বাংলাদেশকে স্রেফ উড়িয়ে দিল নিউজিল্যান্ড
ওয়ানডে সিরিজের হতাশা ভুলে টি-টোয়েন্টিতে কিছু করে দেখানোর তাগিদ দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু, মূল ম্যাচে সেই তাগিদের ছিটেফোটাও দেখা যায়নি। নড়বড়ে ব্যাটিং-বোলিং দিয়ে নিউজিল্যান্ডের কাছে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ। ৬৬ রানের বিশাল ব্যবধানে বাংলাদেশকে স্রেফ উড়িয়ে দিল কিউইরা।
ওয়ানডে সিরিজের পর টি-টোয়েন্টিও হতাশা দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের। এই জয়ের মাধ্যমে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টিম সাউদির দল।
হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে ২১১ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা বেশ আশা জাগানিয়া করেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। টিম সাউদির বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন মোহাম্মদ নাঈম। একই ওভারের তৃতীয় বলে ফুল টস পেয়ে আরেকটি বাউন্ডারি হাঁকান। কিন্তু এমন শুরুর পর হঠাৎ পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
ধাক্কার শুরুটা হয় তৃতীয় ওভারে। সাউদির বল পুল করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে থেমে যান লিটন দাস। বুঝতে পারেন বলটি স্লোয়ার। তবে ব্যাট সংযত করতে করতে ফ্লিক হয়ে যায়, বল উঠে যায় আকাশে। মিড অনে ক্যাচ নিয়ে সাজঘরের পথ দেখান ইশ সোধি।
এরপর শুধু হতাশায় ব্যাটিংয়ে হতাশাই দেখেছে বাংলাদেশ। আশা জাগিয়ে লিটনের পর ফেরেন নাঈম। পঞ্চম ওভারে বোলিংয়ে আসা লকি ফার্গুসনের প্রথম বল মিড অনের ওপর দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান নাঈম। পরের বলেই হয়ে যান আউট। ৫ চারে ১৮ বলে ২৭ রান করে শেষ হয় নাঈমের ইনিংস।
বোলিংয়ে এসে এরপর ঝলক দেখান ইশ শোধি। স্পিন উইকেটে তুলে নেন জোড়ায় জোড়ায় উইকেট। একে একে ফিরে যান সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদি হাসান।
এরপর বাকিদের নিয়ে লড়াই করেন আফিফ হোসেন ও সাইফউদ্দিন। কিন্তু, ২১১ রানের পাহাড় টপকানোর মতো সময় ততক্ষণে শেষ। নির্ধারিত ওভারে ১৪৪ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ৩৩ বল খেলে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ রান করেন আফিফ হোসেন। ৩৪ রান করেন সাইফউদ্দিন।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে তিন উইকেটে ২১০ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। দলের পক্ষে সর্বাধিক ৯২ রান করেন ডেভন কনওয়ে।
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো ছিল। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাফল্য এনে দেন অভিষিক্ত নাসুম।
নাসুমকে দিয়ে বোলিং ওপেন করায় বাংলাদেশ। নাসুমের করা প্রথম চার বলে কোনো রান নিতে পারেননি মার্টিন গাপটিল। পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নিয়ে প্রান্ত বদল করেন। শেষ বলে উইকেটে আসা অভিষিক্ত অ্যালেনকে নিজের প্রথম শিকার বানান নাসুম।
নাসুমের স্টাম্প বরাবর করা বলে বোল্ড হন অ্যালেন। অভিষেকে তিক্ততার স্বাদ পেলেন অ্যালেন। এরপর গাপটিলকেও ফিরিয়ে দেন নাসুম। পাওয়ার প্লে শেষে আবার বোলিংয়ে এসে গাপটিলকে বিদায় করে দিলেন নাসুম। সাজঘরে ফেরার আগে ২৭ বলে ৩৫ রান করেন যান গাপটিল।
এমন ভালো শুরুর পর শুধু হতাশা দেখেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে অভিষিক্ত উইল ইয়ংয়ের সঙ্গে শক্ত জুটি বাঁধেন ডেভন কনওয়ে। ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ান কনওয়ে। মাঠের চারপাশে খেলেন দারুণ সব শট।
এর মাঝে নাসুমের শেষ স্পেলে আউট হতে পারতেন কনওয়ে। নাসুমের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে সীমানা ঘেঁষে ক্যাচ তুলে দেন কনওয়ে। সেখানে ছিলেন আরেক অভিষিক্ত শরিফুল ইসলাম। তিনি ক্যাচ ধরেন ঠিকই। কিন্তু সীমানা দড়িতে পা স্পর্শ হয়ে যায় শরিফুলের। আউটের বদলে হয়ে যায় ছক্কা, তাতে কনওয়েও পেয়ে যান হাফসেঞ্চুরি। ৩৭ বলে নিজের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন কনওয়ে।
কনওয়ের পর হাফসেঞ্চুরি করেন ইয়াং। অভিষেক ম্যাচে মাত্র ২৮ বলে ৫০ স্পর্শ করেন এই ক্রিকেটার। হাফসেঞ্চুরির পর ৫৩ রানের মাথায় তাঁকে সাজঘরে পাঠান মেহেদি হাসান। এরপর শেষের দিকে ফিলিপসকে নিয়ে নির্ধারিত ওভারে কিউইদের বড় সংগ্রহ এনে দেন কনওয়ে। ম্যাচ শেষে ৯২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। তাঁর ইনিংসে ৫২ বলে ছিল ১১টি বাউন্ডারি ও তিনটি ছক্কা। ১০ বলে ২৪ রানে অপরাজিত ছিলেন ফিলিপস
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড : ২০ ওভারে ৩/২১০ (গাপটিল ৩৫, অ্যালেন ০, ইয়ং ৫৩, কনওয়ে ৯২, ফিলিপস ২৪; নাসুম ৪-০-৩০-২, মেহেদি ৪-০-৩৭-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৪৮-০, শরিফুল ৪-০-৫০-০, সাইফউদ্দিন ৪-০-৪৩-০)।
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৪৪/৮ (লিটন ৪, নাঈম ২৭, সৌম্য ৫, মিঠুন ৪, মাহমুদউল্লাহ ১১, আফিফ ৪৫, মেহেদি ০, সাইফউদ্দিন ৩৪, শরিফুল ৫, নাসুম ০; ইশ শোধি ১০-০-২৮-৪, ফার্গুসন ৪-০-২৫-২, সাউদি ৪-০-৩৪-১, ফিলিপস ১-০-৫-০, মিচেল ১-০-১১-০)।
ফল : ৬৬ রানে জয়ী নিউজিল্যান্ড।
সিরিজ : ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নিউজিল্যান্ড।