শুরু হচ্ছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’
শেষ হচ্ছে অপেক্ষার পালা। শুক্রবার জাপানের টোকিওতে পর্দা উঠতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ; ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকের। আসরের নামকরণ হয়েছে ‘টোকিও অলিম্পিক-২০২০’। করোনায় এক বছর পিছিয়ে যাওয়া টোকিও অলিম্পিকের পর্দা উঠছে শুক্রবার। এ পর্দা নামবে ৮ আগস্ট।
২০৬টি দেশের প্রায় সাড়ে ১১ হাজার অ্যাথলেট অংশ নিচ্ছে এবারের অলিম্পিকে।
গত ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে টোকিও অলিম্পিকের ১২১ দিনের টর্চ রিলে বা মশাল দৌড়। এটি শুক্রবার ফুকুশিমায় শেষ হবে। মশাল দৌড়ে ১০ হাজার দৌড়বিদ অংশ নিচ্ছে৷
করোনার কারণে কোনো দর্শক ছাড়াই হয় টর্চ রিলের মূল অনুষ্ঠান। ফুকুশিমার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু হয় এই রিলে। ২০১১ সালে ভূমিকম্প, সুনামিতে ফুকুশিমা পারমাণবিক চুল্লির বিপর্যয়ে ১৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷
জাপানের ক্রীড়াবিদ আজুসা ইওয়াশিমিজু প্রথম মশাল হাতে নিয়ে দৌড়ান। এই অনুষ্ঠানে কোনো দর্শক ছিল না। পুরো অনুষ্ঠানটি স্ট্রিমিং করে লাইভ দেখানো হয়েছে৷
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দর্শক ছাড়াই অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের অলিম্পিক। অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত দর্শকদের কোনো সুখবর দিতে পারেনি টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটি। করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় দর্শকদের ছাড়াই অলিম্পিক আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাপান।
শুধু টেলিভিশন দর্শকদের মধ্যেই এবারের অলিম্পিক সীমাবদ্ধ থাকল। সম্প্রতি ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় সেখানকার করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক কমিটি।
তবে নির্দিষ্ট কিছু ভিআইপি ও অলিম্পিক অফিসিয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন বলে জাপানিজ গণমাধ্যম সূত্র নিশ্চিত করেছে। যদিও অতিথিদের সংখ্যাটি একেবারেই কমিয়ে আনা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) প্রতিনিধি, বিদেশি ডেলিগেট, পৃষ্ঠপোষক ও গেমস সংশ্লিষ্ট আরও কিছু ব্যক্তি শুক্রবার টোকিওর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন।
মহামারির কথা চিন্তা করে অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন না অনেক নামিদামি তারকা।
এবারের অলিম্পিক একটু আলাদাই বটে। তাই কোভিড নিয়ম না মানলে শুধু এবারের গেমস ভিলেজ থেকেই নয়, ভবিষ্যতের অলিম্পিকেও জায়গা হবে না বলে অ্যাথলেটদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছে টোকিও অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ।
টোকিও অলিম্পিক শুরু হওয়ার পাঁচ সপ্তাহ আগে অ্যাথলেটের জন্য নিয়মের তালিকা করে ৭০ পাতার একটি ‘রুল বুক’ প্রকাশ করেছে অলিম্পিক কমিটি। সেই বইতে সব নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে।
তবু ঝুঁকিতে টোকিও অলিম্পিক। ক্রমেই বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা। এবার অলিম্পিক ভিলেজেই একের পর এক অ্যাথলেট ও অফিসিয়ালদের শরীরে ধরা পড়ছে করোনাভাইরাস।
‘নতুন স্বপ্নে অলিম্পিক যাত্রা’
এদিকে ‘নতুন স্বপ্নে অলিম্পিক যাত্রা’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবার টোকিও অলিম্পিকে গেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা খুলনার ছেলে আরচার রোমান সানাকে ঘিরেই এমন স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। এমনটা জানিয়েছেন টোকিও অলিম্পিক গেমস বাংলাদেশ দলের ‘সেফ দ্য মিশন’ এবং বিওএর সহসভাপতি শেখ বশির আহমেদ মামুন।
দেশ ছাড়ার আগে বিওএর সহসভাপতি বশির আহমেদ মামুন আশাবাদী কণ্ঠে বলেন, ‘রোমান সানা সরাসরি কোয়ালিফাই করায় আমরা তাঁকে নিয়ে গর্বিত। রোমান এক্সেপশনাল গিফটেড খেলোয়াড়। আমরা আশাবাদী ভালো একটা রেজাল্ট করতে পারবে। এবার ভালো একটা সম্ভাবনা আছে। আশা করি, এমন কিছু একটা করবে, যাতে আমরা গর্ববোধ করতে পারি।’
রোমান ছাড়াও আরেক আরচার দিয়া সিদ্দিকী গেছেন টোকিওতে। শ্যুটিংয়ে আব্দুল্লাহ হেল বাকী, অ্যাথলেটিকসে জহির রায়হান, সাঁতারে আরিফুল ইসলাম ও জুনায়না আহমেদ তাদের সঙ্গী। এবার সাঁতারু আরিফুল ইসলামের হাতে থাকবে বাংলাদেশের পতাকা।
সব মিলিয়ে নিজেদের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়ে বিওএর সহসভাপতি বলেন, ‘আমাদের সবারই লক্ষ্য ভালো করা। আমরা এর আগে শ্যুটিংয়ে ভালো করেছি। বাকী আন্তর্জাতিক মানের শ্যুটার। তাঁর যে স্কোর, সে ভালো করতে পারে। দিয়াসহ অন্যরা নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে আশা করছি ইতিবাচক ফল হবে।’
বর্তমানে জরুরি অবস্থা চলছে জাপানে। পুরো গেমসই জরুরি অবস্থার মধ্যে পরিচালিত হবে। ১২ জুলাই থেকে শুরু হওয়া জরুরি অবস্থা চলবে ২২ আগস্ট পর্যন্ত। অলিম্পিক গেমস ২৩ জুলাই শুরু হয়ে ৮ আগস্ট শেষ হচ্ছে। এরপর শুরু হবে প্যারালিম্পিক গেমস।