শেন ওয়ার্ন-ম্যারাডোনা, যেন মিলেমিশে একাকার
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যত স্পিনার এসেছেন, এঁদের মধ্যে সর্বকালের অন্যতম সেরা শেন কিথ ওয়ার্ন। খেলা ও জীবনযাপনে একটি অনবদ্য চরিত্র। কখনো বিতর্কিত হয়েছেন, আবার কখনো প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তাঁকে ক্রিকেটের দিয়েগো ম্যারাডোনা বললে ভুল বলা হবে না। দুজনের চরিত্রের সঙ্গে অনকটাই মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
মাদক, নারী কেলেঙ্কারি—ক্রিকেটের পাশাপাশি বিতর্ককে সমান্তরালে রেখেছেন শেন ওয়ার্ন। তবে ক্রিকেটের মনযোগ নষ্ট হতে দেয়নি তিনি। কত বড় ক্রিকেটীয় প্রতিভা ছিলেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন বারবার।
ম্যারাডোনার সঙ্গে যা দারুণ মিল। মাদক সেবন আর্জেন্টাইন তারকার জীবনের অঙ্গ ছিল। নারী সঙ্গ বদলেছেন। একাধিক রোগ আগেই ছিল। তারপর আকস্মিক মৃত্যু। শেন ওয়ার্নের রোগ সম্পর্কে জানা না গেলেও তিনি মনের দিক থেকে ভালো ছিলেন না, সেটা অনেকবার জানা গেছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, তারপর আকস্মিক মৃত্যু। তাঁরা দুজনেই মাঠের বাইরে যতটাই খারাপ ছিলেন, মাঠে ততটাই দুর্দান্ত ছিলেন।
ম্যারাডোনা পায়ে বল পেলেই চমক দেখাতেন, শেন ওয়ার্ন হাতে বল পেলেই জ্বলে উঠতেন। তাঁরা খেলার মাঠে মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন। তাই তো ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর সারা বিশ্ব শোকে মুহ্যমান হয়ে গিয়েছিল। ওয়ার্নের মৃত্যুর পরও অনেকেই চোখের জল ফেলেছেন।
শেন ওয়ার্ন শুরু করেছিলেন ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট দিয়ে। ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে জিম্বাবুয়ে সফরে অস্ট্রেলিয়া ‘বি’ দলের হয়ে খেলেন ওয়ার্ন। সেখানে এক ইনিংসে সাত উইকেট নিয়েছিলেন। এরপর দেশে ফিরলে ‘এ’ দলে নেওয়া হয়। সে সময় অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের বিপক্ষে খেলেন ওয়ার্ন। এরপর ভারতের বিরুদ্ধে জাতীয় দলে ডাক পড়ে শেন ওয়ার্নের। দেশের জার্সিতে প্রথমবার টেস্ট খেলতে নেমে শুরুটা মনে রাখার মতো হয়নি ওয়ার্নের। সিডনিতে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে মাত্র এক উইকেট পান। আউট করেছিলেন রবি শাস্ত্রীকে। চতুর্থ টেস্টে ৭৮ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি। তাই পঞ্চম টেস্টে বাদ পড়েন। পরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কলম্বোতে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো রান না দিয়ে তিন উইকেট তুলে নেন, অস্ট্রেলিয়া ১৬ রানের দারুণ জয় পায়। পরের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে নির্বাচকরা দ্বিতীয় টেস্টে দলে ফিরে শেন ওয়ার্ন গোটা বিশ্বকে চমকে দেন। মেলবোর্নে মাত্র ৫২ রানে ৭ উইকেট নিয়ে দলকে জেতান। সেই শুরু, আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।