মাশরাফীর ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ফাইনালে খুলনা
বল হাতে আরেকবার নিজের বোলিংয়ের ধার দেখালেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার তুলে নিলেন পাঁচ উইকেট। অভিজ্ঞ এই পেসারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে ৪৭ রানে হারিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে উঠেছে জেমকন খুলনা।
অবশ্য হারলেও আশা শেষ হয়ে যায়নি চট্টগ্রামের। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ফাইনালে ওঠার আরেকটি সুযোগ পাবে তারা। আগামীকাল বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নামবে মোহাম্মদ মিঠুনের দল।
আজ সোমবার প্রথম কোয়ালিফায়ারে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে সাত উইকেটে ২১০ রান করে খুলনা। জবাব দিতে নেমে ১৯.৪ ওভারে ১৬৩ রানে থামে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। পাঁচ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন মাশরাফী। টি-টোয়েন্টিতে এটাই তাঁর সেরা বোলিং। আগের সেরা বোলিং ছিল ১১ রানে চার উইকেট।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায় চট্টগ্রাম। বোলিংয়ে এসেই চট্টগ্রামের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান লিটন দাস ও সৌম্য সরকারকে ফিরিয়ে দেন মাশরাফী।
চট্টগ্রামের ইনিংসের প্রথম ওভারে সৌম্যকে বিদায় করেন মাশরাফী। অভিজ্ঞ পেসারের প্রথম স্পেলের তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান সৌম্য। ষষ্ঠ বলেই শামীমের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। নিজের পরের ওভারে এসে ফেরান চট্টগ্রামের আরেক ভরসার মুখ লিটনকে। ২৪ রানে ডানহাতি ওপেনারকে সরাসরি বোল্ড করেন মাশরাফী।
এরপর তৃতীয় উইকেটে মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন মিঠুন। পুরো টুর্নামেন্টে রানের খরায় থাকা মিঠুন এই ম্যাচে জ্বলে ওঠেন। দলের বিপদে খেলেন ৫৩ রানের ইনিংস। ১০০ রানের এই জুটিও ভাঙেন মাশরাফী। অভিজ্ঞ পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ডিপ পয়েন্টে থাকা ইমরুলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন জয়। ফেরার আগে ২৭ বলে ৩১ রান করেন তিনি।
এরপর মিঠুনকে বোল্ড করেন আরিফুল। সৈকতকে নিজের শিকার বানান সাকিব। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানদের হারানোর পর শেষ পর্যন্ত ১৬৩ রানে থামে চট্টগ্রাম।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করে দারুণ শুরু করে খুলনা। দুই ওপেনারের ব্যাটে প্রথম জুটিতে তোলে ৭১ রান। এর মধ্যে অবশ্য জহুরুলেরই বেশি অবদান। ৭১ রানের মধ্যে ৫৩ রানই ছিল তাঁর। ৩৩ বলে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠেন তিনি।
তিনে ব্যাট করতে নামা ইমরুল কায়েসকে থিতু হতে দেননি মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের বলে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন ইমরুল, সেখানে ছিলেন ফিল্ডার মাহমুদুল। সহজেই ক্যাচ তালুবন্দি করেন তিনি। ১২ বলে ২৫ করে ফেরেন ইমরুল।
সতীর্থরা ফিরলেও ভালোভাবেই দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন জহুরুল। এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু ৮০ রানের মাথায় জহুরুলের ঝড় থামান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ৫১ বলে তাঁর ইনিংসে ছিল পাঁচ বাউন্ডারি ও চার ছক্কা।
জহুরুল ফেরার পর জুটি বাধেন মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব। ব্যাটিংয়ে নেমেই ঝড় তোলেন মাহমুদউল্লাহ। শরিফুলের করা এক ওভারে পরপর তিন ছক্কা হাঁকান খুলনা অধিনায়ক। মাত্র ৯ বলে স্কোরবোর্ডে ৩০ রান তোলেন তিনি। আরো ভয়ংকর হওয়ার আগে সঞ্জিত সাহা থামান খুলনা অধিনায়ককে।
পরে সাকিব-আরিফুলদের ব্যাটে চড়ে নির্ধারিত ওভারে ২১০ রানে থামে খুলনা। ১৫ বলে ২৮ রান করেন সাকিব। চলতি টুর্নামেন্টে এটাই তাঁর সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
জেমকন খুলনা : ২০ ওভারে ২১০/৭ (জহুরুল ৮০, জাকির ১৬, সাকিব ২৮, ইমরুল ২৫, মাহমুদউল্লাহ ৩০, আরিফুল ১৫, শুভাগত ০, মাশরাফী ৬; নাহিদুল ২-০-২১-০, শরিফুল ৪-০-৪৭-০, সঞ্জিত ৪-০-৫০-১, মুস্তাফিজ ৩.৪-০-৩১-২, সৌম্য ২.২-০-৩১-০, সৈকত ৪-০-২৭-১)।
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম : ১৯.৪ ওভারে ১৬৩/১০ (লিটন ২৪, সৌম্য ০, মিঠুন ৫৩, মাহমুদুল ৩১, সৈকত ১৭, সামছুর ১৮, সৈকত আলী ৫, নাহিদুল ৫, মুস্তাফিজ ০; মাশরাফী ৪-০-৩৫-৫, সাকিব ৪-০-৩২-১, আল আমিন ৪-০-৩২-০, আরিফুল ৩.২-০-২৫-২, হাসান ৪-০৩৫-২)।
ফল : ৪৭ রানে জয়ী জেমকন খুলনা।