আন্তজার্তিক
জুমা আউট, রামাফোসা ইন
সিরিল রামাফোসা। ছিলেন শ্রমিক নেতা। এরপর কর্মগুণে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। ক্ষমতাসীন দল এএনসির দায়িত্বও পেয়েছেন সম্প্রতি। আর সবশেষ তিনি এখন ম্যান্ডেলার দেশের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট রামাফোসার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে নিজ দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ঐক্য ফিরিয়ে আনাসহ দেশটির পুনর্গঠন ও কোটি মানুষের মৌলিক সেবার প্রত্যাশা পূরণ। পাশাপাশি দেশটির দুর্নীতির মাত্রা কমিয়ে আনতেও যথেষ্ট কাজ করতে হবে ৬৫ বছর বয়সী সিরিলকে।
নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, নতুন প্রজন্মের প্রতিভাবান নেতাদের একজন রামাফোসা। সে কথারই প্রমাণ হলো এবার। ক্ষমতাসীন এএনসিতে ম্যান্ডেলা-পরবর্তী নেতা হিসেবে ১৯৯৯ সালে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন রামাফোসা। তবে সে দফায় ব্যর্থ হয়ে ব্যবসায় জড়িয়ে পান সাফল্য। এক দশক অনুপস্থিত থাকার পর রাজনীতির মাঠে আবারও সক্রিয় হন রামাফোসা। ২০১২ সালে এএনসির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হন। ডেপুটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ২০১৪ সালে। সে সময় রামাফোসার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়ান জ্যাকব জুমা। এরপর গেল বছরের ডিসেম্বরে জুমার পছন্দের প্রার্থী এনকোসাজানা দিলামিনি জুমাকে পরাজিত করে দলীয় প্রধান নির্বাচিত হন এএনসির সম্মেলনে।
এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি, দিন শেষে জ্যাকব জুমাকে পদত্যাগ নয়তো বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে আস্থা ভোটের মুখোমুখি হওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছিল এএনসি। তবে ভোটাভুটির আগেই পদত্যাগ করেন জুমা। পরে মন্ত্রিপরিষদের ভোটে দক্ষিণ আফ্রিকার কাণ্ডারি নির্বাচিত হন সিরিল রামাফোসা।
২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে জ্যাকব জুমাকে পদত্যাগে বাধ্য করার একটি অন্যতম কারণ, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ধনী ব্যবসায়ী গুপ্ত পরিবারের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা। যদিও কোনো ধরনের অপকর্মের কথা অস্বীকার করে আসছেন জুমা ও গুপ্ত পরিবার উভয়েই।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসন বা নিপীড়নমূলক সরকারের কালো অধ্যায় না থাকলেও সমানভাবে রয়ে গেছে দারিদ্র্য ও বৈষম্য। এখনো বিদ্যুৎ ও স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত দেশটির অনেক মানুষ।
জুমাকে যে কেলেঙ্কারি নিয়ে সরে যেতে হলো, সেই দুর্নীতির অবস্থাও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সে জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর্থিক খাত। দেশটিতে বেকারত্বের হার এখন ২৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছর অর্থনীতি কিছুটা গতি পেলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে না সহসাই। দেশটির অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের সঙ্গে শিক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে রামাফোসাকে।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে, সবাইকে নেলসন ম্যান্ডেলার পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানান রামাফোসা। তাঁর ভাষণে প্রাধান্য পায় দুর্নীতি, দারিদ্র্য, লিঙ্গ সমতা ও বর্ণ বিভাজনের মতো ইস্যুগুলো।
প্রথম ভাষণে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কার্যকর প্রচেষ্টা নেওয়ার কথা জানান রামাফোসা। বিশেষ করে বেকার যুবকদের জন্য আগামী বছরের মধ্যে ১০ লাখ কাজের সুযোগ সৃষ্টির পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দূরে ঠেলে সবাইকে নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ড দিয়ে নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি আফ্রিকায় নতুন ভোর আনতে কাজ করে যাবেন আইনের ছাত্র রামাফোসা। দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন এই কাণ্ডারির জন্য অভিনন্দন ও শুভকামনা।
লেখক : বার্তাকক্ষ সম্পাদক, আরটিভি।