৯/১১
১৫ বছর পর কি অবস্থার কোনো উন্নতি হয়েছে?
আজ ১১ সেপ্টেম্বর। ২০০১ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের চারটি স্থানে ভয়াবহ হামলা চালায় সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদা। তাদের হামলায় ধ্বংস হয়ে যায় নিউইয়র্ক সিটিতে অবস্থিত ১১০ তলা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার। সিরিজ হামলায় প্রাণ হারায় দুই হাজার ৯৯৬ জন, আহত হয় ছয় হাজারেরও বেশি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ হামলা হিসেবে গণ্য করা হয় ওই হামলাকে। এই হামলার পরই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সফল হয়েছে কি না বা আন্তর্জাতিক ও ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে কি না, ১৫ বছর পরে এসে সেটাই খোঁজার চেষ্টা করেছেন কলাম লেখক মাইকেল গার্সন। তাঁর এই নিবন্ধটি গত ৮ সেপ্টেম্বর ছাপা হয় মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের মতামত বিভাগে। নিবন্ধটির ঈষৎ সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন ফাহিম ইবনে সারওয়ার।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দিন ১১ সেপ্টেম্বর। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলাকে কোন দৃষ্টিতে দেখা হবে তা নিয়ে এখনো আমরা আলোচনা করে যাচ্ছি। কিছু কিছু মানুষের কাছে অবশ্য এটা নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। সেই ভয়াবহ হামলার ভয়ঙ্কর স্মৃতি ও অপূরণীয় ক্ষতি এখনো তারা বয়ে বেড়াচ্ছে। বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের অনুপস্থিতি তাদের সবসময় ব্যথিত করে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যান্য ভয়ঙ্কর দিনগুলোর সাথে নাইন ইলেভেনের পার্থক্য রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানিদের পার্ল হারবার আক্রমণের কথাই ধরা যাক। সেই হামলার জন্য কেউ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের অতিমাত্রায় কঠোর অবস্থান বা প্রতিক্রিয়াকে দায়ী করে না।
কিন্তু ২০০১ সালে নাইন ইলেভেনের হামলার পর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, তাকে প্রায় সময়ই অতিমাত্রার প্রতিক্রিয়া হিসেবে অভিহিত করা হয়। আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর ওবামা প্রশাসনের অনেকেই মনে করেছেন সন্ত্রাসবাদকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু বা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম গুটিয়ে আনার মাধ্যমে কি কোনো সুফল অর্জিত হয়েছে? মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এখনো যুদ্ধ চলছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইরাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর দখল করে রেখেছে ইসলামিক স্টেট নামের জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্যরা। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের ফলে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ শরণার্থী সংকট, যা পাশের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের শরণার্থী সংকটের কারণে এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিতও নড়বড়ে হয়ে উঠেছে।
প্রেসিডেন্ট ওবামা ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে নিয়েছেন। তবে এখনো কয়েক হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে ইরাক ও সিরিয়ায়। ওবামা চাইছেন সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের এসব দেশে স্থানীয় সামরিক প্রশাসনের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করবে। তবে ওবামার এই উদ্যোগ অত্যন্ত ধীরগতির হওয়ায় এর সাফল্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সিরিয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই অনেক দেরি হয়ে গেছে। ইসলামী খেলাফতের ডাক দিয়ে ইসলামিক স্টেট এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি বিদেশি যোদ্ধা সংগ্রহ করেছে। অথচ মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে ওঠা এই ইসলামী উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনো প্রস্তুতি নেয়নি। না আদর্শিক দিক থেকে না সামরিক দিক থেকে।
ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিরা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাচ্ছে এবং এসব হামলার মাধ্যমে তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ওয়েব দুনিয়াতেও তারা সংঘবদ্ধ ও সক্রিয়। তাদের সদস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় অনলাইনে।
১৫ বছর আগে নাইন ইলেভেনের হামলার পর প্রথম কাজ ছিল সন্ত্রাসীদের আদর্শিক ও ধর্মীয় দিক থেকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলা। ধর্মের নামে তাদের এই ভয়াবহতাকে মানুষ যেন গ্রহণ না করে সেটা নিশ্চিত করা। কারণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে কখনো কোনো যুদ্ধে জেতা যায় না।
মাইকেল গার্সন : কলাম লেখক