মিনা ট্র্যাজেডি
হজ ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি ও করণীয়
একটা সময় ছিল যখন মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পদব্রজে পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবে যেতেন। অবশ্য অনেক পরে মানুষ হজে যেতেন জাহাজে করে। দেড় থেকে দুই মাসের মতো সময় সৌদি আরবে থেকে আবার দেশে ফিরতেন। তখন আত্মীয়স্বজনের সে কি আনন্দ ছিল! দূর-দূরান্তের অনেক মানুষ নতুন হাজিদের দেখতে আসতেন। হাজি সাহেব সৌদি আরব থেকে জমজম কূপের পবিত্র পানি, খেজুর, তসবিহ, আতর, জায়নামাজ থেকে শুরু করে অনেক জিনিস নিয়ে আসতেন আর সেগুলো অল্প অল্প করে আত্মীয়স্বজনের মাঝে ভাগ করে দিতেন। জমজম কূপের পানি খাওয়ার আগে অনেকে মহান আল্লাহর কাছে মানত করতেন। কেউ হয়তো রোগ-শোক থেকে আরোগ্য লাভের আশায় কেউবা আবার মনের কোনে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে পূরণের বাসনায় জমজম কূপের পানির জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাককতেন। এখন হজ এবং বাংলাদেশ বিমানের ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনায় যে মানুষ দিনরাত অস্থির হয়ে বসে থাকেন কখন তাঁদের প্রিয়জন সুস্থ দেহে দেশে ফিরবেন। বিশেষ করে সৌদি সরকারের চরম অদক্ষতায় প্রতি বছর দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনকহারে!
আরব নিউজের তথ্য মতে, প্রতি বছর ওমরা ও হজের সময় সৌদি আরবে প্রায় ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। ২০১২ সালেও এই খাত থেকে আয় ছিল সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার যা দেশটির মোট জিডিপির ৩ শতাংশ।
হজের সময় যেসব দুর্ঘটনা নিয়মিত হয়
প্রতি বছর সৌদি আরবে হজ করতে গিয়ে হাজিরা যে সব দুর্ঘটনায় মারা যান তার মধ্যে : শয়তানকে পাথর ছোড়ার সময় হুড়াহুড়িতে, অনেক সময় তাবুতে আগুন লেগে, কখনো সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় অনেক হাজির। এমনকি সৌদি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষেও অনেকে হতাহত হন। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হাজি মারা যাওয়ার ঘটনা নিয়মিতই ঘটে পবিত্র নগরীতে। আর অতিরিক্ত গরমে মৃত্যু হয় অনেক হাজির। বেশি বয়সের হাজিরাও বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান প্রতি বছর।
হজের আলোচিত কিছু দুর্ঘটনা
১৯৭৫ সালে হজের সময় তাবুতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে নিহত হন ২০০ জন হাজি। ১৯৮৭ সালের ৩১ জুলাই মক্কায় স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে ইরানি হাজিদের সংঘর্ষে ৪০২ জন মারা যান; আহত হন ৬৪৯ জন
১৯৮৯ সালের ৯ জুলাইয়ে মক্কায় দুটি বোমা বিস্ফোরণে এক হাজি মারা যান আর আহত হন ১৬ জন। ১৯৯০ সালের ২ জানুয়ারি মক্কায় আল-মা’আইসিন টানেলে বায়ু চলাচল বন্ধ হয়ে মারা যান এক হাজার ৪২৬ জন; যাদের বেশির ভাগ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানি। ৬০০ গজ দীর্ঘ ও ১২ গজ প্রস্থ এ টানেলে বায়ু চলাচল বন্ধ হয়ে এত মানুষ মারা যায় ।১৯৯৭ সালে মিনায় তাবুতে আগুন লেগে পুড়ে মারা যান ৩৪০ জন আর আহত হন হাজার দেড়েক। ২০০৬ সালে মক্কার কাবা শরিফের কাছে আল-গাজা হোটেল ভেঙে পড়ে মারা যান ৭৬ জন এবং ওই ঘটনায় আহত হন ৬৪ জন। ২০১১ সালে মিনায় পদদলিত হয়ে মারা যান ৩৪৫ জন হাজি ।
এ বছর ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা এবং কিছু প্রশ্ন
অনেকেই অভিযোগ করে বলছেন, এ বছর মিনায় শয়তানকে কংকর বা ছোট পাথর মারতে গিয়ে হুড়াহুড়িতে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া হাজির সত্যিকারের সংখ্যা এখনো প্রকাশ করেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ। রাজতন্ত্রের মোড়কে থাকা দেশটির সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে মিনা ট্র্যাজেডিতে এ বছর মারা গেছেন এক হাজার ১০০ হাজি। আর এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯৩৪ জন। । তবে ইরানের হজ সংস্থা দাবি করেছেন নিহতের সংখ্যা দুই হাজারের মতো হবে যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ দাবি করে বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদের ছেলের হঠাৎ মিনায় উপস্থিতির খবরটি সত্য নয়।
বাংলাদেশে ফিরে অনেক হাজি জানিয়েছেন ২৪ সেপ্টেম্বরের করুণ ঘটনার কথা। তাদের অনেকের আত্মীয়স্বজন মারা গেছেন পদদলিত হয়ে। দেশে ফেরা হাজিরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মিনা দুর্ঘটনায় পদদলিত হয়ে অনেকে শেষ বারের মতো পানিও চেয়েছিলেন। তবে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সেবাকর্মী না থাকায় কিংবা অনেক ক্ষেত্রে থাকা সত্ত্বেও পানি না দেওয়ায় অনেকে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যান এক লাখের কিছু বেশি হাজি। সৌদি আরবে বাংলাদেশ কনসুলেটের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী মিনায় পদদলিত হয়ে ৭৯ (সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুযায়ী) জন হাজি মারা গেছেন। এখনো নিখোঁজ আছেন ১৪০ জন। আহত হয়ে মক্কা ও জেদ্দার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরো ৬৩ জন। এদিকে, নিহত কয়েকজন হাজির মরদেহ চিহ্নিত করে স্বজনদের মাধ্যমে মক্কাতেই দাফন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ হজ মিশন। বাকি মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছেন কনস্যুলেট ও মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনের কর্মকর্তারা।
হজ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত হতাহতের সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি সৌদি কর্তৃপক্ষ। তারা অবশ্য এখন বলছে— ‘মৃত্যুতে মানুষের হাত নেই।’
এদিকে, গেল ১১ সেপ্টেম্বর ক্রেন ছিঁড়ে নিহত হন ১০৭ জন আর আহত হন ২৩৮ জন হাজি। যেটি ছিল গত ২৫ বছরে হজের ইতিহাসে সবচে ভয়াবহ ঘটনা। এ ঘটনায় মারা যান আবুল কাশেম নামের এক বাংলাদেশি, যার বাড়ি চট্টগ্রামে।
এ বছর ইরানের ৪৬৪ হাজির মৃত্যুর ঘটনায় ভীষণ ক্ষেপেছে ও সৌদি আরবের নিকটবর্তী দেশ ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আলী খামেনি বলেছেন, ‘এ ঘটনার দায় অবশ্যই সৌদি সরকারকে নিতে হবে।’ মিনা ট্র্যাজেডির পর হজ কমিটির প্রধান প্রিন্স খালেদ আল ফয়সাল অবশ্য তাড়াহুড়ার জন্য আফ্রিকার হাজিদের দায়ী করেছেন।
শয়তানকে ‘প্রতীকী’ পাথর ছোড়ার সময় প্রতিবছর হাজিদের মারা যাওয়ার ঘটনাকে কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। এসব ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে সেজন্য সৌদি আরবকে যৌক্তিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
পবিত্র কাবা ও সংশ্লিষ্ট এলাকা মহান আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত। খানায়ে কাবার রক্ষক খোদ রাব্বুল আলামিন। হাজিরা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের মেহমান। পুরো হজের আনুষ্ঠানিকতায় সৃষ্টি কর্তার নির্দেশ ও নবী-রাসুলের অনুসরণ করা অপরিহার্য।
মুসলমানদের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে হজ
কাবা শরিফ পবিত্র জায়গা। এটি কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।হজ থেকে পাওয়া অর্থ মুসলিম দেশ বিশেষ করে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স বা ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মাঝে বণ্টন করে দেওয়া যেতে পারে। তাতে অন্তত ইনসাফ তৈরি হবে; বিশেষ করে গরিব ও প্রান্তিক দেশগুলো হজ থেকে উপার্জিত অর্থ পাবে। বর্তমান বিশ্বে মজুদ তেলের এক তৃতীয়াংশের অধিকারী দেশ সৌদি আরবকে হজ ব্যবস্থাপনায় আরো পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে হবে।
হজের সময় দুর্ঘটনা রোধে করণীয়
হজ ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক, বৈজ্ঞানিক, মানবিক ও সর্বজনীন করে তুলতে হলে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা হলো-
এক. কেবল যত সংখ্যক হাজি মক্কায় ও সংশ্লিষ্ট জায়গায় অবস্থান করতে পারবে প্রতিবছর সেই সংখ্যক ব্যক্তিকে হজের অনুমতি দিতে হবে।
দুই. হজ ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি সমাধানে বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বন করতে হবে।
তিন. প্রতীকী, স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে আগেভাগেই হাজিদের জানিয়ে করণীয় নির্ধারণ করে দিতে হবে।
চার. মাসলা-মাসায়েল সঠিকভাবে করতে ইসলামের নির্দেশনার ব্যাপারে ভালোভাবে জানাতে হবে।
পাঁচ. চলাচলের রাস্তায় আলাদা লেন করে দিতে হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত ‘এক্সিট পয়েন্ট’ নির্দেশিকা থাকতে হবে।
ছয়. নির্দিষ্ট দূরত্বে পর্যাপ্ত সংখ্যক ‘রাহাবার’, বা পথনির্দেশক এবং ‘স্বেচ্ছাসেবক’ রাখতে হবে।
সাত. একাধিক ভাষাজ্ঞান সম্পন্ন চৌকস ও প্রশিক্ষিত যুবকদের ‘স্বেচ্ছাসেবক’ হিসেবে বাছাই করতে হবে।
আট. হাজিদের চলাচলের সব পথ ট্রাফিক ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
নয়. অনেকে অস্বাভাবিক আচরণ করে। তাদের নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি রাখা দরকার।
দশ. মক্কায় টানেল ব্যবহারের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।
এগারো. কোন দেশ কত হাজি পাঠাবে সেটা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটিকে নির্ধারণ করতে হবে।
বারো. হজকে যেন মানুষ ভয় না পায়, আনন্দের সঙ্গে করার ব্যবস্থা করতে হবে।
তেরো. শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের স্থানটি তুলনামূলকভাবে বেশ ছোট। এটিকে আরো বড় ও প্রশস্ত করতে হবে। পাথর নিক্ষেপের পথটি কয়েক তলায় সম্প্রসারিত করা প্রয়োজন।
চৌদ্দ. শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ শেষে আসা ও যাওয়ার সময় হাজিদের মধ্যে ধাক্কার ঘটনা ঘটে। অনেক দুর্বল ও বয়স্ক হাজি একবার পড়ে গেলে আর উঠে দাঁড়াতে পারেন না। ফলে ওই জায়গায় পদপিষ্ট হয়ে করুণ মৃত্যু হয়। সুতরাং পাথর নিক্ষেপের জায়গা ওয়ানওয়ে করতে হবে।
পনেরো. জিলহজ মাসের ১০ তারিখে দিন কিংবা রাত যে সময়ই হোক না কেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেকোন সময়েই শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর মারা যায় তা ভালোভাবে প্রচার করা।
ষোল. মুজদালিফা থেকে জামারা এবং জামারা থেকে হারাম শরিফ পর্যন্ত যাতায়াতের পথে কাউকে বসতে দেওয়া যাবে না।
সতেরো. জামারাতের এক কিলোমিটার দূরত্বে থাকতে জনস্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে কঠোরভাবে। এলাকাজুড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। রাজ পরিবারের সদস্যরা হজ করতে গেলে সাধারণ হাজিদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আটারো. রাজ বা সৌদ পরিবারের সদস্যদের দিনের বেলা ভিড় কমে গেলে বা রাতের বেলায় শয়তানকে কংকর বা পাথর নিক্ষেপ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
উনিশ. মুজদালিফা থেকে ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে হাজিদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করতে হবে।
একুশ. মুসলিম বিশ্বের নামকরা দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যদের হজের মৌসুমে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
বাইশ. মক্কা, মুজদালিফা, আরাফাত, মিনাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় হাজিদের উদ্দেশে উপদেশমূলক বিভিন্ন বাণী আরবি, ইংরেজি, বাংলা, হিন্দি, উর্দু, ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় লিখতে হবে।
তেইশ. ওআইসিভুক্ত দেশের সদস্যদের নিয়ে কেন্দ্রীয় হজ ব্যবস্থাপনা কমিটি করতে হবে।
চব্বিশ. হজ ও হজের সময় ঘটে যাওয়া যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য প্রকাশ করতে হবে; কোনো তথ্য গোপন করা যাবে না।
ছাব্বিশ. জেদ্দা বিমানবন্দরে ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনায় ভোগান্তি কমিয়ে গতি আনতে হলে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থার অতিরিক্ত কড়াকড়ি শিথিল করতে হবে।
পচিশ. প্রতিটি দেশ থেকে আনুপাতিক হারে হাজিদের কোট নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। যাতে অতিরিক্ত হাজির কারণে মক্কা, মিনা, আরাফাত ময়দান, মুজদালিফাসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় মানুষের অত্যধিক চাপ না হয়।
ছাব্বিশ. আফ্রিকান হাজিরা অনেক সময় হজের আনুষ্ঠানিকতা চলাকালীন জোর-জুলুম করে এবং অন্য হাজিদের হজের আনুষ্ঠানিকতায় সুযোগ তৈরি করে দেয় না। এটি নিয়ন্ত্রণে আনতে আফ্রিকার দেশগুলোর হাজিদের বিশেষ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
সাতাশ. হাজরে আসওয়াদ পাথরে চুমু খাওয়া সুন্নত। কিন্তু এটি আদায় করতে গিয়ে অনেকে ধাক্কাধাক্কি করে যার ফলে এ সময়ও অনেক দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় সবাইকে চরম ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।
এসব পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়াও এ বছর মসজিদুল হারামে ক্রেন দুর্ঘটনা ও মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় হুড়াহুড়িতে পদদলিত হয়ে কোন কোন দেশের কতজন হাজি হতাহত হয়েছেন তার ছবিসহ তালিকা প্রকাশ করে ওয়েবসাইটে দিয়ে দিতে হবে। দুর্ঘটনায় হতাহতের শিকার হাজিদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্রেন ও মিনা ট্র্যাজেডির আন্তর্জাতিক তদন্ত করতে হবে।
পেশাদারত্বের অভাব
এ বছর হজ পালন করতে গিয়ে ক্রেন দুর্ঘটনা, পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া, বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যাওয়াদের ব্যাপারে সময়মতো তথ্য দিতে ব্যর্থ হয় সৌদি আরবে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট। এমনকি বাংলাদেশি হাজিদের ব্যাপারে তথ্য দিতে হেল্প ডেস্ক খোলা হলেও সেটির ফোন নম্বর দুটি সচল না থাকার অভিযোগে গণমাধ্যমেই খবর প্রচারিত হয়েছে। কনস্যুলেট অফিস সময় মেনে হতাহত বাংলাদেশিদের ব্যাপারে তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সবচে বাজে সার্ভিস বাংলাদেশ বিমানের। জেদ্দা বিমান বন্দরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। ফ্লাইট দেরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিমান সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে শুরু করে দেশে আসা পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে হাজিরা চরর্ম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন; এ খবর প্রতিদিনই শাহজালাল বিমানবন্দরে আগত হাজিরা দিচ্ছেন গণমাধ্যমকে। এমকি সৌদি আরবে এত কষ্ট পোহাতে হয়নি যা পোহাতে হয়েছে জেদ্দা থেকে আসার সময়। দুইদিন ও রাত টানা বিমানবন্দরে ফ্লাইটের জন্য বসে থাকতে হয়েছে বিভিন্ন বয়সী আল্লাহর মেহমানদের। এত কষ্ট সহ্য করেও তাঁরা নিজেদের দেশের বিমানে আসা-যাওয়া করছেন। বাংলাদেশ বিমানের জবাবদিহিতা না থাকায় বছরের পর বছর ধরে এই অনিয়ম সহ্য করতে হচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের।
লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি, আরটিভি