অভিমত
নতুন ইস্যু তৈরির পথ খোলা থাকবে কি?
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/11/21/photo-1479725957.jpg)
দারুণ একটা ইস্যু! কিছুদিন পর পর নতুন সব কৌশল। নতুন করে অস্থিরতার প্রচেষ্টা। যুক্তি কিংবা কাজ দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণের অযোগ্যতা রয়েছে যাদের, তাদের একমাত্র উপায় এ ধরনের অস্থিরতা তৈরি করা। অস্থিরতার মধ্য দিয়ে স্বার্থ সিদ্ধি কিংবা ফায়দা নেওয়া। পুরো দেশে যে চিত্রটি নেই, দু’একটা উদাহরণ তৈরি করে সেটিকে ঢালাও ভাবে প্রচার করাই তাদের উদ্দেশ্য। কেন নয়? প্রচারেই প্রসার। আর তাই তো রামু, নাসিরনগর, সাঁওতাল পল্লীর মতো কোনো না কোনো উদাহরণ তৈরি করা! ধর্ম, রাষ্ট্রধর্ম, সংখ্যালঘু, মালাউন, ধর্মরক্ষা প্রভৃতি শব্দগুলোর যথেচ্ছ প্রচারণা। তবে যে উদ্দেশ্যেই করুক না কেন, স্বার্থান্বেষীরা যথেষ্ট সফল।
ইদানীং সেটাই ঘটছে। কিন্তু একটু গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করলে দেখা যায়, স্থানীয় রাজনীতি, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, কিংবা রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অথবা দলগুলোর আদর্শিক বৈপরীত্যই মূলত দায়ী এসব ঘটনার জন্য। রামুতে তাই ঘটেছে, নাসিরনগরে তার পুনরাবৃত্তি। বড় প্রশ্ন হচ্ছে- রাষ্ট্র কেন যেন এসব ইস্যুতে নীরবতা দেখায়। কিংবা ঘটনা অনেক দুর গড়িয়ে যাওয়ার পর খানিকটা পদক্ষেপ নেয়ার ভান করে। যে পদক্ষেপগুলো আগে নিলে হয়তো এত দূর গড়াত না।
এ রকম একের পর এক ইস্যুতে কোনো সুষ্ঠু সমাধান না হওয়ায় আস্থা সংকটে ভুগছে মানুষ। যার যার অবস্থান থেকে হয়তো এমন ঘটনাগুলোকে সমর্থন দেয় না কেউ। কেউ কেউ তাদের অবস্থান থেকে চিৎকার করছে। তবে সেটা গণমানুষের গর্জন হচ্ছে না। এমন বিচ্ছিন্নতার সুযোগ গুলো কাজে লাগাচ্ছে সুবিধাবাদীরা।
বলা হয়ে থাকে- ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। সবার নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্বটিও রাষ্ট্রের। কিন্তু আদতে কী তা হচ্ছে? রাজনীতিতে মতের ভিন্নতা থাকবেই। কিন্তু ঘৃণা থাকবে কেন? রাষ্ট্র কিংবা রাজনৈতিক দল পরিচালিত হয় আইন ও সংবিধান দ্বারা। অথচ নাসিরনগর কিংবা সাঁওতাল পল্লীতে প্রতিফলিত হয়নি তা। প্রতিফলিত হয়নি রামুতেও। ভোটের রাজনীতির কারণে অনেক বিষয় হিসাব করে অন্যায়কেও মেনে নেয় রাজনৈতিক দলগুলো। ক্ষতিগ্রস্তরা বিচার তো পায়ই না, উল্টো হতে হয় হয়রানির শিকার।
অর্থনীতির নানা সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বাড়ছে জিডিপি, জিএনপি। বড় বড় স্থাপনা গড়ে উঠছে। কিন্তু সাথে সাথে কমে যাচ্ছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা। দিন দিন কমে যাচ্ছে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা। মানুষের নিরাপত্তাই যদি না থাকে কী হবে এই প্রবৃদ্ধি দিয়ে? সমাজে অস্থিরতা যদি বেড়ে যায়, কী হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে?
পরিশেষে বলতে চাই- মন্দিরে আগুন, বাড়িতে আগুন, ক্ষেতে আগুন... আগুনের খেলা শুরু হয়েছে। যারা আগুন দিচ্ছেন, কিংবা নির্দেশ দিচ্ছেন, মনে রাখবেন আগুন কাউকে চেনে না। কেবল জ্বালায়। একদিন হয়তো সেই আগুনে আপনারাই কিংবা আপনার কোনো স্বজন জ্বলবে। হয়তো জ্বলে পুড়ে যাবে আপনার বাড়ি ভিটে। যদি তাও না হয়- ঐ নিরীহ মানুষগুলোর অভিশাপের আগুনে অবশ্যই পুড়বেন। মানবতার কাছে- একদিন ভস্ম হবে আপনাদের ক্রোধ, হিংসে, নোংরা রাজনীতির খেলা। ধর্ম, বর্ণের ভেদাভেদ তুলে যে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছেন আপনারা। মনে রাখবেন, এই মানুষই আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলবে আপনাদের। নতুন ইস্যু তৈরি করার পথ খোলা থাকবে না তখন।
লেখক : বার্তাকক্ষ সম্পাদক, নাগরিক টেলিভিশন ।