রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে আইরিশদের হারিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
ম্যাচটা দুলে ছিল আয়ারল্যান্ডের দিকেই। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল মাত্র ১০ রান। এই সহজ সমীকরণই মেলাতে দিলেন না বাংলাদেশি পেসার হাসান মাহমুদ। দুর্দান্ত বোলিংয়ে আইরিশদের লক্ষ্যে যেতে তো দিলেনই না উল্টো দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে উপহার দিলেন রোমাঞ্চকর জয়। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে আইরিশদের ৫ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিল বাংলাদেশ।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ভেস্তে যায় বৃষ্টিতে। দ্বিতীয়টি বাংলাদেশ জিতে এগিয়ে যায়। এবার শেষটিও নিজেদের করে নিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতল তামিম ইকবালের দল।
গতকাল রোববার (১৪ মে) ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে সব উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৭৪ রানের পুঁজি দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৬৯ রানে থামে আয়ারল্যান্ড।
বাংলাদেশের দেওয়া লক্ষ্যটা যে ইংলিশ কন্ডিশন বিবেচনায় খুব বেশি কঠিন নয়, ব্যাটিংয়ের শুরুতে তারই প্রমাণ রাখলেন আয়ারল্যান্ডের ব্যাটাররা। শুরু থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হতে থাকে আয়ারল্যান্ড। ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিল দুই ওপেনার পল স্টার্লিং ও স্টিফেন দোহেনি। তবে, তাদের জুটি বড় হতে দেননি মুস্তাফিজ। দলীয় ১৭ রানে দোহেনিকে ফেরান বাঁহাতি এই পেসার। অফস্ট্যাম্প করিডোরে করা মুস্তাফিজের বলে স্লিপে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন দোহেনি। আউটের আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৬ বলে মাত্র চার রান। তার বিদায়ের পরই বালবার্নি-স্টালিং মিলে দেখেশুনে ব্যাটিং করতে থাকেন।
ক্রিজে সেট হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটার স্টার্লিং-বালবার্নিকে কোনোভাবেই ফেরাতে পারছিল না বাংলাদেশের বোলাররা। শেষমেশ ১০৯ রানের জুটি গড়ে দলীয় ১২৬ রানে ডিপ মিডউইকেটে রনি তালুকদারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার। আউটের আগে খেলেন ৭৮ বলে ৫৩ রানের কার্যকরী ইনিংস। এরপর দলীয় ১৪৬ রানে স্টার্লিংকে ফেরান মিরাজ। গালি অঞ্চলে মৃত্যুঞ্জয়ের দুর্দান্ত ক্যাচে সাজঘরের পথ ধরতে হয় ডানহাতি এই ব্যাটারকে। তার ব্যাট থেকে আসে ৭৩ বলে ৬০ রান।
স্টার্লিয়ের বিদায়ের পর গত ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা দুই ব্যাটার হ্যারি টেক্টর ও লোরকান ট্রাকার মিলে বাংলাদেশের বোলারদের চাপ বাড়ান। কোনোভাবেই তাদের উইকেট নিতে পারছিল না মিরাজ-ইবাদতরা। পরবর্তীতে পার্টটাইম বোলার নাজমুল হোসেন শান্তকে আনা হয় বোলিং আক্রমণে। বোলিংয়ে এসেই শান্তর বাজিমাত। তুলে নেন ৪৮ বলে ৪৫ করা টেক্টরের উইকেট। দলীয় ২২৫ রানের মাথায় শান্তর বল লং অনে তুলে মারতে গিয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন টেক্টর। তবুও শেষ দিকে জয়ের দিকেই এগিয়ে যায় আইরিশরা। কিন্তু মুস্তাফিজ ও হাসান মিলে সেটা হতে দেননি। দারুণ বোলিং বরং বাংলাদেশকে জয় উপহার দিয়েছেন দুই পেসার।
নিজের কোটার ১০ ওভার বোলিং করে ৪৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ। দলের জয়ে ভূমিকা রেখে ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি। সমান ৪৪ রান খরচায় হাসান মাহমুদ নিয়েছেন দুই উইকেট।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে অভিষেক রাঙাতে পারেননি রনি তালুকদার। দলীয় ১৮ রানের মাথায় মার্ক অ্যাডায়ারের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে থাকা লোরকান ট্রাকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৪ বলে ৪ রান।
রনির বিদায়ের পর দুর্দান্ত ফর্মে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে জুটি গড়েন তামিম ইকবাল। এই দুইজনের ব্যাটে ভালো এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। তবে ফের ছন্দপতন। দলীয় ৬৭ রানের মাথায় ইয়ংয়ের করা বলে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত। যা লুফে নিতে ভুল করেননি আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি। ৩২ বলে ৩৫ রান করে সাজঘরে ফেরেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।
শান্তর বিদায়ের পর লিটন দাসকে নিয়ে দেখেশুনে ব্যাটিং করে বড় জুটি গড়ার ইঙ্গিত দেন তামিম। তবে সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি লিটন। ম্যাকব্রাইনের শর্ট ডেলিভারিতে অ্যাডায়ারের মাথার ওপর দিয়ে বল বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেননি লিটন। দলীয় ১৩৭ রানে ক্যাচ তুলে ফেরেন ৩৯ বলে ৩৫ রানের ইনিংস খেলে।
এরপর গত ম্যাচে দারুণ খেলা তরুণ ক্রিকেটার তাওহিদ হৃদয় এই ম্যাচেও ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। তবে পারেননি ধৈর্য্য ধরে রাখতে। দলীয় ১৫৯ রানে জর্জ ডকরেলের কিছুটা নিচু হয়ে যাওয়া বল বুঝতে পারেননি হৃদয়। বোল্ড আউট হয়ে ১৬ বলে ১৩ রান করে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
এরপর ফিফটি তুলে নেন অধিনায়ক তামিম। অফফর্মে থাকা তামিম সেঞ্চুরির আশা দেখালেও তা পূরণ করতে পারেননি। দলীয় ১৮৬ রানে ডকরেলের করা বলে তুলে মারতে গিয়ে ইয়ংয়ের হাতে ধরা পড়েন তামিম। আউটের আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৮২ বলে ৬৯ রান।
তামিমের বিদায়ের পর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম। জাতীয় দলের এই দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটারের ব্যাটিংয়ে চাপে পড়ে আয়ারল্যান্ড। কোনোভাবেই তাদের উইকেট নিতে পারছিল না আইরিশ বোলাররা। শেষমেষ দলীয় ২৬১ রানে ম্যাকব্রাইনের করা বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ৫৪ বলে ৪৫ রান করে আউট হন মুশফিক।
মুশফিকের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আরেক ব্যাটার মিরাজও। দলীয় ২৬৫ রানে ৩৯ বলে ৩৭ রান করে মার্ক অ্যাডায়ারের বলে ক্রেইজ ইয়ংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মিরাজ। এরপর শেষদিকের ব্যাটারদের কল্যাণে ১০ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ২৭৪ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন অ্যাডায়ার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৮.৫ ওভারে ২৭৪ (তামিম ৬৯, রনি ৪, শান্ত ৩৫, লিটন ৩৫, হৃদয় ১৩, মুশফিক ৪৫, মিরাজ ৩৭, মৃত্যুঞ্জয় ৮, হাসান ১, মুস্তাফিজ ০, ইবাদত ১*; লিটল ৯-০-৬৫-০, অ্যাডায়ার ৮.৫-০-৪০-৪, ইয়াং ১০-০-৫৩-১, ক্যাম্পার ৫-০-৩৭-০, ম্যাকব্রাইন ৯-০-৩৯-২, ডকরেল ৭-০-৩১-২)
আয়ারল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৬৯/৯ (দোহানি ৪, স্টার্লিং ৬০, বালবার্নি ৫৩, টেক্টর ৪৫, টাকার ৫০, ক্যাম্পার ১, ডকরেল ৩, ম্যাকব্রাইন ৪, অ্যাডায়ার ২০, ইয়াং ৩*, লিটল ১*; হাসান ৯-০-৪৪-২, মুস্তাফিজ ১০-১-৪৪-৪, ইবাদত ১০-১-৫৩-১, মৃত্যুঞ্জয় ৮-০-৬৪-০, মিরাজ ১০-১-৩৮-১, শান্ত ৩-০-১০-১)
ফল: ৫ রানে জয়ী বাংলাদেশ।
সিরিজ: ২-০তে জয়ী বাংলাদেশ।