আন্তর্জাতিক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও ট্রাম্পের ট্রাম্প কার্ড
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গতভাবেই এর কর্ণধার পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিমান ব্যক্তি। সাংবিধানিকভাবে এবং বাস্তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সব ক্ষমতা ধারণ ও প্রয়োগ করেন। বর্তমান পৃথিবীতে যেসব দেশে সাংবিধানিক গণতন্ত্র কায়েম রয়েছে তাদের মধ্যে সর্বাধিক শক্তিশালী ও মর্যাদাপূর্ণ পদাধিকারী হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দেশের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। বর্তমানে কার্যক্ষেত্রে সময়ান্তরে মার্কিন রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব সংবিধানে বিন্যস্ত ক্ষমতার পরিধিকে অতিক্রম করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি হলো সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী। এ কারণে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে তিনি ‘রাজকীয় রাষ্ট্রপতি’ বলে (Royal Presidency) অভিহিত হচ্ছেন। তিনি রাজার মতো সম্মান মর্যাদা ভোগ করেন এবং কার্যত এককভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। তাই রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ব্রুগান বলেন, The position of the presidency of the United States is double. He is the formal head of the nation; he is also the affective head of the executive.” রাষ্ট্রপতি পদের এই দ্বিবিধ তাৎপর্যের জন্য এবং সর্বময় ক্ষমতা বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা এখন প্রতিষ্ঠানিকতা অর্জন করেছে।
বর্তমান পৃথিবীতে একক বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আবির্ভাব হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন শুধু মার্কিন জনগণ নয়, সারা পৃথিবীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। গোটা পৃথিবীর শান্তি, স্থিতি এবং অর্থনীতি- পরাশক্তি নির্ভর হওয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের দলীয় সিদ্ধান্ত, পারিপার্শ্বিকতা এবং ব্যক্তিগত মনোভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। বিশেষ করে স্নায়ু যুদ্ধের অবসানে ১৯৮৯-২০১৫ সাল পর্যন্ত পুরো সময়ে বিষয়টি বিশেষভাবে অনুভূত হয়েছে। ২০১৫ সালে কর্তৃত্ববাদী পুতিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত সম্প্রসারণবাদ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারকরণের প্রয়াস থেকে দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। অপরদিকে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে চীনের উত্থান মার্কিন বলয়কে চ্যালেঞ্জ করলেও আরো অনেক বছর পৃথিবীকে মার্কিন কর্তৃত্ব অনুভব করতে হবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। সেই কারণে আজও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পৃথিবীর মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সতত সত্য এই যে, যে দল বা ব্যক্তিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণধার হিসেবে অভিষিক্ত হোক না কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক নীতিতে পরিবর্তন খুব কমই আশা করা যায়। তার কারণ, জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে তাদের জাতীয় ঐকমত্য (National Consensus) রয়েছে, যেটি আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে খুবই বিরল। বারাক ওবামা যখন একমাত্র আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক হন তখন এশিয়া-আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকায় একটি আশাবাদের সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান আশা করেছিল ভুক্তভোগী জনগণ। ওবামার কায়রো ঘোষণায় কিছু কিছু পোশাকী কথাবর্তা শোনা গিয়েছিল কিন্তু, দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রেসিডেন্ট হতে গিয়ে ইহুদি লবির কাছে তাঁকে পরাজয় বরণ করতে হয়। যাই হোক এতে এটা প্রমাণিত হয় যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ ক্ষমতার মালিক হলেও তিনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না। তাঁকে অনেক স্বার্থগোষ্ঠী এবং বিবিধ সমীকরণে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন শক্তিধর রাষ্ট্র প্রধানের নির্বাচনও শক্তপোক্ত। সম্ভবত পৃথিবীতে এমন জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়সাধ্য নির্বাচন বিরল। আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থার মতো এই নির্বাচন ব্যবস্থা সহজ নয়। অনেক দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সরাসরি জনগণের ভোটে নির্ধারিত হয়। আবার সংসদীয় ব্যবস্থায় এলাকাভিত্তিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন সরাসরি জনগণের ভোটে অনুষ্ঠিত হয় না। সংবিধান অনুসারে মার্কিন রাষ্ট্রপতি একটি নির্বাচকমন্ডলী (Electoral college) দ্বারা মনোনীত হন। এই নির্বাচকমন্ডলী গঠিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যের নাগরিকদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে। প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। প্রত্যেক অঙ্গরাজ্য থেকে মার্কিন জাতীয় সংসদ : কংগ্রেসের যতসংখ্যক সদস্য নির্বাচিত হন, সমসংখ্যক সদস্যকে অঙ্গরাজ্যের নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচন করা হয়। উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংসদ দুই ভাগে বিভক্ত- প্রতিনিধিসভা (House of Representatives) এবং সিনেট (Senate)| । উভয় কক্ষকে বলা হয় কংগ্রেস। এভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের যে আলাদা আলাদা নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হয় তার মোট সংখ্যা ৫৩৫। এখন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্র শাসিত ওয়াশিংটন ডিসির তিনজন সদস্য নিয়ে নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছ ৫৩৮। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে যদি এই নির্বাচক সংস্থার ২৭০টি ভোট পান তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। রাষ্ট্রপতির মেয়াদকাল চার বছর। শেষ বছরে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পর প্রথম মঙ্গলবার নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোট নেওয়া হয়। তারপর ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় বুধবারের পর প্রথম সোমবারে নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরা নিজ নিজ রাজ্যে ভোট দেন। ভোট দান শেষ হলে প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের ভোট বাক্স সিল করে রাজধানী ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়। পরের বছর ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের সামনে ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে যিনি নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন তিনিই রাষ্ট্রপ্রতি নির্বাচিত হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন পদ্ধতিটি পাকিস্তানের আইয়ুব খান প্রবর্তিত ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ (Basic Democracy) ব্যবস্থার অনুরূপ। সম্ভবত আইয়ুব খান মার্কিন নির্বাচন পদ্ধতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকবেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জটিলতা আছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগে প্রার্থীদেরও অনুরূপ কঠিন পথ অতিক্রম করতে হয়। আমাদের দেশের মতো দলীয় প্রধানরা দলের প্রতিনিধি বা রাষ্ট্রপতি প্রার্থী মনোনয়ন করেন না । কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রপতি প্রার্থীদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। মনোনয়ন দান করে দলের কর্মীরা। আমাদের দেশের কাউন্সিলররা যেমন। প্রতিটি স্টেটে প্রতিটি দলের সুনির্দিষ্ট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই সব অধিবেশনে দলীয় প্রার্থীরা তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। দলীয় ডেলিগেটরা এসব সভায় প্রার্থীর বক্তব্য, কর্মসূচি ও অভিজ্ঞতার আলোকে তাঁকে মূল্যায়ন করেন। এভাবে একেক স্টেটে একেক জন প্রার্থীর জনপ্রিয়তার রীতিমতো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অবশেষে চূড়ান্ত বিচারে অর্থাৎ পার্টির জাতীয় কনভেনশনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হয়। একটি মজার কথা- এত যে দলবাজি- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে কিন্তু দলীয় নির্বাচনের কোনো বিধান নেই। শতবর্ষ ধরে রাজনৈতিক দলগুলো অনুসৃত কার্যক্রম এবং ঐতিহ্যের আলোকে এই ব্যবস্থা এখন প্রতিষ্ঠানিকতা অর্জন করেছে।
অনেকে মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দল ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যাপারে পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি কার্যত প্রত্যক্ষ নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত হন। আবার স্টেট ভিত্তিক নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরাও দলীয় ভিত্তিকে নির্বাচিত হন এবং দলীয় প্রার্থীকেই সমর্থন করতে তাঁরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই নির্বাচকমন্ডলী গঠিত হওয়ার পরই প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা সুস্পষ্টরূপে বোঝা যায়। মার্কিন নাগরিকরা যখন নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচনে ভোট দেন তখনই বোঝা যায় প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তাঁরা কোন প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন।
আগামী ৮ নভেম্বর, ২০১৬ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এটা হবে ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এতে গতানুগতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে প্রধান দু’টি দল- ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান পার্টি। আরো অনেক দল ও ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যুগ যুগ ধরে দ্বিদলীয় ব্যবস্থা (Bi-party system) প্রতিষ্ঠিত থাকায় অন্যদের কেউ গণনায় ধরছে না। এবারের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন হিলারি ক্লিনটন। নির্বাচিত হলে তিনিই হবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। ইতিপূর্বে দ-একজন নারী প্রার্থী থাকলেও তাঁরা সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেখানে হিলারি ক্লিনটন ইতিমধ্যেই প্রাইমারি বা ককাস নির্বাচনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছেন। ডেমোক্রেটিক দলে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। এখন চলছে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সর্বশেষ হিসাব মোতাবেক হিলারি এখন স্যান্ডার্সের নাগালের বাইরে। জুলাই মাসে অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রীয় দলীয় কনভেনশনে তাঁর মনোনয়ন সম্ভাবনা অনেক বেশি উজ্জ্বল। নির্বাচনী মেনিফেস্টো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্যান্ডার্সের বক্তব্য তরুণদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। তিনি একটি ‘রাজনৈতিক বিপ্লব’-এর (Political Revolution) কথা বলছেন। তাঁর নির্বাচনী ঘোষণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চিরাচরিত পররাষ্ট্রনীতির ব্যতিক্রম রয়েছে। তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের ব্যাপারে নমনীয় কথাবার্তা বলছেন। নতুন অভিবাসীদের ব্যাপারেও স্যান্ডার্স সহানুভূতিশীল। বাংলাদেশ উদ্ভূত মার্কিন নাগরিকরা স্যান্ডার্সকেই সমর্থন করছেন বলে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে।
অপরদিকে এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী টেক্সাসের সিনেটর ট্রেড ক্রুজ ও ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, টিভি ব্যক্তিত্ব, লেখক এবং ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান ও প্রেসিডেন্ট। তাঁর উল্লেখযোগ্য বিজনেসগুলো হচ্ছে- রিয়েল এস্টেট, ক্যাসিনো ব্যবসা, গল্ফ কোর্স, হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসা। তিনি দৃষ্টিভঙ্গিতে কঠোর রক্ষণশীল। প্রাথমিকভাবে তিনি অবৈধ অভিবাসীবিরোধী বক্তব্য দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি মুক্তবাজার নীতির বিরোধী। তিনি অবৈধ গর্ভপাতের বিরোধী। সাম্প্রতিককালে কালে তিনি ইহুদি লবি এবং প্রতিক্রিয়াশীল আমেরিকানদের সমর্থন লাভ করছেন- মুসলিমবিরোধী বক্তব্য দিয়ে। তিনি মুসলমানদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধকরণের কথা বলেন। তিনি আরো বলেন- মার্কিন নিরাপত্তার জন্য মুসলমানরা হুমকি স্বরূপ। টেলিভিশনে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেই সম্ভবত মুসলমানরা আইএসের বিরুদ্ধে লড়বেন। মুসলমানদের ভাবতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে আইএস সমস্যার সমাধান করতে হবে। ডোনাল্ডের বক্তব্য ও ব্যক্তিত্ব মার্কিন জনগণকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি তাঁর শেষ ট্রাম্প কার্ড হিসেবে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানোর পথ বেছে নেন। যেকোনো সমাজে চরমপন্থী বক্তব্যের প্রতি জনগণের একাংশের সমর্থন থাকে।
মার্কিন সমাজে সন্তর্পনে যে বিদ্বেষগুলো রয়েছে তা উসকে দিয়ে ডোনাল্ড সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ উসকে দিচ্ছেন। আশার কথা এই যে, এসব কথা বলে তিনি মর্কিন নাগরিকগোষ্ঠীর প্রবল সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন। নাগরিক অধিকার গ্রুপগুলো তাঁর এ বক্তব্যকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করার এবং নাগরিক সাধারণকে বিভাজন করার প্রয়াস বলে অভিহিত করেছেন। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডোনাল্ডের বক্তব্য হাজার বছর ধরে লালিত মার্কিন অভিবাসী জাতিসত্ত্বার বিরোধী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতান্ত্রিক সমাজে এ ধরনের বক্তব্য সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। ডোনাল্ড তাঁর নিজ দলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হচ্ছেন। টেড ক্রুজের নির্বাচনী প্রচারণা ব্যবস্থাপক জেফরো বলেছেন, নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্প মনোনয়ন পাওয়ার অর্থ ‘দুর্যোগ ঘনিয়ে আসা’। তিনি আরো মনে করেন, এসব বক্তব্যের কারণে রিপাবলিকান পার্টি কয়েক প্রজন্মের জন্য পিছিয়ে পড়বে। ট্রাম্প যে ‘শ্বেত শ্রেষ্ঠত্ব’ (White Supremacy) প্রচার করছেন তা হিটলারের মনোভঙ্গির সাতে তুলনীয়। তাঁর এই বক্তব্য আফ্রিকান-আমেরিকা ও হিস্পানিকদের রিপাবলিকান পার্টির বিরুদ্ধে সমালোচনামুখর করেছে। নির্বাচনে এদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আপাত উদ্দেশ্য সম্ভবত বিজয় নয়, বিদ্বেষ ছড়ানো। বিশ্লেষকদের মতে, এটি দীর্ঘ মেয়াদি উদ্দেশ্যমূলক ষড়যন্ত্র। যেমনটি করেছিল হিটলার ইহুদিদের বিরুদ্ধে। যে বিষবৃক্ষের বীজ ডোনাল্ড রোপণ করছেন একদিন সেটি বিষবৃক্ষের রূপ নেবে। সেটি হবে বহুমাত্রিক মার্কিন সমাজের বৈশিষ্ট্যের বিপরীত। সমাগত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ ধরনের বিদ্বেষের পরাজয় ঘটবে এবং মার্কিন গণতান্ত্রিক মানস জয়লাভ করবে- এটাই গণতান্ত্রিক বিশ্বের কামনা।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।