বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোসহ সুশাসন নিশ্চিতে টাস্কফোর্স গঠন
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পুঁজিবাজারের সুশাসন উন্নীতকরণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। এরই ধারায় পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে উত্তোলন ও প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো বের করা হবে। যাতে পুঁজিবাজার দীঘমেয়াদে উন্নয়ন ও সবধরনের সুশাসন নিশ্চিত করা যায়। এসব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
এই টাস্কফোর্স মূলত পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আস্থা ও মনোবল বাড়ানোতে বিশেষ কাজ করবে। এছাড়া শক্তিশালী পুঁজিবাজার নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ১৭টি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এছাড়া পরবর্তীতে কোনো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ মনে করলে টাস্কফোর্সের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কার্যপরিধি বাড়াতে পারবে বিএসইসি।
গতকাল সোমবার (৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান স্বক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসার উদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন।
পুঁজিবাজার সংস্কারে যেসব কাজ করবে টাস্কফোর্স-
পুঁজিবাজারের আকার তথা জিডিপি ও বাজার মূলধনের অনুপাত কম হওয়ার প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করে উত্তরণের জন্য সরকারের আর্থিক খাতের নীতি প্রণয়নের প্রস্তাবনা করবে।
দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নের জন্য সরকারের আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কমিশনের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পুঁজিবাজারের সুশাসন উন্নীতকরণের লক্ষ্যে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ ও সমাধানের সুপারিশমালা প্রণয়ণ করবে।
বিএসইসির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ, অভ্যন্তরীণ সুশাসন, অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে প্রযুক্তি ও অটোমেশনের প্রয়োগ সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করবে। পাশাপাশি তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বিএসইসির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশাসনিক কাঠামোর সুপারিশও প্রদান করবে টাস্কফোর্স। এছাড়াও মানব সম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কমিশনের কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, সেমিনার, কর্মশালায় অংশগ্রহণ-সহ অভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করবে।
ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, সিসিবিএলের তদারকি কার্যক্রম বিশ্বমানে উন্নীতকরণসহ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে যুগোপযোগীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
প্রাইভেট প্লেসমেন্ট বা অফারের মাধ্যমে ইকুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যু সংক্রান্ত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইস্যু অফ ক্যাপিটাল) রুলস, ২০০১ যুগোপযোগীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, করপোরেট ডিসক্লোজার, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের সঠিকতা নিশ্চিতকরণসহ করপোরেট গভর্ন্যান্স, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং বাজারের গভীরতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন করবে।
ডেট ও ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যুর আবেদনের ক্ষেত্রে দাখিলকৃত তথ্য-উপাত্ত, দলিল-দস্তাবেজ, সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন প্রতিবেদন, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তুতকারী পক্ষসমূহ গ্রহণ করবে। যেমন- ইস্যুয়ার কোম্পানি, ইস্যু ম্যানেজার ও আন্ডার রাইটার (মার্চেন্ট ব্যাংকার), ভেল্যুয়ার এবং অডিটরসহ অন্যান্য পক্ষসমূহের দায়দায়িত্ব ও সুনির্দিষ্ট শান্তির বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করা।
বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা যেমন- সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা, ১৯৯৬, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক- ডিলার, ন্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১-সহ সংশ্লিষ্ট বিধিমালা যুগোপযোগীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
ডেট ও ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যু সংক্রান্ত বিধি-বিধানের যেমন- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস ২০১৫, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইট ইস্যু) রুলস, ২০০৬, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ডেট সিকিউরিটিজ), বুলস ২০২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইনভেস্টমেন্ট সুকুক), বুলস ২০১৯, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সম্পদ ভিত্তিক সিকিউরিটি ইস্যু) বিধিমালা, ২০০৪-সহ সংশ্লিষ্ট বিধিমালা যুগোপযোগীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়মিত পরামর্শ ও সমন্বয় এর গাইডলাইন এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
পুঁজিবাজারে কারসাজি, সুবিধাভোগী ব্যবসায় লেনদেন ও অন্যান্য অনিয়মের বিচার ও জরিমানায় সমতা আনয়নের জন্য বিদ্যমান আইনের শান্তির ধারার অধীনে একটি সুনির্দিষ্ট পেনাল কোড বা শান্তির বিধিমালা প্রণয়ন করবে।
মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ যুগোপযোগীকরণসহ, বিদ্যমান ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্স মডিউল সমৃদ্ধ বিশ্বমানের অনলাইন ও অফলাইন সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম বা বাজার তদারকি ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিরুপণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
বর্তমান বাজার কাঠামোর মূল্যায়ন, বাজারের গভীরতা, তারল্য ও পণ্য বৈচিত্র্যকে বিবেচনাপূর্বক দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কীভাবে আরও আকৃষ্ট করা যায়। সেই কৌশল প্রণয়নে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান করবে।
পুঁজিবাজারের কার্যক্রমে অটোমেশন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সুশাসন এবং বিনিযোগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন এবং পুঁজিবাজারে উপযোগী ফিনটেক টেকনোলজি প্রচলন এবং পুঁজিবাজারের প্রযুক্তিগত সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর (বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইডিআরএ, এমআরএ, এনবিআর, আরজেএসসি ইত্যাদি) সাথে সমন্বয় সাধনের উপায় নির্ধারণে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (SOP) বা নির্দেশিকা প্রণয়ন করবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাথে অতালিকাভুক্ত কোম্পানি বা তালিকাভুক্ত কোম্পানির মার্জার, অ্যামালগামেশন, একুইজেশনের মাধ্যমে কোন শেয়ার ইস্যু সংক্রান্ত বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টে এতদসংক্রান্ত স্কিম অনুমোদনের পূর্বে বিএসইসি হতে অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বিষয়ে সুপারিশমালা প্রণয়ন করবে।