পাকিস্তানের দাপুটে বোলিংয়ে ফলোঅনে বাংলাদেশ
টেস্টের চতুর্থ দিন শেষেই বাংলাদেশকে ফলোঅনে ফেলার হুংকার দিয়েছিলেন পাকিস্তানি স্পিনার সাজিদ খান। নিজেদের লক্ষ্যে সফল সফরকারীরা। আজ বুধবার টেস্টের শেষ দিনে স্রেফ ৩০ মিনিটেই বাংলাদেশকে অলআউট করেছে পাকিস্তান। স্কোরবোর্ডে ১১ রান যোগ করতেই শেষ ৩ উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩২ ওভার টিকতে পেরেছে বাংলাদেশ। সাজিদ খানের দুর্দান্ত স্পিনে অলআউট হয়েছে মাত্র ৮৭ রানে। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস থেকে ২১৩ রানে পিছিয়ে থেকে ফলোঅনে পড়েছে বাংলাদেশ।
৮৭ রানে অলআউট হয়ে দেশের মাঠে নিজেদের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড স্পর্শ করল বাংলাদেশ। এর আগে ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ৮৭ রানে অলআউট হয়েছিল বাংলাদেশ।
দাপুটে বোলিং করা সাজিদ একাই নিয়েছেন ৮ উইকেট। একটি নিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।
বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৩ রান করেছেন সাকিব আল হাসান। এ ছাড়া ৩০ রান করেছেন নাজমুল হাসান শান্ত। বাকিরা সবাই ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। পাঁচ ব্যাটার তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি। বাকিরাও পার হতে পারেননি ১০-এর ঘর।
ঢাকা টেস্টের দুদিনই ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। ফলে এ টেস্টে ড্রয়ের আশা জাগে। কিন্তু, গতকাল মঙ্গলবার চতুর্থ দিন ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছেন পাকিস্তানি বোলাররা। ব্যাটে-বলের দাপটে বাংলাদেশকে ফলোঅনের শঙ্কায় ফেলে দেন তাঁরা। আজ মাঠে নেমেই বাংলাদেশকে ফলোঅনে ফেলল পাকিস্তান। ফলোঅনে পড়ায় অনুমিতভাবেই বাংলাদেশকে আবার ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে পাকিস্তান।
গতকাল মঙ্গলবার দিন শেষে প্রথম ইনিংসে ২৬ ওভারে ৭৬ রান করে বাংলাদেশ। দিন শেষে উইকেটে ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন সাকিব আল হাসান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাইজুল ইসলাম।
কাল আউটফিট ভেজা থাকায় যথাসময়ে খেলা শুরু হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১০টা ৫০ মিনিটে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। বোলিংয়ে নামা বাংলাদেশ দিনের শুরুতেই পায় জোড়া সাফল্য। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া আজহার আলীকে ফিরিয়ে দেন ইবাদত। এরপর থিতু হয়ে যাওয়া আরেক ব্যাটার বাবর আজমকে ফিরিয়ে দেন খালেদ আহমেদ। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটাই তাঁর প্রথম উইকেট।
১৪৪ বল খেলা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আজহার ৫৭ রানে ফিরে যান। ভাঙে ১২৩ রানের শক্ত জুটি। ইবাদতের বলটি অবশ্য উইকেট নেওয়ার মতো ছিল না। বাংলাদেশি পেসার শর্ট বল দেন। কিন্তু বলে তেমন গতি ছিল না। চার হজম করার মতোই ডেলিভারি ছিল। কিন্তু বেশি জোরে মারতে গিয়েই টাইমিংয়ে গড়বড় করেন আজহার। ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে বল উঠে যায় আকাশে। ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়ে দেন কিপার লিটন দাস।
এরপর ৭৬ রান করা বাবরকে এলবির ফাঁদে ফেলেন খালেদ। ২০১৮ সালে অভিষেক হওয়া খালেদ নিজের তৃতীয় টেস্টে এসে পেলেন প্রথম উইকেটের স্বাদ। এরপর আর পাকিস্তানের একটি উইকেটও ফেলতে পারেনি স্বাগতিকেরা।
বাবর-আজহার ফেরার পর আরেকটি শক্ত জুটি উপহার দেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ফাওয়াদ আলম। দুজনেই তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। জোড়া হাফসেঞ্চুরিতে স্কোরবোর্ডে ৩০০ ছুঁয়ে ইনিংস ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
প্রথম ইনিংসে মোট ৯৮.৩ ওভার খেলে ইনিংস ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। ইনিংস শেষে ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন ফাওয়াদ। তাঁর সঙ্গে ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন রিজওয়ান।
এরপর প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই হতাশ করে বাংলাদেশ। বরাবরের মতো ওপেনিং ব্যর্থ বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। অভিষিক্ত মাহমুদুল হাসান জয় কিংবা সাদমান কেউই ভালো করতে পারেননি।
পাকিস্তানের অফ স্পিনার সাজিদ খানের বলে রীতিমতো ধোঁয়া দেখে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। তাঁর স্পিনেই একে একে সাজঘরের পথে হাঁটেন মাহমুদুল, সাদমান, নাজমুল, লিটন, মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। মাত্র চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামা সাজিদ বাংলাদেশের ব্যাটারদের দাঁড়াতেই দেননি। তাঁর স্পিনেই এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩০০/৪ (ডি.)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩২ ওভারে ৮৭ (আগের দিন ৭৬/৭) (সাদমান ৩, মাহমুদুল ০, শান্ত ৩০, মুমিনুল ১, মুশফিক ৫, লিটন ৬, সাকিব ৩৩, মিরাজ ০, তাইজুল ০, খালেদ ০, ইবাদত ০* ; আফ্রিদি ৪-৩-৩-১, নুমান ১২-২-৩৩-০, সাজিদ ১৫-৪-৪২-৮, বাবর ১-০-১-০)।