মার্কিন নির্বাচন
চাপের মুখে হিলারি ক্লিনটন
ওয়াশিংটনসহ তিনটি রাজ্যে ২৬ মার্চ বের্নি স্যান্ডার্সের জয় কি ডেমোক্রেট প্রাইমারিতে নতুন মাত্রা যোগ করল? এই সাফল্যের দুদিন পর ভারমন্ট সিনেটর যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বসবাসকারী ডেমোক্রেট সমর্থকদের গ্লোবাল প্রাইমারিতেও হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে দিলেন। বিশেষভাবে তিন রাজ্যে একই দিনে হিলারির বিরুদ্ধে স্যান্ডার্সের বিশাল জয় বিশ্লেষকদের নতুন চিন্তার খোরাক দিয়েছে।
মার্কিন নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, স্যান্ডার্স শুধু নিজের ডেলিগেট সংখ্যাই বাড়িয়ে নেননি, বরং হিলারি শিবিরকেও চাপে ফেলে দিয়েছেন। বিশেষত ওয়াশিংটনের মতো বড় রাজ্যে হিলারির চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি ভোট পাওয়া সহজ বিষয় নয়। আলসকাতেও ভালো ব্যবধানে জিতেছেন স্যান্ডার্স। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটন আর আলাস্কার দুটি বৈশিষ্ট লক্ষণীয়। প্রথমত, এই ককাসগুলো ছিল মূলত নন-ব্ল্যাক রাজ্যে। দ্বিতীয়ত স্যান্ডার্সকে সুবিধা দেওয়া এ ধরনের রাজ্যে আর খুব বেশি ভোট বাকি নেই।
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে দুই দফার লড়াইয়েই ককাসে হিলারির ফলাফল তেমন ভালো নয়। ২০০৮ সালে, প্রাইমারিতে তার প্রথম জয়টি এসেছিল মাত্র এক শতাংশ ভোটে। আর বারাক ওবামার কাছে ককাসে তার প্রথম পরাজয়টি ছিল ৩৪ শতাংশ ভোটে। এবার প্রাইমারিতে তাঁর প্রথম জয়টি ছিল ২৩ ভাগ ব্যবধানে। আর ককাসে প্রথম পরাজয়ের ব্যবধান ২৬।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমের মতে, কালো ভোটারের সংখ্যার ওপর হিলারির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। হাওয়াইয়ে ভোটারদের তিন ভাগ কালো। আলাস্কাতে কালো ভোটার চার শতাংশ। ওয়াশিংটনেও তাই। ২০০৮ বা ২০১৬ সালের ডেমোক্রেট প্রাইমারি এক্সিট পোলের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, যেসব রাজ্যে কালো ডেমোক্রেট ভোটারের সংখ্যা সাত ভাগের কম, সেসব রাজ্যে হিলারি হেরেছেন। ডেমোক্রেট লড়াইয়ে এখনো পাঁচটি ককাস বাকি। ভোট হবে বেশ কটি বড় রাজ্য প্রাইমারিতেও।
তবে ডেমোক্রেট লড়াইয়ের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে ১৯ এপ্রিল। এদিন হিলারির রাজ্যে নিউ ইয়র্কে ডেমোক্রেট প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে ডেলিগেট ভোটে এগিয়ে থাকা হিলারি বড় এই রাজ্যের ২৪৭ ভোট জিতে নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে চাইবেন। সেটা বুঝতে পেরেই নিউ ইয়র্কে জন্ম নেওয়া স্যান্ডার্স তাঁর আক্রমণের ধার বাড়িয়েছেন। কারণ ভারমন্ট সিনেটর জানেন, মনোনয়ন লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে নিউ ইয়র্কে হিলারিকে আটকাতেই হবে।
যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ থাকেন নিউইয়র্কে। তাঁদের বেশির ভাগ ডেমোক্রেট পার্টির সমর্থক। এই রাজ্যের সাবেক সিনেটর হিসেবে প্রবাসী বাঙালিদের অধিকাংশ ভোট হিলারির বাক্সে পড়বে। আফ্রিকান আমেরিকানদের ভোটও যাবে তাঁর পকেটে। বিশ্লেকরা বলছেন, আফ্রিকান আমেরিকানরা দলে দলে ভোট দিতে এলে হিলারির জয় নিশ্চিত। তবে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে ক্লিনটন শিবির প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লড়াইয়ের জন্য তৈরি।
সব দিক বিবেচনা করে স্যান্ডার্সের প্রচার টিম তাঁর জন্য কৌশল নির্ধারণ করছেন। হিলারির রাজ্যে এক ইঞ্চি জমিও বিনাযুদ্ধে ছেড়ে দেবে না, এমন জোর লড়াই দিতে চায় টিম স্যান্ডার্স। গভর্নর নির্বাচনের মতো সব নিউইয়র্কবাসীর কাছে তাঁরা তাঁদের এজেন্ডা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। ওয়াল স্ট্রিটের মতো প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানকে হিলারির বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে চায় টিম স্যান্ডার্স।
তবে ক্লিনটনের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান জন পডেস্টা বলেছেন, স্যান্ডার্স যা-ই বলুন না কেন, নিউইয়র্ক প্রাইমারিতে তাঁরাই জিতবেন। তিনি বলেন, গত ১৫ মার্চ ইলিনয়, ওহাইয়ো আর মিসৌরি- তিন রাজ্যের ভোটে হেরেছিলেন স্যান্ডার্স। এই তিন রাজ্যেও ভোটের আগে আগ্রাসী প্রচার চালিয়েছিলেন সিনেটর স্যান্ডার্স। হিলারি ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা গত কিছুদিন ধরে স্যান্ডার্সকে তেমনভাবে আক্রমণ করছেন না। জনের মতে, ডেলিগেট ভোটে বেশ এগিয়ে যাওয়ায় তাঁরা মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তাই এখন তাদের লক্ষ্য নভেম্বরের মূল ভোটে স্যান্ডার্স বা তাঁর সমর্থকদের সমর্থন নিশ্চিত করা।
আপাতত নীরব থাকা দুই জনপ্রিয় ডেমোক্রেট, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আর সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনের সমর্থন পাওয়ার বিষয়টিও মাথায় রাখছেন হিলারি শিবির। সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, ওবামার সমর্থন হিলারির দিকে। তবে মিসেস ক্লিনটনের ব্যাপারে ওয়ারেনের মনোভাব ততটা ভালো নয়। হিলারিবিরোধী শিবির একসময় তাঁকে প্রেসিডেন্ট লড়াইয়েও নামাতে চেয়েছিল। সেই পথে না হাঁটলেও হিলারির ব্যাপারে এ পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো মন্তব্য করেননি মার্কিন সিনেটের প্রভাবশালী সদস্য ওয়ারেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে ওবামার পাশাপাশি ওয়ারেন-স্যান্ডার্সের মতো সিনেটরদের সমর্থনও সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেটের দরকার।
টিম স্যান্ডার্সের সব নজর অবশ্য আপাতত মনোনয়ন লড়াইয়ে। নিউইয়র্ক প্রাইমারির আগে ৫ এপ্রিল উইসকনসিনে জিতে হিলারির ওপর আরো চাপ বাড়াতে চান স্যান্ডার্স। উইসকনসিনের আগে মিশিগান আর পশ্চিমে মিনোসোটা রাজ্যে পাওয়া জয় থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজছে সিনেটর শিবির।
পাশাপাশি নিউইয়র্ক প্রাইমারির আগে হিলারির সঙ্গে আরেকবার বিতর্কে অংশ নিতে চান স্যান্ডার্স। টিম হিলারি অবশ্য এ ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহী নয়। গ্লোবাল প্রাইমারিতে পাওয়া ৬৯ শতাংশ ভোট দিয়েও বার্তা দিতে চাইছেন স্যান্ডার্স। ৩৮টি দেশে বসবাসকারী মার্কিন নাগরিকদের মাত্র ৩১ ভাগ হিলারির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
লেখক : বার্তা সম্পাদক, একুশে টেলিভিশন।