স্বস্তির জয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ
সমীকরণটা ছিল খুব সহজ। সিরিজের শেষ ওয়ানডে জিততে বাংলাদেশকে করতে হতো মাত্র ১৭৯ রান। কিন্তু এই সহজ সমীকরণ মেলাতেই বেশ কঠিন পরীক্ষা দিতে হলো বাংলাদেশকে। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন হয়নি। গায়নায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেই মাঠ ছেড়েছে তামিম ইকবালের দল।
আজ শনিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে সিরিজের প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও জিতেছিল বাংলাদেশ। টানা তিন জয়ে ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতল লাল-সবুজের দল।
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪৮.৪ ওভারে ১০ উইকেটে ১৭৮ রান করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বল হাতে মাত্র ২৮ রান দিয়ে একাই ৫ উইকেট নিয়ে দুই বছর পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ফেরাটা রাঙিয়েছেন তাইজুল ইসলাম।
জবাব দিতে নেমে ৯ বল হাতে রেখে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেছেন লিটন দাস।
এদিন টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়ানডে একাদশে ফেরা তাইজুল নিজের প্রথম দুই ওভারেই নাড়িয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারে তাইজুলকে আক্রমণে আনেন তামিম। বল হাতে নিজের প্রথম ওভারে এসেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন বাঁহাতি এই স্পিনার। মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিংয়ে উঠে আসা ব্র্যান্ডন কিংকে(৮) বোল্ড করে নিজের প্রথম শিকার তুলে নেন তিনি।
এক ওভার বাদে এসে তুলে নেন আরেকটি উইকেট। বিদায় করেন ক্যারিবীয়দের বড় ব্যাটার শাই হোপকে। তাইজুলের স্লোয়ার ডেলিভারি কাভারে খেলতে চেয়েছিলেন হোপ। কিন্তু টার্নের কাছে পরাস্ত হন। তাছাড়া হোপের পা দাগ থেকে বেরিয়ে যায়, ওই মুহূর্তে স্টাম্প ভেঙে দেন উইকেটকিপার সোহান।
তাইজুলের জোড়া আঘাতের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তৃতীয় ধাক্কা দেন মুস্তাফিজ। শ্যামার ব্রুসকে বিদায় করেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের অফ-মিডল স্ট্যাম্পের মাঝে যাওয়া বল ব্রুকসের ব্যাট মিস করে লাগে প্যাডে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নেন ব্রুকস। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।
১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন কার্টি ও নিকোলাস পুরান। ২৭তম ওভারে জমে ওঠা এই জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। বাঁহাতি স্পিনারের বলে তামিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন কার্টি। ৬৬ বলে ৩৩ রানে ভাঙে তাঁর প্রতিরোধ।
দ্রুত উইকেট হারানোর পাশাপাশি রানের গতিও কমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। মন্থর উইকেটে দলকে লম্বা সময় টানেন নিকোলাস পুরান। দলের বিপর্যয়ে হাল ধরে তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। তাঁর ইনিংসে ভর করেই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ১৮৯ রানের লক্ষ্য দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১০৯ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন অধিনায়ক পুরান। তাঁর সঙ্গে ১৮ রান করেন রভম্যান পাওয়েল।
রান তাড়ায় নেমে বেশ সাবধানী শুরু করেও ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। শুরুতেই বিদায় নেন নাজুমল হোসেন শান্ত। এরপর লিটনের সঙ্গে কিছুক্ষণ লড়াই করেন তামিম ইকবাল। কিন্তু থিতু হওয়ার পর তিনিও ফেরেন সাজঘরে। ৩৪ রানে বিদায় নেন তামিম।
এরপর উইকেটে থেকে আশা জাগান লিটন দাস। কিন্তু ব্যাক্তিগত হাফসেঞ্চুরি স্পর্শ করার পর ভাঙে তাঁর প্রতিরোধ। লিটন ফেরার পর এক পর্যায়ে হারের শঙ্কায় পড়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো অঘটন হয়নি। নুরুল হাসান সোহানের (৩২) ব্যাটে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৪৮.৪ ওভারে ১৭৮ (হোপ ২, কিং ৯, ব্রুকস ৪, কার্টি ৩৩, পুরান ৭৩, পাওয়েল ১৮, পল ৮, আকিল ১, শেফার্ড ১৯, মোটি ২, জোসেফ ৭*; নাসুম ৯.৪-১-৩৯-২, মুস্তাফিজ ৯-০-২৪-২, তাইজুল ১০-২-২৮-৫, মোসাদ্দেক ১০-১-২৩-১, মিরাজ ৮-০-৬১-০, আফিফ ২-১-২-০)।
বাংলাদেশ: ৪৮.৩ ওভারে ১৭৯/৬ (তামিম ৩৪, শান্ত ১, লিটন ৫০, আফিফ ০, সৈকত ১৪, সোহান ৩২, মাহমুদউল্লাহ ২৬, মিরাজ ১৬; আকিল ১০-৩-৪৫-০, মোটি ১০-২-২৩-৪, পুরান ৬-০-৩৫-১, জোসেফ ১০-০-২৫-১, রোমারিও ১০-০-৩৮-০ )।
ফল : ৪ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
সিরিজ : ৩-০ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ।