ভুলি নাই ২১
আবুল বরকত যেভাবে শহীদ হলেন
বাংলা ভাষার জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন তাঁদের মধ্যে শহীদ আবুল বরকত অন্যতম (১৯২৭-৫২)। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নুরুল আমিন সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারা ভেঙে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে মিছিল করার সময় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন এ ভাষাপ্রেমিক। আনুমানিক বিকেল ৩টার সময় ছাত্র-জনতার সঙ্গে সংঘর্ষ তীব্র হয়ে উঠলে পুলিশ কোনো সতর্কতা ছাড়াই গুলি ছুড়লে এ ঘটনা ঘটে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় শুরু হওয়া সংঘর্ষ একসময় ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলেও ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ অতর্কিত হামলে পড়ে ছাত্রদের ওপর। চলতে থাকে বুলেট আর ছাত্রদের ইটের লড়াই। একই সঙ্গে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগানে।
একসময় ছাত্রদের প্রতিরোধ অতিক্রম করে পুলিশ ঢুকে পড়ে হোস্টেলে এবং অতর্কিত গুলি ছুড়তে থাকে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এমএ-র ছাত্র আবুল বরকত লুটিয়ে পড়লেন। তলপেটে লেগেছে গুলি। তখন তাঁর গায়ে ছিল নীল রঙের হাওয়াই হাফ-শার্ট, পরনে খাকি প্যান্ট, পায়ে ছিল কাবুলি স্যান্ডেল। তাঁর দুই পা এবং মাথা সঙ্গীরা কাঁধে তুলে নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পথিমধ্যে পানি খেতে চাইলে, পানির অপ্রতুলতায় তাকে রুমাল চুষতে দেওয়া হয়। এ সময়ও বরকত সাহস হারাননি এবং আন্দোলন যেন স্থিমিত না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে বলেছেন-
‘খুব কষ্ট হচ্ছে, বাঁচব না। বিষ্ণুপ্রিয়া ভবন, পুরানা পল্টনে খবর পৌঁছে দেবেন।’
রাত ৮টার দিকে তিনি মারা যান। ওই দিন রাতে কড়া পুলিশ পাহারায় আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
গ্রন্থনা : সেখ ফয়সাল আহমেদ