বিশ্বকাপজয়ী শরিফুলের অজানা গল্প
ক্রিকেটের নতুন তারকা বিশ্বকাপজয়ী বাংলাদেশ যুব দলের অন্যতম সদস্য শরিফুল ইসলাম এখনো দক্ষিণ আফ্রিকায়। তবে তাঁর গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার নগরডাঙ্গায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ক্রিকেট ভক্তরা শরিফুলের বাড়িতে ভিড় করছেন এবং চলছে মিষ্টি খাওয়া আর আনন্দ উল্লাস।
রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ।
বিজয়ী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে শরিফুলের অবদান তাঁর এলাকার লোকজনের নজর এড়ায়নি। সোমবার সকাল থেকে তাঁর বাড়িতে অভিনন্দন জানাতে ভিড় করছেন অনেকেই।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রত্যয় হাসান, দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক চিশতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান হাসনাৎজ্জামান চৌধুরী জজ, আওয়ামী লীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক, দন্ডপাল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জামেদুল ইসলাম শরিফুলদের বাসায় গিয়ে শরিফুলের বাবা-মা, পরিবারের সদস্যসহ এলাকাবাসীকে মিষ্টিমুখ করান এবং তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
পঞ্চগড়ের এই বাঁহাতি পেসার ফাইনালে ১০ ওভারে (১টি মেডেন) ৩১ রান খরচায় ২টি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ২টি ক্যাচ নিয়েছেন, সরাসরি থ্রোতে ১টি রানআউটও করেছেন।
পুরো বিশ্বকাপে বল হাতে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন পঞ্চগড়ের এই ক্রিকেটার।
দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বিজয় চত্বরে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ক্রিকেটপ্রেমীর দর্শকরা এই খেলা উপভোগ করেন এবং বিজয় উল্লাস করেন। শরিফুল দেশে ফেরার পর আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) প্রত্যয় হাসান বলেন, ‘শরিফুলের বোলিং স্টাইল, নিখুঁত লাইন এবং লেংথ দেখে আমরা অভিভূত। শরিফুল আমাদের দেবীগঞ্জের গর্ব। সে জাতীয় টিমের পেস বোলার হিসেবে ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভবিষ্যতে সে জাতীয় দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী। আমরা আরও শরিফুল তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। সব ধরনের প্রশাসনিক সহযোগিতার জন্য আমরা শরিফুলের পরিবারের সাথে আছি।’
শরিফুল ইসলামের বাবা দুলাল মিয়া একজন ক্ষুদ্র কৃষক, মা বুলবুলি বেগম গৃহিনী। চার ভাই-বোনের মধ্যে শরিফুল দ্বিতীয়। শরিফুল গ্রামের স্কুল কালিগঞ্জ সুকাতু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে কালিগঞ্জ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ভর্তি হন।
দুলাল মিয়া জানান, আর্থিক সংকটের কারণে এক সময় তারা ঢাকার সাভারের জিরানী বাজারে চলে যান। ওখানে রিকশা চালাতেন। শরিফুল সাভারের জিরানীবাজার গোহালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে। পরবর্তীতে ২০১০ সালের দিকে আবারো গ্রামে চলে আসেন তাঁরা।
‘শরিফুল লেখাপড়ার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট খেলত। স্কুল ফাঁকি দিয়ে মাঠে ক্রিকেট খেলত। ক্রিকেটের প্রতি তার খুবই ঝোঁক ছিল। আজ সে দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলছে, আমি খুবই খুশি, ‘বলেন তিনি।
শরিফুলের ছোট বোন দুলালী আক্তার বলেন, ‘শরিফুল ক্রিকেট পাগল। লেখাপড়ার চেয়ে বেশি ক্রিকেট খেলে বেড়াত। ক্রিকেটের জন্য সারাদিন বাইরে ঘুরত।’
তিনি আরো বলেন, ‘একসময় সে দিনাজপুরের ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হয়েছিল। সেখানে ক্রিকেটের কোচিং করত। সেখান থেকে সে রাজশাহী যায়। সেখানে প্রথম ক্রিকেটে (লিগ) অংশ নেয়। পরে সে ঢাকায় যায়। সেখানে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে অভিষেক হয়।’
শরিফুলের মা বুলবুলি বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে ক্রিকেট খেলে যা আয় করত তার সবই পরিবারের জন্য ব্যয় করত। বিপিএল এবং শাহিন পুকুরের টাকা দিয়ে বাড়ি ও একটি খামার তৈরি করে দিয়েছে। এখন এই খামার দিয়েই আমাদের সংসার চলছে।’