স্বদেশের মাটিতে ঐক্য নিয়ে আলোচনা নয় কেন?
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/07/25/photo-1469426022.jpg)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন নির্বাচন নিয়ে উত্তাল সময় চলছে। প্রতিদিন হিলারি-ট্রাম্পকে নিয়ে নানা খবর আসছে। প্রতিদিন বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু দিনশেষে দেখা গেল, একই প্লাটফর্মে ওরা। অন্তত দেশের স্বার্থে যেন সবাই এক। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডেমোক্রেটিক পার্টির দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন ও বার্নি স্যান্ডার্স কয়েক মাস ধরে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন, তর্কে জড়িয়েছেন। একজন আরেকজনকে অযোগ্য বলেছেন। কিন্তু প্রাথমিক মনোনয়ন প্রক্রিয়ার পর যখন বার্নি হারলেন এবং হিলারি জয়ী হলেন, তখন তাঁরা আবার দলকে জিতিয়ে আনতে একতাবদ্ধ হলেন। হিলারি তখন সুর উল্টে বললেন, বার্নির মতো নাকি মানুষ হয় না! আর বার্নিও জবাব দিলেন, হিলারিই হবেন আমেরিকার সেরা প্রেসিডেন্ট। বোঝেন অবস্থা। অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ করার পর ট্রাম্পের যাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন বা যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে নানা বিষোদগার করেছিলেন, তাঁরাও এক হয়ে গেছেন দলীয় স্বার্থে। প্রথমে মাইক পেনস বিরোধিতা করলেও এখন তাঁরা মিলেমিশেই কাজ করছেন। এত দূরে যাওয়ার কী প্রয়োজন, পাশের দেশ ভারতের কথাই ধরা যাক না। জাতীয় স্বার্থে ওরা সবাই এক। এই যে পাশের বাড়ির মমতা দিদি নরেন্দ্র মোদির কত কাজেরই বিরোধিতা করেন। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেন মিলেমিশে।
এত কথা বলার একটাই কারণ, আমরা এক হতে পারি না কখনো জাতীয় স্বার্থে। দেশে এখন জঙ্গি আতঙ্কে দিন কাটছে আমজনতার। মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকিং, বাড়তি কড়াকড়ি আর গুজব সেই আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে জাতীয় ঐক্যের কথা। আরো কয়েকটি ছোট ছোট দল ঐক্যের কথা বলেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যাদের সঙ্গে ঐক্য হওয়া দরকার, তাদের সঙ্গে ঐক্য হয়ে গেছে।
তবে এর মধ্যে পত্রিকার প্রবাসের পাতা বা টিভির প্রবাসের খবরে একটি সংবাদ বেশ মজার লেগেছে। ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা’ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনে সেমিনার হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যম সারির নেতাঁরা। সেখানেও নাকি ঝগড়ার বহর বয়ে গেছে। এই সেমিনারে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন ব্রিটিশ লর্ড সভার সদস্য আলেকজান্ডার চার্লস কারলাইল ও বাংলাদেশবিষয়ক সর্বদলীয় কমিটির চেয়ারম্যান ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি অ্যান মেইন। আমাদের নেতা-নেত্রীরা বাংলাদেশ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন বলে যতই দাবি করুক না কেন তাঁরা যে কতটা পরনির্ভরশীল তা পদে পদে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। দেশে কিছু ঘটলেই আমরা ছুটি বিদেশিদের কাছে নালিশ করতে। তাঁরাই যেন এসে এর সমাধান করে দেবেন।
বিএনপিও সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু নালিশ জানিয়েছে বিদেশিদের। এই যে দেশের উন্নয়ন ও রাজনীতি নিয়ে কথা বলতেও তাদের যেতে হচ্ছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে! সেমিনারে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, জাতীয় পার্টির মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার। বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমদ ও নিতাই রায় চৌধুরী। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সেমিনারে যোগ দেওয়ার জন্য লন্ডনে গেলেও আগের দিন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি সেমিনারে অংশ নেননি। এখন কথা হচ্ছে, এই ধরনের সেমিনার বা আলোচনা বা বিতর্ক আমরা কেন দেশের মাটিতে আয়োজন করতে পারি না। দেশে যে দু-একটি সেমিনার হয় না তা নয়। কোনো কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এই ধরনের আয়োজন করে থাকে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। কিন্তু এর প্রভাব কোনো সময় জাতীয় রাজনীতিতে পড়ে না। এর কারণ এখানকার আলোচনার সারমর্ম বাস্তবায়নের মতো কোনো প্রতিনিধি সেখানে থাকেন না বা থাকলেও সরকার বাহাদুর এসব নিয়ে ভাবেন না। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে সরকার যদি উদ্যোগ নিত তাহলে হয়তো অনেক সমস্যার নিমিষেই সমাধান হয়ে যেত। এর জন্য উদ্যোগটা নিতে হবে সরকারকে।
এখন এতে যদি কোনো শর্ত থাকে, তাও স্পষ্ট করে জানাতে হবে আনুষ্ঠানিকভাবে। শুধু সভা-সেমিনারে বলে বেড়ালে হবে বলে মনে হয় না। কারণ যে যাই বলুক, বিএনপির মতো একটি দলকে বাদ দিয়ে তো আর জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। অন্তত ‘জঙ্গি’র মতো ভয়াবহ হামলা ঠেকাতে এই মুহূর্তে ঐক্যের বিকল্প নেই বলে মনে হয়। আর এর মধ্যে আশার কথা শোনা যাচ্ছে, যে জামায়াত নিয়ে জাতীয় ঐক্যের পরিকল্পনা হোঁচট খাচ্ছে, বিএনপির সিনিয়র নেতারা দলীয় চেয়ারপারসনকে এটা বোঝাতে সমর্থ হয়েছেন যে, জামায়াতকে বাদ দিতে হবে জোট থেকে। এখন অবশ্য সে পথেই এগুচ্ছে বিএনপি। এখন দেখা যাক, কতটা নিকটে জাতীয় ঐক্য।
শান্তনু চৌধুরী : সাংবাদিক ও লেখক