মার্কিন নাগরিকদের কেন অস্ত্র পরিহার করা দরকার?
‘দাঁড় করো এবং যুদ্ধ করো’ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশনের (এনআরএ) বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে এনআরএর সিইও ওয়েন লাপিয়ার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেই রয়েছে সন্ত্রাসী, আক্রমণকারী। রয়েছে মাদকচক্র, ছিনতাইকারী, জুয়াড়ি, ধর্ষক, নিন্দুক, শিক্ষার্থী হত্যাকারী, বিমানবন্দরের হত্যাকারী। তাই আমার প্রশ্ন, আপনাদের কি বিশ্বাস হয়, সরকার আপনাদের নিরাপত্তা দিতে পারবে? আমরা আমাদের পথে আছি... আর এ জন্যই এখন অনেক আমেরিকান বন্দুক ও গুলি কিনছে।’
ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অজুহাতে আগ্নেয়াস্ত্র সংরক্ষণে বৈধতা দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে এক কনসার্টে সম্প্রতি এক বন্দুকধারীর নির্বিচার গুলিতে ৫৮ জন খুন এবং আহত হয় অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকধারীর এমন গুলির এই ঘটনা ছিল বর্তমান বছরের ২৭৩তম। এ রকম নৃশংস ঘটনা ঘটার পরও কেন ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের বিদ্যমান আইন শিথিল করা হবে না, এ নিয়ে অনেক মার্কিন নাগরিকেরই মনে প্রশ্ন। তাদের ভয় আর লাপিয়ারের বক্তব্যের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আর এই সম্পর্কের পেছনে রয়েছে অস্ত্র নিজে এবং আইন, যা বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়ন্ত্রণের পেছনে কাজ করে দেশে প্রচলিত মিথ এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার সীমাবদ্ধতা। একটি জাতির গল্প যখন অস্ত্রের পক্ষের আধিপত্যকারী, ক্ষমতাবানদের হাতে নির্মিত তখন তারা সেখানকার যুক্তিবাদীদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
আর তাই অগ্নেয়াস্ত্র রাখার পক্ষে এনআরএ যে যুক্তি তুলে ধরে তা একদম গাজাখুরি। অধিকাংশ মানুষই তাদের ব্যক্তিগত বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যা করে। দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করবে, এই ভয়ের এটাই বেশি কাজ করে যে যাদের বাড়িতে বন্দুক আছে তারাই সেই বন্দুক দিয়ে খুন হতে পারে। যদি বন্দুক আমেরিকানদের সত্যিই নিরাপত্তা দিতে পারত, তাহলে আমেরিকা হতো পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। অথচ এখানে প্রতিদিন গড়ে একজন সাত বছরের শিশু কিংবা টিনেজার গুলিতে নিহত হয়। সপ্তাহে এক শিশু গুলিতে আহত হয়।
এসবের দায় খুব সহজেই এনআরএর ওপর চাপানো যায়। প্রতিদিন কতজন বন্দুক কিনছে তার কোনো হিসাব এনআরএর কাছে নেই। আমেরিকান সরকার কিংবা এনআরএ কেউ-ই বন্দুক-হত্যা কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা করতে তহবিল দেয় না। তারপরও এনআরএকে হেয়প্রতিপন্ন করা, কিংবা তাদের নিয়মনীতির ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরা যায় না। আমেরিকায় বন্দুক কেনা খুব সহজ এবং তা বহন করা ঝুঁকিপূর্ণ, এই মতের সঙ্গে একমত হয়ে এ বছর কংগ্রেস বন্দুক কেনার আইন কঠোর করার উচিত বলে সম্মত হয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে বলতে হয়, এনআরএর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চেয়ে সামাজিক প্রভাব অনেক বেশি।
আমেরিকানদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় আগ্নেয়াস্ত্র রাখা দরকার, এই মিথ অবশ্যই একপক্ষীয়। আমেরিকানদের মতো একটি জাতি সম্ভাব্য গণহত্যা ও দাসত্বের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কারণ বন্দুক তাদের চালিকাশক্তিতে রয়েছে। আমেরিকানরা প্রমাণ করে দিয়েছে, অন্যান্য ঘটনার মতো লাস ভেগাসের এই ভয়াবহ দৃশ্য একদিন দূর অতীত হবে এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষায় আগ্নেয়াস্ত্রের মিথ আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে।
আমেরিকায় বন্দুকের নতুন আইন দরকার। কিন্তু তার আগে আমেরিকানবাসীদের নিজেদের সম্পর্কে বন্দুকহীন একটি নতুন গল্প বলা শুরু করতে হবে এবং সেটা চাইতে হবে। আগ্নেয়াস্ত্রহীন আমেরিকার গল্প বলা শুরুর ওপরই নির্ভর করবে তাদের বিশ্বাসের যাত্রা।
দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে