মনোনয়নের লড়াই
ট্রাম্প ঠেকাতে ‘মহাগুরুত্বপূর্ণ’ মঙ্গলবার
নির্বাচনী সমাবেশে হামলার পর দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাইমারিতে হেরেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফলে রিপাবলিকান দলে মনোনয়নের লড়াইয়ে তাঁর প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী টেড ক্রুজ ও মার্কো রুবিওর সামনে কিছুটা সুযোগ তৈরি হয়েছে।
রিপাবলিকান দলে তৃতীয় স্থানে থাকা রুবিও শনিবার ওয়াশিংটন ডিসি ককাসে জিতেছেন। আর ওমিংয়ে জিতেছেন ক্রুজ। তবে এখনো ট্রাম্পের পকেটেই সবচেয়ে বেশি ৪৬০ ডেলিগেট আছে। ক্রুজ এ পর্যন্ত জিতেছেন ৩৬৯ ডেলিগেটের সমর্থন। আর রুবিও পেয়েছেন ১৬৩ প্রতিনিধির সমর্থন। ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পেতে কমপক্ষে এক হাজার ২৩৭ ডেলিগেটের সমর্থন দরকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়ার ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে আজ মঙ্গলবারের ভোটাভুটি। এদিন ফ্লোরিডাসহ বেশকটি রাজ্যে ভোট হবে। রুবিওর স্টেট ফ্লোরিডায় আছে ৯৯ জন ডেলিগেট। প্রাইমারি লড়াইয়ে বিজয়ী প্রার্থীর ঘরে যোগ হয়ে যাবে এই ৯৯ ভোট। কারণ, ফ্লোরিডাসহ কয়েকটি স্টেটে প্রাইমারি বা ককাসে বিজয়ী প্রার্থী সে স্টেটের সব ডেলিগেট ভোট পেয়ে যান। অধিকাংশ স্টেটে অবশ্য প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ডেলিগেটও ভাগ হয়। রুবিওর স্টেট হলেও জনমত জরিপে ফ্লোরিডায় এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। উদারপন্থী রিপাবলিকানরা অবশ্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফ্লোরিডা ও ওহাইওর মতো ‘উইনার্স টেক অল’ স্টেটগুলোতে ট্রাম্পের জয় ঠেকানোর।
জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে ২০০০ সালে আল গোরের লড়াইয়ের সময় থেকে প্রতিটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই ফ্লোরিডা ছিল গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এবার রিপাবলিকান প্রাইমারিতেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই ফ্লোরিডা। তবে বুশের ছোট ভাই জেব বুশ অনেক আগেই বাছাই থেকে ছিটকে গেছেন। জেব একসময় ফ্লোরিডার গভর্নর ছিলেন। ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পুনর্ভোট গণনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। নিজে লড়াইয়ে টিকতে না পারলেও ট্রাম্প-রুবিও লড়াইয়ের ফলাফল নির্ধারণে জেব কিছুটা হলেও প্রভাবক হতে পারেন। ২০১২ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী মিট রমনি প্রকাশ্যে রুবিওকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
তবে টেক্সাস সিনেটর টেড ক্রুজ কোনোভাবেই রুবিওকে ছাড় দিতে রাজি নন। রিপাবলিকান ভোটারদের উদ্দেশে ক্রুজ বলেন, রুবিওকে ভোট দেওয়া নিট লস। কারণ, শেষ পর্যন্ত দলীয় প্রার্থী হবেন তিনি অথবা ট্রাম্প। ক্রুজ সমর্থকরা বলছেন, নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের স্বার্থেই রুবিওর মঙ্গলবারের লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। কারণ ট্রাম্পকে হারানোর ক্ষমতা শুধু ক্রুজেরই আছে। ফ্লোরিডায় নতুন করে ১০টি নির্বাচনী কার্যালয়ও খুলেছেন তিনি। দলীয় মনোনয়ন লড়াইয়ে, দ্বিতীয় স্থানে থাকা ক্রুজের সঙ্গে তৃতীয় স্থানে থাকা রুবিওর বিরোধ ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে।
এমনকি চতুর্থ স্থানে থাকা গভর্নর জন কাসিচের সমর্থনও পাননি রুবিও। কাসিচ সমর্থকরা প্রকাশ্যে বলছেন, ফ্লোরিডায় রুবিও জিততে পারবেন না। তবে ওহাইওতে জিতবেন কাসিচ।
এদিন ইলিনয়, মিজোরি, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওয়াইও আর নর্থ মেরিনা আইল্যান্ডে ভোটে আরো ৩৬৯ ডেলিগেটের ফয়সালা হবে। প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীদের বিরোধ যেখানে কিছুটা হলেও সুবিধা দিচ্ছে ট্রাম্পকে।
২৪টি রাজ্যের মধ্যে ১৫টিতে জিতে এগিয়ে থাকলেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমাবেশে হামলা, সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবৈষম্য ও উসকানিমূলক মন্তব্যের কারণে গত কদিন ধরে চাপে পড়ে গেছেন ট্রাম্প। কিন্তু কৌশলগত দুর্বলতার কারণে ভোটারদের সেই ক্ষোভকেও তেমন কাজে লাগাতে পারছেন না ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বীরা।
ফ্লোরিডা, ওয়াইও ও ইলিনয়ের মতো রাজ্যগুলোতে মঙ্গলবার ট্রাম্প জিতে গেলে, রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে তাঁর মনোনয়ন আটকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশন।