীতির কারণে সৌদি আরব এবং অন্যান্য আরব দেশ এসব সংগঠনকে শক্তিশালী হতে দিতে নারাজ। তারা মনে করে, গণতন্ত্র তথা উদারনীতিক রাজনীতি তাদের অস্তিত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর সর্বত্রই স্বৈরাচারী শাসকরা গণমুখী রাজনীতি অনুমোদন করে না। কাতার যাতে এসব বিষয়ে বিরত থাকে, সে জন্য ২০১৪ সালে কাতারকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু কাতারের অভ্যন্তরীণ পররাষ্ট্রনীতিতে তাদের অনুরোধ প্রতিফলিত হয়নি। হামাদ বিন খলিফা আলথানির আমলে কাতার স্বতন্ত্র কিছু নীতি অবলম্বন করতে শুরু করে। যেমন তারা ইসরায়েল ও ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটায়। কাতার আঞ্চলিক সংগঠন উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) সর্বসম্মত কিছু সিদ্ধান্তে দ্বিমত জানায়। সৌদি আরব ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে রাখে। এ সময়ে তারা কাতারের নানা রকম চাপ দিয়ে তাদের স্বাধীনচেতা আচরণ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চালায়। তবে এ প্রচেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়। বিবিসি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, অতীতে কাতারের ওপর পার্শ্ব দেশগুলোর চাপ অগ্রাহ্য করলেও এখন পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দৃশ্যত কাতার একরকম একঘরে হয়ে পড়েছে। যদিও তুরস্ক তার পাশে রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে ইরান, কুয়েত ও পাকিস্তান ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। বিসিসি আরো মনে করে, কাতারের স্বকীয়তাপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির অবসান হলে এ অঞ্চলে সৌদি প্রভাব বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া ওই সব দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
আয়তনে ছোট কিন্তু গ্যাসসম্পদে খুবই সমৃদ্ধ কাতারের বিরুদ্ধে আরব বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর বিরোধের ফলাফল বিধিনিষেধের পরপরই তীব্রতরভাবে অনুভূতি হয়। সার্বিক যোগাযোগ বন্ধের কথা এবং কূটনীতিকদের স্বল্প সময়ে দেশত্যাগের অসৌজন্যমূলক আচরণ আন্তর্জাতিক মহলকে বিস্মিত করেছে। কাতারের রাজধানী দোহা বহু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংযোগ কেন্দ্র। বিধিনিষেধের ফলে দোহা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর একরকম বিরান হয়ে পড়েছে। কাতার সৌদি খাদ্য সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল একটি দেশ। দেশটির উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণ খাদ্যপণ্য সৌদি সীমান্ত দিয়ে পরিবহন করা হয়, যা এখন বন্ধ। আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহল ঘটনার আকস্মিকতা এবং তীব্রতায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। যে বিষয়টি কূটনীতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব ছিল, তা অযথায় বড় ও ব্যাপক করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব বিশ্ব এমনিতেই নানা সংঘাত ও সহিংসতায় পরিপূর্ণ। এ অবস্থায় এ ধরনের বিরোধ অনাকাঙ্ক্ষিত এবং দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক লোক সেখানে কর্মরত রয়েছে। গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে কাতারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তিও রয়েছে। অবরোধ পরিবেশে বাংলাদেশ ও কাতার—উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব শান্তিকামী মানুষ এই অচল অবস্থার অবসান চায়।
লেখক : প্রফেসর, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।